করোনায় রোগ প্রতিরোধী ডায়েট চার্ট

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৪৯ | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩৩

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সাথে মৃত্যুর হার ক্রমেই বেড়েই চলেছে। লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি। করোনা প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু এর কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি। তাই ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে জোর দিতে হবে শরীরের ওপরেই। তবেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক নিয়মে খাদ্যাভ্যাস। কারণ এর মাধ্যমেই আমরা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারি।

শরীরের রোগ প্রতিরোধে ৭০–৭৫ শতাংশ আসে আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকে। আর বাকিটা আসে নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক শ্রমের মাধ্যমে।

পুষ্টিবিদরা বলেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্যে কার্যকর ভূমিকা নেয় ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আর দুটি অত্যন্ত দরকারি খনিজ জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। এবং অবশ্যই উচ্চমানের প্রোটিন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ বা ফাইবার অপ্রয়োজনীয়। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবার খাওয়া একান্ত প্রয়োজন।

খুব বেশি তেল ঝাল মশলা দিয়ে রান্না করা ঠিক নয়। এর ফলে একদিকে সবজির গুণ চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, অন্য দিকে হজম হতে অসুবিধা হয়।

প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া, শরীরচর্চা, মন মেজাজের ওপর নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাই সঠিক খাবার নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেস থেকে মুক্তির জন্য মেডিটেশন করলে ভাল হয়।

ভিটামিনে ভরপুর ফল প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল বেশি বেশি খাওয়া দরকার। কমলালেবু, পাতিলেবু, আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আঙুর, পেয়ারা, আপেল, পেঁপে, শসা, কলা, তরমুজ যে সমস্ত ফল পাওয়া যায় কিনে রাখুন। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিনের বেশি বাজারে না যাওয়াই ভাল। কিনে রেখে দিতে পারেন। রোজ নিয়ম করে অন্তত দু’তিন রকম ফল খাওয়া উচিত। রোজ ফল খেতে ভাল না লাগলে দই মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেলে ভাল লাগবে।

বেগুন, কুমড়া, ঢেড়স, টমেটো খেতে ভুলবেন না। লকডাউনের সময় মনের মতো সবজি পাওয়া মুশকিল। তবে বাজারে বেগুন, কুমড়া, পটল, ঢেড়স, গাজর, টমেটো পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের মতো কিনে রাখা যায়। অনেকেই ভাবেন বেগুনের কোনও উপকারিতা নেই। কিন্তু জেনে রাখুন, এই সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার আছে।

মাঝে মাঝে কলমি শাক, লাল শাক, লাউ বা কুমড়ো শাক খাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টমোটোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। চেষ্টা করুন প্রতিটি রান্নায় টমোটা দেওয়ার। তবে অনেকে কাঁচা টমেটো খান। এই সময়ে কাঁচা স্যালাদ না খাওয়াই ভাল।

বাজার থেকে কেনা শাক-সবজি, ফলমূল ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে শুকিয়ে তবেই ফ্রিজে রাখতে হবে। অনেকেই সবজি খাওয়া পছন্দ করেন না। কিন্তু গৃহবন্দি অবস্থায় কেবল আলু আর ভাত রুটি খেলে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ডাল ও সবজি খাওয়া দরকার।

লকডাউনের সময় খিচুড়ি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার। দু’তিন রকম ডাল সহযোগে খিচুড়ি প্রোটিন ও ভিটামিনে ভরপুর। তবে সপ্তাহে এক দু’দিনের বেশি খিচুড়ি না খাওয়াই ভাল।

হলুদ, কালোজিরা, আদা, রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে হলুদ ছাড়া রান্না হয় না বললেই চলে। কারক্যুমিন শব্দটা খুব চেনা না হলেও হলুদের প্রধান উপাদান হল এই কারক্যুমিন। এটি একটি অত্যন্ত উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে নিয়মিত হলুদ খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ আর এক গ্লাস গরম পানিতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।

করোনাভাইরাস ছাড়াও যে কোনও অসুখকে দূরে রাখার অন্যতম উপায় এই ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। রসুনে থাকা অ্যালিসিন অসুখ বিসুখকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। রসুনে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী।

এছাড়া রান্নায় ব্যবহৃত আদায় থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, আয়রণ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম হল ইমিউনিটি বুস্টার। কালোজিরাতে থাকে নানান মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। চেষ্টা করুন রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করার। রান্নায় আদা, রসুন, হলুদ, কালোজিরা ব্যবহার করা দরকার। এছাড়া নিয়ম করেও কাঁচা হলুদ ও রসুন খাওয়া উচিত।

প্রতিদিন সকালে উঠে খালিপেটে এক গ্লাস গরম পানিতে একটা পাতিলেবুর রস, এক টুকরো আদা ও রসুন পেষা এবং এক টুকরো হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন। আধ চামচ হলুদ বাটা বা গুঁড়া ও ১/৪ চামচ কালোজিরা গুঁড়া লেবুর পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এটি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। করোনাভাইরাসকে জব্দ করতে এটি সাহায্য করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন খাবারে দই, ঘোল রাখতে পারেন। ল্যাকটোব্যাসিলাস গোত্রের ব্যাকটেরিয়া আমাদের রোগ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, ল্যাকটোকক্কাস ল্যাকটিস ক্রিমোরিস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থাকে দইয়ে। তাই প্রতিদিন দই খাওয়া উচিত। দইতে থাকা ভিটামিন সি, বি ১২, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন ‘বি ১২’ রক্তকোষের গঠনে সাহায্য করে। দই ভিটামিন ‘এ’ তৈরিতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে, দিনে ২০০ গ্রাম করে দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কোন রোগ ধারে কাছে আসতে পারবে না।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :