গ্যারেজবন্দী গাড়ির সুরক্ষা

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২০, ১০:১০

আলাউদ্দিন আলিফ, ঢাকাটাইমস

লকডাউনে স্থবির বাংলাদেশ। শখের গাড়িটা গ্যারেজে পরে আছে বহুদিন। এই অবস্থা থেকে কবে পরিত্রাণ মিলবে তারও নেই কোন নিশ্চয়তা। লকডাউনে থেকে নিজেকে করোনা বা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় রাখছেন কিন্তু গ্যারেজের গাড়িটি কি মন মতো রয়েছে? নিজের প্রিয় গাড়িটি নিয়ে যারা আশঙ্কায় রয়েছেন তারা অব্যবহৃত গাড়িটির যত্নে স্বাভাবিক কিছু যত্ন নিতে পারেন। এতে গাড়িটি যেদিন বের করতে চাইবেন সেদিনই আপনাকে পরিপূর্ণ সেবা দিতে প্রস্তুত থাকবে।

গাড়ি ধুয়ে নিন

একটি গাড়ি যখন রাস্তায় চলে তখন সেই গাড়িতে প্রচুর ধুলো বালি লেগে যায়। প্রতিদিন গাড়ি বের করা হলে সেই গাড়ি পরিষ্কার করে ধোয়া মোছা করা হয়। ধুতে না পারলেও ভেজা কাপড়ে মুছে ফেললেও গাড়িটি তার সৌন্দর্য্য ফিরে পায়। অব্যবহৃত অবস্থায় পরে থাকলে গাড়িটিতে ধুলো বালির প্রলেপ পরে। অনেকদিন এই অবস্থায় থাকলে ধুলোর ছোপ ছোপ দাগ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গাড়িটিকে সময় করে ধুয়ে ফেলুন। গাড়ির চাকাগুলোও ধুতে হবে। অ্যালয়  হুইল হলে ভেজা কাপড় দিয়ে ভিতরে এবং বাইরে পরিষ্কার করতে হবে।পাইপ থাকলে গাড়ির নিচে যে ময়লা কাদা মাটি লেগে শক্ত হয়ে আছে তা পরিষ্কার করে নেয়া ভালো। নাহয় গাড়ির চেসিসে মরিচা ধরার সম্ভাবনা থাকে।

গাড়ির ছাদেও(রুফ) প্রচুর ধুলো হয়। তাই উপরের এন্টেনা এবং স্পয়লারো পরিষ্কার করুন। গাড়ির উইন্ডশিল্ডে (সামনের গ্লাস) পানি দিয়ে ধুয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে। ভিতর থেকে ভালো ভিউ পেতে গাড়ির ভিতরেও ভেজা কাপড় দিয়ে উইন্ডশিল্ডটি পরিষ্কার করে নিন। 

গাড়ির ইন্টেরিয়র পরিষ্কার করুন

গাড়ির বাহিরটা ধুয়া যেমন জরুরী, ভিতরের ইন্টেরিয়রটা পরিষ্কার করাও তেমন অত্যাবশ্যকীয়। নাহয় উপরে চকচক করলেও ভিতরে বসে স্বস্তি মিলবে না। প্রথমে গাড়ির চারটি দরজায় খুলে দিন। ভিতরে বদ্ধ হয়ে থাকা বাতাস বের হয়ে আসবে। পার্কিং এ দরজা খোলার জায়গা না থাকলে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিতে পারেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট এভাবে খুলে রাখুন। গাড়ির পাপোশে ধুলোবালি জমে থাকে। তাই পাপোশগুলো গাড়ি থেকে বের করে নিন। যদি উপরে প্লাস্টিকের পাপোশ ব্যবহার করেন তাহলে তা সাবান পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আর গাড়ির পাপোশটি ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে। সিটগুলো পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। না থাকলে ভালো করে ঝেড়ে নিন।

এবার ড্যাশবোর্ড, স্টিয়ারিং, দরজার হাতল, এসি ভেন্ট, ওয়াটার বোতল বক্স, গ্লভস বক্স থেকে শুরু করে আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র রাখার যতো খোপ আছে তা পরিষ্কার করে নিন। হাত দিয়ে পরিষ্কার করা না গেলে ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।

গাড়ির ফ্রন্ট সিটের নিচেও অনেক ধুলোবালি থাকে। ফ্লোর ক্লিনার ব্রাশ দিয়ে সেই ময়লাগুলোও পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পুরো গাড়ির ভেতর এবং ছাদ মুছে ফেলুন।

বুট স্পেস থেকে অপ্রোয়জনীয় জিনিস সড়িয়ে ফেলুন

গাড়ি  যেহেতু অনেকদিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে সেহেতু ব্যাকডালাতে রাখা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো সরিয়ে ফেলুন। যেগুলো প্রয়োজন নেই, এই সুযোগে সেগুলো চেক করে ফেলেও দিতে পারেন। পুরনো পানির বোতলে অনেকদিনের

