করোনাভাইরাস: ভেন্টিলেশন কী এবং কেন?

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১১:৫৪ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১২:০০

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
ঢাকাটাইমস

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। আবার সুস্থ হচ্ছে অনেক মানুষ। তবে করোনাভাইরাসের সব থেকে খারাপ দিক হলো এই ভাইরাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সরাসরি আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে রোগীকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না দিতে পারলে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলছেন। যেসব রোগীর সংক্রমণ খুবই মারাত্মক তাদের জীবনরক্ষায় ভেন্টিলেটর খুবই কার্যকর এক যন্ত্র। সহজভাবে বললে, রোগীর ফুসফুস যদি কাজ না করে তাহলে রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটা ভেন্টিলেটর করে দেয়। এর মাধ্যমে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এবং পুরোপুরিভাবে সেরে উঠতে রোগী হাতে কিছুটা সময় পান। 

ডাক্তারদের মতে, প্রতি ছয়জন রোগীর মধ্যে একজন গুরুতরভাবে অসুস্থ হতে পারেন, এবং তাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে রোগীকে সেবা দেয়া হয়।

সাধারণত ভেন্টিলেটর দুইভাবে কাজ করে। একটি মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন অপরটি নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে। 
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে একটি পাইপের মধ্যে টিউব যুক্ত করা থাকে, ওই পাইপটি রোগীর মুখে বা গলার কোনো অংশ দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। পরে ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে বাতাস রোগীর দেহে যেন প্রবেশ ও বের হতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়। 
অন্যদিকে, নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রোগীর মুখে অথবা নাকে একটি মাস্ক সংযুক্ত করে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন ব্যাপারটা টের পায় তখন রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে বেশি করে খুলে দেয়, যাতে রোগ প্রতিরোধকারী কণিকাগুলো আরও বেশি হারে ফুসফুসে ঢুকতে পারে। কিন্তু এর ফলে ফুসফুসের ভেতরে পানি জমে যায়। তখন রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা শুরু হয়। এবং দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। এটি চাপ দিয়ে ফুসফুসে বাতাস ঢোকায় এবং দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।

ভেন্টিলেটরে একটি হিউমিডিফায়ারও থাকে। এর কাজ হলো রোগী দেহের তাপমাত্রার সাথে মিল রেখে বাতাস এবং জলীয় বাষ্প ঢোকানো। ভেন্টিলেটর ব্যবহারের সময় রোগীকে এমন ওষুধ দেয়া হয় যাতে তার শ্বাসযন্ত্রের মাংসপেশিতে কোন উত্তেজনা না থাকে। রোগীর শ্বাসযন্ত্র শিথিল থাকলে ভেন্টিলেটরের কাজ করতে সুবিধা হয়।

যেসব রোগী দেহে সংক্রমণ কম, তাদের ভেন্টিলেটরে শুধু ফেস মাস্ক কিংবা নাকের মাস্ক দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে বাতাস এবং অক্সিজেনের মিশ্রণ চাপ দিয়ে রোগীর ফুসফুসে ঢোকানো হয়।

করনোভাইরাস রোগীদের সেবায় এক ধরনের হুডের ব্যবহারও এখন জনপ্রিয় হচ্ছে - যেখানে ভালভের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হয়। এগুলোকে বলা হয় ‘নন-ইনভেসিভ’ ভেন্টিলেশন। এতে রোগীর দেহে কোন টিউব ঢোকাতে হয় না।

তবে হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিউ)-তে যেসব রোগীকে নেয়া হয় তাদের জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। এটি দ্রুত দেহের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া যায়।

তবে ভেন্টিলেটর ব্যবহারেও রোগীর শরীরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের ইনটেনসিভ কেয়ার সোসাইটির ডাক্তারদের মতে, সঠিকভাবে স্থাপন না করলে ভেন্টিলেটরের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতায় ভুগতে পারে রোগী। কারিগরি দিক থেকে এটার ব্যবহার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তবে কখনও কখনও রোগীর শরীরে অক্সিজেন প্রবেশ করানোর এটাই একমাত্র মাধ্যম।

হাসপাতালগুলোতে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন সাধারণত ইলেক্টিভ ভেন্টিলেশন নামেও পরিচিত। এটি আসলে ভেন্টিলেটর মেশিনের সঙ্গে যুক্ত করে শ্বাসনালীতে একটি টিউব পরাতে হয়। প্রক্রিয়াটি ডাক্তারের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। ইলেক্টিভ ভেন্টিলেশনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডাক্তার-নার্সদের ভুলভ্রান্তি কম হয়। তাড়াহুড়া হয় না, শ্বাসনালীতে শ্বাসের টিউব পরানোর সময় রোগীকে ব্যথা উপশম আর ঘুমের ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া যায়, ভালোভাবে মুখগহ্বরের ভেতর থেকে কফ, থুতু, লালা, বমি, ইত্যাদি পরিষ্কার করা যায়। রোগীর হৃদপিন্ডের কাজকর্ম আর মস্তিষ্কের ওপর চাপ কম হয়। অর্থাৎ সোজা কথা, জটিলতা কম হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর আসলে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তাদের ভেন্টিলেটরও লাগে না। এই ধরনের রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করানো যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রায় ৮০% করোনাভাইরাস রোগী হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/আরজেড/এজেড)