‘করোনাবীর’দের সম্মানে সন্ধ্যায় একযোগে করতালি

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২০, ১২:০১ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে যারা কর্মস্থলে সক্রিয় থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেইসব পেশাজীবী মানুষকে সম্মান জানানোর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সোশ্যাল ল্যাব নামে একটি সামাজিক সংগঠন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাওয়া ব্যক্তিদের উৎসাহিত করতে সারা দেশে একসঙ্গে করতালি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে তারা।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় দেশবাসীকে যার যার জানালার অথবা বারান্দায় নিরাপদস্থানে দাঁড়িয়ে একযোগে করতালি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে-‘ক্ল্যাপ ফর দ্যা হিরো ’

সোশ্যাল ল্যাবের পক্ষে শাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি, স্মৃতি আজাদ ও সুজন ঢালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বার্তায় এ আহ্বান জানান। এছাড়া বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির ব্যক্তি ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে করতালির কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। জয়ী হয়েছি। এবার আমাদের যুদ্ধ একটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। আমরা এটি করবো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। তিনি সব সময়ই অনেক বিপদ থেকেই দেশকে উদ্ধার করেছেন। এবারও ইনশাআল্লাহ তাঁর নেতৃত্বেই করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হবো।’  

এর আগে ব্রিটেন, স্পেন ও ইতালিতেও করোনাযুদ্ধে নিয়োজিতদের বিশেষভাবে উদ্বুব্ধ করতে এই কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

সোশ্যাল ল্যাবের পক্ষ থেকে ফেসবুকবার্তায় বলা হয়, ‘সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে জরুরি অবস্থা। করোনা থেকে জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছা বন্দী মানুষ। কিন্তু কিছু মানুষ মৃত্যু ভয়কে জয় করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তারা এই দুর্যোগকালে আমাদের জাতীয় বীর।’

বার্তায় আরও বলা হয়, ‘আপনার বাসার   জানালার পাশে অথবা বারান্দায় নিরাপদে অবস্থানে  থেকে  দেশের সকল ডাক্তার, নার্স, গবেষকবৃন্দ,পুলিশ বাহিনী,সেনাবাহিনী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী,ব্যাংকার,সেবাদানকারী কর্মী,পরিচ্ছনতা কর্মী এবং সেচ্ছাসেবীদের সম্মানে করতালি দিয়ে  তাঁদের সম্মান  জানিয়ে, তাঁদেরকে জানিয়ে দেই, আমরাও আছি তোমাদের পাশে। ’

‘এই পৃথিবীটা আমাদের। পৃথিবীর অসুখে এখন আমরা সবাই অসুখী। আপনার, আমার শহরের মতই পৃথিবীর প্রতিটা শহর এখন নিস্তব্ধ। এই নিস্তব্ধতা মৃত্যুর মতই কঠিন।’

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আশা করছি এই মুহূর্তে সবাই যে যার জায়গায় নিরাপদে আছেন। যারা বাসায় অবস্থান করে নিজ নিজ মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্য পালন করছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রইলো।আর যারা এই দুঃসময়ে সামনে থেকে যুদ্ধ করছেন তাদের জন্যে কি আমাদের কিছুই করার  নেই?’

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের অবদানের কথা ‍তুলে ধরে বলা হয়, ‘যারা ভাবছেন তারা টাকা কিংবা চাকরী বাঁচাতে দায়িত্ব পালন করছেন এবং জনগণের টাকা দিয়ে তাদের বেতন দেওয়া হয়,তাদের কাছে একটা প্রশ্ন: কত টাকা হলে আপনি আপনার পরিবারকে ভুলে গিয়ে COVID-19 আক্রান্ত একজনকে ছোঁবেন ?এর ঠিক পেছনেই আছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী , যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে নমুনা সংগ্রহ এবং অসহায় মানুষদের খাদ্য বিতরণের জন্যে।’

করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা ও প্রতিষেধক আবিষ্কারে নিয়োজিত গবেষকদের উদ্দেশে তারা বলেন, ‘সেন্ট্রাল জোনে আছেন আমাদের গবেষকগণ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত আপনার, আমাদের মত হাজার হাজার মানুষ আশা নিয়ে বসে আছে এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে বের হওয়ার প্রত্যাশায়।  সামান্য  এই প্রেরণাটুকো কি তাঁদের প্রাপ্য নয়? তাই এই উদ্যোগটি আমরা নিয়েছি।  আশা করি দেশে বিদেশে বাঙালি যারা আছেন তাঁরা একযোগে তাঁদের বীরদের সম্মান জানাবেন।পৃথিবীর অনেক কঠিন একটা সময় এটি। ভাইরাস কোনো দেশের সীমানা চিনে না, কোনো ধর্ম বোঝেনা, কোনো জাতি মানে না। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানকে চূর্ণবিচর্ণ করে একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছে এর মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা।’

সবাইকে এক হয়েই করোনাকে জয় করতে হবে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এর মাঝেই অকুতোভয় কিছু যোদ্ধা যুদ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত, তারা জানেনা এই যুদ্ধের শেষ কোথায়?যুদ্ধ করে চলছে পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে। এই যুদ্ধে আপনিও আছেন, যার যার ঘরে অবস্থান নেয়াটা এই যুদ্ধের কৌশল। এখন সময় হয়েছে এক হওয়ার। সকল দোষ ত্রুটি একটু দূরে রেখে দলমত নির্বিশেষে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, আসুন তাদের উৎসাহ দেই। আসুন আমরা একসাথে যুদ্ধটা করি।আসুন যারা সামনে থেকে যুদ্ধ করছেন তাদের ঠিক পেছনে দাঁড়াই।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে ৩৩০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ জন। করোনা ঠেকাতে সাধারণ ছুটি চলছে সারা দেশে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/ ১০ এপ্রিল/ এইচএফ)