প্রার্থিতার দৌড় থেকে কেন ছিটকে গেলেন বার্নি?

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২২ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৪২

আবুল কাশেম, ঢাকা টাইমস

আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীতার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স। অবশেষে গত বুধবার আমেরিকানদের চিন্তাভাবনাকে মৌলিকভাবে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়া বার্নি প্রতিদ্বন্দ্বীতার দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের প্রার্থীতা হওয়ার পথে আর বাধা রইলো না।

ভার্মন্ট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বিশ্বের ধনীতম দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পদের ব্যবধানের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং ধনীদের ওপর কর আদায়ের বিষয়ে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এছাড়া সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চেয়েছিলেন তিনি। তবে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যবান শিক্ষার্থী ও মেডিকেল লোনের মতো দাবিগুলো ডেমোক্র্যাট দলের বিপরীত ছিল। তবে তার অন্য দাবিগুলো মার্কিনিদের আকৃষ্ট করেছিল। তিনি তার সমাবেশগুলোতে অল্প সংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মার্কিনিদের কথা উল্লেখ করেন।

অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় যে তার বামপন্থি অবস্থানটি এমন যুগে আকর্ষণীয় হয়েছে যেখানে মানুষ পুঁজিবাদি সমাজের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং আরও সমতার বিশ্বের দাবি তুলেছে।  সমীক্ষাগুলি দেখায় যে, সমাজতন্ত্র নিয়ে আগে প্রজন্মের চেয়ে ৩০ বছরের কম বয়সি ভোটারদের মধ্যে বেশি অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

বড় আমেরিকান কর্পোরেশন, বিলিয়নেয়ার এবং ওয়াল স্ট্রিটের বিপক্ষে কথা বলা স্যান্ডার্সের ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের মধ্যে। আমেরিকার বাইরেও তার ভক্তকূলের সংখ্যা বেড়েছিল। অনুমতি মিললে অনেক ভারতীয় যুবক-যুবতী স্যান্ডার্সের পক্ষে আমেরিকায় গিয়ে প্রচার চালাতে চেয়েছিল।

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থীতার বাছাইয়ের আর্লি প্রাইমারি ভোটের স্টেটগুলোতে ঝড় তুলেছিলেন ৭৮ বছর বয়সি স্যান্ডার্স। ফেব্রুয়ারিতে আইওয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং নেভাদায় দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছিলেন তিনি। তবে সাউথ ক্যারোলিনা থেকে রাজনৈতিক গতি স্যান্ডার্স থেকে সরে জো বাইডেনের দিকে মোড় নিতে থাকে।

অ্যামি ক্লবচার, পেটে বাটিগিগ, মাইক ব্লুমবার্গ এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মঞ্চে আস্তে আস্তে উপরে উঠে আনেস দুই বয়স্ক সাদা পুরুষ। অবশেষে ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা, মিশিগান এবং টেক্সাসসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের ডান ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের পক্ষ নেন।

স্যান্ডার্সের ক্ষেত্রে এটি ঠিক যে, তিনি সবার মধ্যে বেশ ভালো করছিলেন কিন্তু যখন তার এবং বাইডেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো তখন তিনি ছিটকে পড়েছেন। কিছু মন্তব্যকারী এই প্রচারণার উপর জোর দিয়েছিলেন, যা বিগত মাসগুলিতে বিভিন্ন ধরণের ধারণা নিয়ে এসেছিল। বাইডেনের বিপক্ষে স্যান্ডার্সের হারের অন্যতম কারণে হিসেবে বিশ্বাস করা হয় যে, তরুণ ডেমোক্র্যাটরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের কারণে স্যান্ডার্স থেকে পিছু হটেছেন।

ভোটের হিসাবে দেখা যায় যে তরুণ ভোটারদের মধ্যে স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা অনেক ছিল। ১৮-৩৮ বছর বয়সি প্রাথমিক ভোটারের ৫০ শতাংশের বেশি তিনি পেয়েছিলেন। এবং প্রতিটি একক রাজ্যে যুবকদের ভোটে তিনি জিতেছিলেন। তবে সামগ্রিকভাবে যুবকদের ভোট কম হওয়ায় গত মঙ্গলবার ১৪টি রাজ্যের মধ্যে ১০টিতেই বাইডেনের কাছে হারেন স্যান্ডার্স।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো নির্বাচনে ভোটার যুবকদের চেয়ে বয়স্করা বেশি। এটা ১৯৭২ সালেও ঘটেছিল। সেসময় ২৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৮ বছর বয়সিদের ভোটার করা হয়েছিল।  প্রার্থী বাছাইয়ের প্রিলিমিনারি ভোটে যুবকরা কম হওয়ার কারণ হলো নির্বাচনের জটিল প্রক্রিয়া। এই ভোটে তরুণদের যুক্ত হওয়ার জন্য খুব কম প্রার্থীই যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছেন। এর ফলে যেসব তরুণরা স্যান্ডার্সদের র‌্যালিতে গলা ফাটিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দিনে তাদের খুব কমই দেখা গিয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্যান্ডার্সই একমাত্র মার্কিন রাজনীতিবীদ যিনি দুই বার দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে পদত্যাগ করেছেন। চার বছর আগে দলের মনোনয়ন পেতে পক্ষের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে সবরকম চেষ্টা করেছিলেন স্যান্ডার্স। তার কারণেই ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে ভাটা পড়েছিল এবং বিরোধী পক্ষের ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করেন। মনে করা হয় স্যান্ডার্স সমর্থকদের মধ্যে প্রতি আটজন ভোটারের একজন ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনেও এমনটি ঘটতে পারে।

সম্ভবত এটি যাতে পুনরায় না ঘটে তার জন্য ট্রাম্পের  বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জো বাইডেন স্যান্ডার্স ও তার সমর্থকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছিলেন, স্যান্ডার্স শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রচারণা চালাননি বরং তিনি একটি আন্দোলন তৈরি করেছিলেন।

গত শতাব্দির শুরুতে সমাজতান্ত্রিক ধারণা আমেরিকায় জনপ্রিয় ছিল। তবে বিশ্বের বৃহত্ত পুঁজিবাদি রাষ্ট্রে সেটি আবার ফির আসার সম্ভাবনা ক্ষীন। এমনকি বার্নি স্যান্ডার্সও তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। যদিও এরই মধ্যে স্যান্ডার্সদের কয়েকটি ধারণা ডেমোক্র্যাটরা গ্রহণ করেছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, করোনভাইরাস মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, এই সময়ে বিশ্বের প্রায় এক বিলিয়ন চাকরির সম্ভাব্য ক্ষতি হবে। এই জাতীয় পরিস্থিতিতে ভারমোন্ট সিনেটরের উগ্রপন্থী চিন্তাভাবনা কীভাবে করোনার দাগযুক্ত সমাজে ভারসাম্য খুঁজে পাবে।

ঢাকা টাইমস/১০এপ্রিল/একে