জমানো পানি থাকলে সেগুলোও ফেলে দিন। করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে যেন আবার ডেঙ্গু মশার উৎপাত শুরু না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বুটস্পেসও ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। শখের গাড়িটিতে ধুলো বালি জমে থাকলেতো নিজেরই কষ্ট লাগার কথা। বুটস্পেসও যেহেতু গাড়ির অংশ সেহেতু এই জায়গাটুকুও থাকুক পরিচ্ছন্ন।

বনেট খুলে ইঞ্জিনের উপরে জমা ধুলোবালি পরিষ্কার করুন

গাড়িতে চড়তে অভ্যস্ত যারা তারা সাধারণভাবেই গাড়ির ভিতর এবং বাহিরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন থাকেন। কিন্তু যে ইঞ্জিনের শক্তিতে গাড়িটি চলে সেই ইঞ্জিন পরিষ্কারের কথা ক’জনের মাথায় থাকে। গাড়ির বনেটটি ( সামনের অংশে ইঞ্জিনকে ঢেকে রাখতে ব্যবহৃত হওয়া অংশ) খুলুন। সাধারণত চালক যে সাইডে বসেন, তার ডান দিকের নিচে গাড়ির বডিতে একটি লিভার থাকে। এই লিভারটি টান দিলে বনেটের মুখটি উন্মুক্ত হয়। তবে খুলে যায় না। এবার গাড়ির সামনে মাঝখানে বনেটের নিচে হাত প্রবেশ করালে একটি লক পাওয়া যাবে। সেটি ডানে সরিয়ে দিলেই বনেটটি খুলবে। বনেট খোলার পর তা দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য একটি স্ট্যান্ড রয়েছে। এবার হাওয়া দিয়ে ইঞ্জিনের উপরের ধুলো পরিষ্কার করে নিন। পানি দিয়েও পরিষ্কার করতে পারবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ব্যাটারির সংযোগে যেন পানি না লাগে। হাইব্রিড গাড়ি হলে এভাবে ইঞ্জিন না ধোয়াই উত্তম। কারণ হাইব্রিড কন্ট্রোলার ইঞ্জিনের পাশে থাকে। পানি প্রবেশ করলে এই যন্ত্রটিতে সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।

গাড়ি স্টার্ট দিন

গাড়িটি পরিষ্কারের কাজ শেষ হলে এবার গাড়িটি স্টার্ট করুন। পাঁচ মিনিট গাড়িটি চালু রেখে গাড়িকে উষ্ণ করতে পারেন। এতে ভিতরে কোন পানি জমে থাকলে তা বাস্প হয়ে যাবে। গাড়িতে যদি জ্বালানি এবং সিএনজি উভয় ব্যবহৃত হয়, তাহলে জ্বালানি তেলে গাড়িটি চালু করে কিছুক্ষণ রেখে সিএনজিতে পরিবর্তন করুন। ১-২ মিনিট চালু রেখে এবার গাড়ির ইঞ্চিন বন্ধ করুন।

গাড়ির কভার দিয়ে গাড়িটি ঢেকে দিন

গাড়িতো পরিষ্কার হলো। কিন্তু এভাবে যদি রেখে দেন তাহলেতো ধুলো জমে আবার নোংরা হবে। তাই গাড়িটি ভালো করে ধুয়ার পর গাড়িটি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। আধাঘণ্টা পর গাড়িটি কাভার দিয়ে ঢেকে দিন। ধুলো বালি থেকে সুরক্ষা পেতে আপাতত গাড়িটি ঢেকে রাখায় উত্তম।

গাড়ি বন্ধ থাকা অবস্থায় গাড়ির ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কি না এই প্রসঙ্গে জাপানিজ রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ম্যাভেন অটোস এর স্বত্ত্বাধীকারী আশফাক ইবনে আব্দুল আওয়াল বলেন, গাড়ি অব্যবহৃত অবস্থায় ১ থেকে দেড় মাস বন্ধ থাকলেও গাড়ির ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই। শুধুমাত্র ব্যাটারি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ভালো ব্যাটারির ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনাও নেই। তাছাড়া গাড়ির ব্যাটারি অকার্যকর হলে অন্য গাড়ির ব্যাটারির সাহায্যে বা হেল্পের মাধ্যমে গাড়ির ব্যাটারিকে আবার কার্যকর করা যায়। তাই গাড়ি বন্ধ থাকা নিয়ে বাড়তি চিন্তার কোন কারণ নেই।মাঝে মাঝে গাড়িটি চালু করতে হবে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস এখন জাতীয় সমস্যা। যে কয়দিন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে কয়েকদিন গাড়ি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঝে মাঝে গাড়িটি স্টার্ট দিলে গাড়ির ব্যাটারি অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে হালনাগাদ গাড়িগুলোতে উন্নত মানের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। তাই ব্যাটারির কন্ডিশন ভালো থাকলে ব্যাটারি অকেজো হবে না।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এজেড)