ওষুধ কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক ওয়ালারা কোথায়?

শাহ আরিফুল আবেদ
| আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫১ | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩১
শাহ আরিফুল আবেদ

জাতির এই আপৎকালীন মুহূর্তে চিকিৎসা সেবাদানকারীরা নৈতিকতা অনুসরণ করলে আজ বিনা চিকিৎসায় ঢাবি শিক্ষার্থী ও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হতো না। করোনার ভয়ে অন্যান্য রোগের রোগীদের ত্রাহি অবস্থা। মারা যাওয়া ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থীটি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, করোনায় আক্রান্ত না হয়েও করোনার কারণে তাকে মারা যেতে হবে। হয়েছেও তাই।

ভাবা যায়, পিপিইর অজুহাতে হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা রোগী ভর্তি নেন না, চিকিৎসা দেন না! আসলে এ সময়ে চিকিৎসা দেওয়ায় আন্তরিকতার ঘাটতি আছে কিছু চিকিৎসকের। তা না হলে এত দিনে তারা নিজেদের সুরক্ষা সামগ্রী নিজ উদ্যোগে জোগাড় করে নিতেন। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন না তারা। করোনার ভয়ে যেকোনো রোগী দেখলেই লুকাতেন না।

আবার বাঙালিরও স্বভাব খারাপ আছে। রোগের হিস্ট্রি গোপন করে চিকিৎসা নিতে চায় কেউ কেউ। উন্নত বিশ্বে এই সুযোগ নেই। স্বাভাবিকভাবে ডাক্তার জীবনহানির ভয় পাবেনই। করোনা আক্রান্ত কিংবা বিদেশ প্রত্যাগত কারো সংস্পর্শে আসা কেউ যদি তথ্য গোপন করে ডাক্তারের সেবা নেয় এবং পরে সেই প্রেসক্রাইব করা রোগীর যদি করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়, তখন সেই ডাক্তারকে তার পরিবারসহ আইসোলেশনে যেতে হবে। এমনটা হতে থাকলে কোনো চিকিৎসককে আর তখন সেবা দেয়ার জন্য পাওয়া যাবে না। তথ্য গোপন করা রোগীরা সব চিকিৎসককে কোয়ারান্টিনে পাঠালে অনাগত রোগীদের সেবা দেবে কে?

ডাক্তারের ভয়কে অমূলক বলতে চাই না। তবে ভয়কে জয় করতে হবে মানবসেবার মহান ব্রত মনে রেখে। জানি, সব পেশাতেই ভালো-মন্দ মানুষ আছে। তবে সিংহভাগই ভালো। কতিপয় ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের জন্য যেকোনো পেশা কলুষিত হয়।

আচ্ছা, এই সময়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো কোথায়? হাসপাতালে হাসপাতালে আউটডোরে দল বেঁধে যেসব ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা ভিড় জমাত, তারা আজ কোথায়? ডাক্তারদের এই দুর্দিনে তারা মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন না কেন? কমিশনদাতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এখন ডাক্তারদের জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে পাশে নেই কেন?

আসলে, যেকোনো সম্পর্ক, যদি হয় ব্যবসায়িক-অর্থনৈতিক অথবা অনৈতিক, বিপদকাল বা সংকটকালে এর প্রকৃত পরিচয় বেরিয়ে আসে। করোনাভাইরাস এমন হাজারো ভঙ্গুর সম্পর্কের সত্যতা সামনে নিয়ে এসেছে আজ। অস্বীকার করার জো নেই, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বাণিজ্য ও অকারণে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ কোম্পানিতুষ্ট ওষুধের নাম লিখে কতিপয় ডাক্তার দুর্নাম কামিয়েছেন। তাই, এখন পিপিইর জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা বা অপ্রতুলতার অজুহাতে চিকিৎসা সেবা থেকে বিরত থাকা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।

যাই হোক, আজকের এই মানবজাতির দুঃসময়ে চিকিৎসকরাই পরিবার-পরিজনকে দূরে রেখে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রাখছেন। সেই মানবিক ডাক্তারদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। তাদের জন্য রইল মন থেকে দোয়া। আমরা স্যার উইলিয়াম ওসলারের কথা বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, “The good physician treats the disease; the great physician treats the patient who has the disease.” As we say, we respect you dear Doctor. Nation claims your service. We salute your sacrifice. No more excuse, humanity are struggling now. All of you are our national hero.

ডাক্তার, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংকার, জরুরি পরিষেবায় ন্যস্ত কর্মীগণ, আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে। কবি টি এস এলিয়ট তাঁর ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কাব্যগ্রন্থে বলেছিলেন, April is the cruelest month. বাংলাদেশের জন্য এপ্রিল মাস যেন ভয়ংকর, নৃশংস না হয়। সামনের দিনগুলো অর্থাৎ এপ্রিল মাসজুড়ে গৃহবন্দি থাকা গবেষকদের মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা ঘরে থাকি।

লেখক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :