হাজারো মানুষের জানাজা পড়ালেও তার জানাজায় ছয় জন
জীবনের অধিকাংশ সময় ধরে যিনি হাজার হাজার মানুষ নিয়ে জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন। আজ তার নামাজে জানাজায় মাত্র ছয় জন মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আত্মীয়স্বজনও মৃত ব্যক্তির কাছে আসতে পারছেন না। দাফন কাফনের ব্যবস্থাও করতে পারছে নিজ সন্তানেরা। এ যেন এক করুণ পরিণতি।
করোনা সন্দেহে বা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন করা হচ্ছে খিলগাঁও কবরস্থানে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে যেখানে নিজ স্বজনেরা দূরে থাকছেন। সেখানে তাদের দাফনের কাজ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আল মারকাজুল ইসলামী’র একদল স্বচ্ছাসেবী। এছাড়াও দাতব্য হাসপাতাল, মাদ্রাসা, মসজিদ পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
হাজার হাজার মানুষ নিয়ে যিনি অন্যের জানাজা পড়িয়েছেন। আজ তার জানাজায় ছয় জন সেচ্ছাসেবী আর তিন জন গোরস্তানের লোক। বড় ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে যোগ দেন জানাজা নামাজে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে বাবার মরদেহ এসেছে অ্যাম্বুলেন্সে। আর ছেলে কোনো রকমে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে ছুটে এসেছেন খিলগাঁয়ের তালতলা কবরস্থানে।
দাফনের সময় সাধারণত যে চিত্র দেখা যায় এখানে তার ব্যতিক্রম চিত্র। করোনা পরিস্থিতি পালটে দিয়েছে পুরো চিত্র। যদিও সত্তোরোর্ধ এই ব্যক্তি আদোও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না তখনও জানা যায় নি।
কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে মৃত ব্যক্তির বড় ছেলে দাফনের শেষে বলেন, ‘মনের ভেতর শুধু একটাই কষ্ট। আব্বা যখন মানুষের জানাজা পড়াতেন তখন অনেক লোকের উপস্থিতি থাকত। আজকে আমার বাবা জানাজায় পাঁচ থেকে ছয় জন। আমার এই বিষয়টা সারা জীবন মনে থাকবে।’
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে –করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন তথ্য এখনো পাওয়া যায় নি। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মরদেহ সৎকার করা যাবে। তবে মরদেহ স্পর্শ করাকে নিরুৎসাহ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে যেখানে স্বজনরা কাছেই ভিড়ছেন না। সেখানে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক সৎকারের দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন ‘আল মারকাজুল ইসলামী’র কর্মীরা।
শুধু মৃত ব্যক্তিদের দাফনই নয় বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘আল মারকাজুল ইসলামী’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সেই ধরণের আর্থিক ফান্ড নেই। থাকলে আমরা আমরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে পারতাম। সুতরাং আমরা এই কাজটি করে যাচ্ছি। যেকাজে কেউ এগিয়ে আসছে না। আমাদের এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ৩২ বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছি। সামনে আমরা আরও অনেক কাজ করব সে ইচ্ছা আছে।
(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এসকেএস/এজেড)