করোনায় ‍মৃতদের দাফনে কাউন্সিলর, প্রয়োজন গ্লাভস

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৬:১৪ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৬:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন একবৃদ্ধ। বয়স সত্তরের কাছাকাছি কিংবা বেশিই হবে। তিনি পাঁচদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পরিবারের আপনজনা ভয়ে কাছে যাননি। বৃদ্ধের শরীরের একটি অংশ মাটি, বাকিটা খাটে পড়ে ছিল। মরদেহের গোসল, জানাজা, দাফন- কে করবে? পরিবারের কেউ সাহস করেনি। বরং বাসা থেকে সরে গিয়েছিলেন। তবে একটা ফোন করেছিল মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মুঠোফোনে।

তারপর যা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সবাই জেনেছেন। মাকসুদুল আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক। এই জনপ্রতিনিধি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, করোনা আক্রান্ত হয়ে বা এই রোগের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে কেউ মারা গেলে তিনি তার শেষযাত্রার সব আয়োজন করবেন। তবে তা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে।

ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকায়। বুধবার ফোন পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সহকর্মীদের নিয়ে ওই বৃদ্ধের মরদেহ আনতে যান তিনি। ওই ঘটনার একটি ভিডিও তিনি পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে দেখা যায়, পাঁচজনের একটি দল, সবার পরনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পোশাক। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক, মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা সাদা পিপিইতে। তারা মরদেহটি খাট থেকে নামিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) থেকে বরাদ্দ দেওয়া ব্যাগে ভরছেন। তারপর সেটি সবাই মিলে ধরে নাসিকের একটি পিকআপ ভ্যানে তোলা হয়। পরে সেটি নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে। সেখানে গোসল, জানাজা শেষে দাফন করা হয় ওই বৃদ্ধাকে।

কাউন্সিলর খোরশেদের এই স্বেচ্ছাসেবী দলে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী আরিফুজ্জামান, হাফেজ মুফতি আকরাম, জুনায়েদ এবং খোরশেদের সচিব আহম্মদ আলী শাবা।  

করোনা উপসর্গ নিযে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের মরদেহের শেষযাত্রা নিশ্চিতের সব আয়োজন ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করতে হচ্ছে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস সব নিজেই জোগাড় করছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এসব উপকরণ আছে খুবই কম। তাই সামর্থবানদের কাছে পিপিই ও সার্জিক্যাল গ্লাভস চেয়ে মানবিক আবেদন করেছেন তিনি। আগ্রহীদের 01717178242- নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।  

মাকসুদুল আলম খন্দকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার গোসল-জানাজা-দাফনের দায়িত্ব আমি নিবো। সেই অনুযায়ী গতকাল একজন বৃদ্ধকে দাফন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই কাজে ব্যবহৃত পিপিইসহ সব ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহারের পর পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আমরা সেগুলো পুড়িয়ে ফেলেছি। এখনো আমাদের হাতে যে পরিমাণ পিপিই, সার্জিক্যাল গ্লাভস আছে তা যথেষ্ট নয়। আরও প্রয়োজন। কারণ প্রতিদিনই মানুষকে খাদ্যসহ নানা সহযোগিতার জন্যও আমাকে বের হতে হচ্ছে। এর মধ্যে পিপিই অনেকেই তৈরি করছেন, তাদের কাছ থেকে পাচ্ছি। কিন্তু গ্লাভসের সংকট তৈরি হয়েছে। কেউ যদি এসব সামগ্রী দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করতে চায় আমরা তা সাদরে গ্রহণ করবো।’

এ মুহূর্তে করোনা সংক্রমণে বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা। এখন পর্যন্ত ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। মারাও গেছেন তিনজন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন জেলার প্রশাসক ও সিভিল সার্জন।

(ঢাকাটাইমস/ ৯ এপ্রিল/ এইচএফ)