করোনা: একদিনে ইতালিতে দুই বাংলাদেশিসহ ৬১০ জনের প্রাণহানি

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ২৩:৪৬

কমরেড খোন্দকার, ইউরোপ ব্যুরো

করোনাভাইরাসে ইতালিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দেশটিতে করোনায় বৃহস্পতিবার দুই বাংলাদেশিসহ ৬১০ জন মারা গেছে। বুধবার রাতে রাজধানী রোমের তরবেরগাতা হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার হোসেন হিরু (৭২) ইন্তেকাল করেন। তিনি রোম শহরের  তরবেল্লামোনাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করতেন। তার দেশের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হলতা গুলিসাখালী লক্ষ্মণা এলাকায়। রোমের বরিশাল সমিতির নেতৃবন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবাহান সিকদার বলেন, আনোয়ার হোসেন হিরুর দাফনের সব খরচ রোম দূতাবাস বহন করবে। এছাড়া রোম দূতাবাস এলাকায় কেউ করোনাভাইরাসে মারা গেলে দূতাবাসে যোগাযোগ করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।

এছাড়াও মিলানের একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার মিজান (৪৫) নামে এক বাংলাদেশি  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  হয়ে মারা যান। তার দেশের বাড়ি  মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি ইতালির বেরগামো শহরে বসবাস করতেন। মিলান কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান খতিব মাওলানা জোনাইদ সোবহান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এই দুজনসহ ইতালিতে মোট সাতজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে প্রাণ হারালেন।

এদিকে ইতালিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ২৭৯ জন। এর মধ্যে ১০০ জন চিকিৎসক এবং ২৬ জন নার্স রয়েছেন।

দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক হাজার ৯৭৯ জন। চিকিৎসাধীন ৯৬ হাজার ৮৭৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৩ হাজার ৬২৬ জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।

তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২৮ হাজার ৪৭০ জন।

ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। বৃহস্পতিবার এ অঞ্চলে মারা গেছে ৩০০ জন। বুধবার এর সংখ্যা ছিল ২৩৮ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দশ হাজার ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৮০২ জন। আজ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৮৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৫৯ জন। লোম্বারদিয়া অঞ্চলে মোট এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫ হাজার ৭০৬ জন।

প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগণের মনে সাহস জোগাতে প্রায় প্রতিদিনই সান্ত্বনা দিয়ে টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছেন। জোসেপ্পে কন্তে দেশজুড়ে ‘জরুরি নয়’ এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বাড়ির বাইরে সবধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপার মার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকবে এবং গণপরিবহনও সচল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে লকডাউন রয়েছে। এ সময় আরো বাড়তে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।

এদিকে কাতার বিমানবাহিনীর পাঁচটি পরিবহন বোয়িংয়ে দুটি বিশাল ফিল্ড হাসপাতাল ইতালিতে এসে পৌঁছেছে। অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম নিয়ে কাতার থেকে উড়ে আসা প্রথম দুটি বোয়িং রাজধানী রোমের অদূরে প্রাতিকা দি মারে সামরিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে টারমার্কে তাদের অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মাইও। পাঁচশ শয্যার এই ফিল্ড হসপাতালগুলো বন্ধু রাষ্ট্র ইতালির দুঃসময়ে উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছে কাতার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মাইও আরো জানান, চীন থেকে আরো ২৫ টন চিকিৎসাসামগ্রী আসছে। তার মধ্যে ১৫৫টি ভেন্টিলেটর, ১.৫ মিলিয়ন মাক্স এবং দুই লাখ পাঁচ হাজার হাত মোজা রয়েছে। এছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় আলবেনিয়া, চীন, কিউবা  এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/এলএ)