ক‌রোনার ওষুধ অ্যাভিগান তৈ‌রি হ‌চ্ছে বাংলা‌দে‌শেই

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৫০ | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৩৪

মানবসভ্যতার সামনে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম করোনাভাইরাস। করোনার থাবায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ।

গবেষকরা এবার দাবি করলেন, করোনাকে কাবু করার সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন। করোনা থেকে রক্ষা পেতে গবেষকরা নতুন ওষুধ আবিষ্কার করলেন। এ‌টি এখন বাংলা‌দে‌শেও তৈ‌রি হ‌চ্ছে।

জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি. তৈরি করল ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান` নামে ট্যাবলেট। যা কি না করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মেরে ফেলা সম্ভব।

সম্প্রতি এরই মধ্যে অন্তত ডজনখানেক ওষুধ যেমন ফ্যাভিপিরাভির, রেমডেসিভির, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, রিবাভিরিন, ক্লোরোনকুইনিন, লোপিনাভির এবং আরবিডল কভিড-১৯ চিকিৎসার সারিতে জমা হয়েছে। সরাসরি নভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি না হলেও অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা ড্রাগ করোনাভাইরাস ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ট্যাবলেট অ্যাভিগান জাপানের ফুজি ফিল্ম কোম্পানির সাবসিডিয়ারি ওষুধ কোম্পানি তয়োমা কেমিক্যাল। ট্যাবলেটটির জেনেরিক নাম ফ্লাভিপাইরাভির। ওষুধটি এখন বাংলাদেশের বেক্সিমকো ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস তৈরি শুরু করছে।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস আগামী রবিবার ওষুধটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসনে হস্তান্তর করবে। ওষুধ‌টি সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী আছে সেখানেও সরবরাহ করা হবে। তবে এখনই ফার্মেসিতে সরবরাহ করা হবে না।

ম্যাটেরিয়াল স্বল্পতার কারণে এখন মাত্র ১০০ রোগীর জন্য ওষুধটি তৈরি হবে, তবে এ মাসের মধ্যেই ওষুধটি উৎপাদন বাড়াতে পারবে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছে সেখানে ওষুধটি পৌঁছে দেবে। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা হলেও এখন এটি বিনামূল্যে আক্রান্ত রোগীদের সরবরাহ করা হবে।

ওষুধটি প্রস্তুতের পেটেন্ট জাপানের হলেও অনুন্নত দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধটি প্রস্তুতের অনুমোদন দিয়েছে।

ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটি কভিভ-১৯ রোগের সুনিশ্চিত চিকিৎসা নয়, তবে ১২০ জন রোগীর ওপরে পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত তরুণ রোগীদের ওপর ওষুধটি ব্যবহার করে সাত দিনে এবং বয়স্কদের ওপর ব্যবহার করে নয় দিনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়েছে।

ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটির সাথে ওরভেসকো নামক আরও একটি ওষুধ মিলিয়ে ট্রায়ালগুলো করা হয়েছে।

জাপান, তুরস্ক এবং চায়না ওষুধটি ব্যবহার করছে। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের তিনটি পর্যায়- সাধারণ, মাঝারি ও মারাত্মক। এই তিন ক্ষেত্রেই ওষুধটি কার্যকর। গর্ভস্থ শিশুর ওপর ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস দমনে কার্যকর প্রমাণিত কোনো ওষুধ বের হয়নি। হয়নি আবিষ্কারের কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা। তবে এরই মধ্যে অন্তত ডজনখানেক ওষুধ যেমন ফ্যাভিপিরাভির, রেমডেসিভির, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, রিবাভিরিন, ক্লোরোনকুইনিন, লোপিনাভির এবং আরবিডল কভিড-১৯ চিকিৎসার সারিতে জমা হয়েছে। সরাসরি নভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি না হলেও অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা ড্রাগ কোভিড-১৯ ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল অসম্পাদিত ‘মেডিকেল আর্কাইভ নামে এক প্রি-প্রিন্ট জার্নালে প্রকাশিত চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিংহুয়ান ওয়াং-এর নেতৃত্বে এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অ্যাভিগান জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট আর এক ওষুধ আরবিডলের সাথে তুলনায় কার্যকরী যা করোনাভাইসের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

তাদের গবেষণা বলছে, অ্যাভিগান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের জংগান হাসপাতাল উহান লেসেশান হাসপাতাল এবং হুবেই প্রদেশের আর একটি হাসপাতালে ২৩৬ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত মাত্র সাত দিনের মধ্যে অন্তত ৬১ শতাংশ রোগী ৭ দিনে জ্বর, কাশি থেকে মুক্ত হোন। এছাড়া এইসব রোগীদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়েনি।

অধিকাংশ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা ছিল। অ্যাভিগান এইসব রোগীর শরীরে ভালভাবে কাজ করেছে বলে এই গবেষকরা দাবি করছে।

এন্টিভাইরাল ওষুধের মধ্যে অন্যতম জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.-এর তৈরি ফ্যাভিপিরাভির অ্যাভিগান। যেটি ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়। চীন উহানে কোভিড-১৯ ব্যাপক প্রাণহানির পর সেই দেশের সরকার গত মার্চে দাবি করে, এভিগান ওষুধ ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে ভাল কাজ দিয়েছে। চীনের দাবির এক মাসের মধ্যে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো ইঙ্গিত দেন যে ‘এভিগান’ কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছে।

আর এরপরই মূলত কোভিড-১৯ জন্য অ্যাভিগানকে প্রস্তুত করতে উঠে পড়ে লাগে জাপান। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ ফুজিফিল্মর প্রেসিডেন্ট জুনিজি ওকাদা এক বিবৃতিতে, ফ্যাভিপিরাভিরের জেনরিকের অ্যাভিগান তৃতীয় ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে দাবি করেন। কোভিড-১৯ মহামারি রুখতে বিশ্বের অন্যন্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী জাপান সরকারের পরামর্শক্রমে তারা এই ওষুধ সরবরাহ করবে জানান।

আমেরিকার খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন এখনও কোভিভ-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য কোনো ঔষধকে অনুমোদন দেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য দপ্তর এবং অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তর ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটিকে এখনও অনুমোদন দেয়নি। ইতালিতে ট্রায়ালে ভালো ফল পাওয়া গেছে তবে সরকারিভাবে এখনও অনুমোদন দেয়নি। বর্তমানে বিশ্বের ২০টি দেশে ওষুধটির ট্রায়াল চলছে। অ্যাভিগান সত্যি যদি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে এটি হবে এই শতকের সবচেয়ে বড় অর্জন।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :