রোগ প্রতিরোধে যত প্রাকৃতিক ভেষজ

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৪৮

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মারণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় সারাবিশ্বের মানুষ কাবু। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। করোনাভাইরাস সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে বংশ বৃদ্ধি করে। সংক্রমণে ফুসফুসের কিছু শ্বাসনালিতে প্রদাহ দেখা দেয়। এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসকরা করোনার এই প্রার্দুভাবের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফুসফুসকে শক্তিশালী করা জন্য জোর দিচ্ছেন। প্রাকৃতিক উপায়ে ভেষজ খাবারের মাধ্যমে আমাদের ফুসফুস ও শরীরকে শক্তিশালী করতে পারি।

 

কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ


কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সমাধানে কালোজিরা দারুণ কাজ করে। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। এছাড়া গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, খনিজ লবণ, এনকাইম, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, আয়োডিন, জিংক, কপার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে। নিয়মিত কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এটি যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তাই সকালে কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। সর্দি-কাশিতে আরাম পেতে, এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু বা এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে আধ চা চামচ কালোজিরের তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খান।


তরল খাবার


সারাদিন প্রচুর পানি, জুস, মুরগি ও সবজির স্যুপ বা তুলসি পাতার চা, গ্রীন টি পান করুন। বিশেষ করে যাদের জ্বর-কাশি, শরীর দুর্বল তাদের জন্য খুবই উপকারী।


গরম পানির ভাপ


ফুটন্ত গরম পানিতে মেনথল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। চুলা থেকে পানি নামিয়ে একটি বড় তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে নিন এবং ঘন ঘন শ্বাস নিন। এভাবে অন্তত ১০ মিনিট করে দিনে ২ বার ভাপ নিন। এতে বন্ধ থাকা নাক খুলে যাবে এবং বুকে জমে থাকা কফ বের হয়ে আসবে।


গরম দুধ


গরম দুধে মধু, হলুদ, গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া বুক কফ জমা ও সর্দি-কাশি সারাতে অত্যন্ত উপকারী। হলুদে আছে ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণ রোধকারী উপাদান, গোলমরিচ হজমে সাহায্য করে, সারায় কফ ও সর্দি। প্রতিদিন দুবার পান করতে হবে।


গড়গড়া করা


গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা কমে যায়। এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন। এভাবে দিনে অন্তত তিনবার গড়গড়া করার চেষ্টা করুন। এটি কাশি কমাতে বেশ কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়।


কুসুম গরম পানি পান


ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে কুসুম গরম পানি পান করলে গলায় আরাম হয়। বুকে জমা কফও সেরে উঠতে থাকে ক্রমেই। শ্বাসনালী ও বুকে জমে থাকা সর্দি গলিয়ে ফেলতে কুসুম গরম পানি অত্যন্ত কার্যকর।


চা


আদা, পুদিনা-পাতা, ক্যামোমাইল, রোজমেরি মিশিয়ে চা বানিয়ে পান করাও এক্ষেত্রে বেশ উপকারী। চিনির বদলে মধু ব্যবহার করলে মিলবে বাড়তি উপকার। চা ভালো না লাগলে আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।


বাষ্প


পানিতে ইউক্যালিপ্টাস তেল বা মেনথল মিশিয়ে তার বাষ্প নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে বুকে জমা কফ দূর করতে সাহায্য করবে। বাষ্প নেওয়ার সময় জোরে শ্বাস নিতে হবে, বন্ধ নাক ও বুকে জমা কফের অস্বস্তি থেকে আরাম মিলবে দ্রুত। ইউক্যালিপ্টাস তেলে আছে যন্ত্রণানাশক ও ব্যাকটেরিয়া রোধকারী উপাদান যা এতে সহায়ক।


লেবু ও মধুর সিরাপ


মধু এবং লেবুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদানে ভরপুর মধু। শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে। এক চামচ মধুর সাথে লেবুর রস ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে একটি সিরাপ তৈরি করুন। যখনই গলা খুসখুস করবে বা কফের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে তখনই এই সিরাপটি খেয়ে নিন। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে লেবু ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে গলা পরিষ্কার থাকে।


আদা


আদার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। জিনজেরোল নামে একটি কম্পাউন্ড আদাকে এত উপকারী করে তুলেছে। বুকে জমে থাকা কফ দূর করতে আদা খুব ভালো কাজে দেয়। আদা চা কিংবা আদা পানি খেলে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আদা পানির জন্য এক গ্লাস গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ভালোভাবে ফুটে উঠলে আদা ছেঁকে নিন এবং কুসুম গরম থাকা অবস্থায় খেয়ে ফেলুন। এছাড়া শুষ্ক কাশি এবং গলা খুসখুস ভাব কমানোর জন্য একটুকরো আদা মুখে নিয়ে রেখে দিতে পারেন।


হলুদ


শুধু অ্যান্টিসেপ্টিক নয়, হলুদে আছে কারকিউমিন নামক উপাদান যা জমে থাকা কফ দ্রুত বের করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গলা ব্যথা, বুকে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কুলকুচি করার জন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। অথবা এক গ্লাস দুধে আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন।


ব্ল্যাক কফি


অস্বস্তি থেকে সাময়িক আরাম মেলে ব্ল্যাক কফি পান করলে। আর জমে থাকা সর্দি থেকে মুক্তি পেতে উপকারী। তবে দিনে দুই কাপের বেশি পান করা যাবে না, কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।


পেঁয়াজের নির্যাস


পেঁয়াজে থাকা ‘কুয়ারসেটাইন’ সর্দি দূর করে এবং আবার জমতে বাধা দেয়, সংক্রমণ থেকেও বাঁচায়। পেঁয়াজের রস বের করে তাতে লেবুর রস, মধু ও পানি মিশিয়ে নিতে হবে। পরে কুসুম গরম করে পান করতে হবে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/আরজেড/এজেড)