খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁওয়ে দাফনে স্থানীয়দের প্রতিবাদ

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২০, ১৭:০৪

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদের লাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। বিষয়টি রবিবার সকালে জানাজানি হলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীরা। তারা দ্রুত এই খুনির লাশ সেখান থেকে সরিয়ে নিতে আহ্বান জানান, নতুবা এই লাশ তুলে মেঘনা নদীতে ফেলে দিতে বাধ্য হবে সোনারগাঁওয়ের মানুষ।

ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে খুনি মাজেদের নিকটাত্মীয়দের উপস্থিতিতে লাশ দাফন করা হয়।

সকালে ঘটনা জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের লোকজন খুনি মাজেদের লাশ এখান থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফনের দাবি জানিয়েছেন। লাশ দাফনের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যাক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং জুতা-ঝাঁড়ু হাতে প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে তারা খুনি মাজেদের কবর খুঁড়তে শুরু করলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা থেকে বিরত থাকেন। এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা খুনি মাজেদের কবরে জুতা ও ঝাড়ু পেটা করেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহামুদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সোনারগাঁও উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ এনামুল হক বিদ্যুৎ, থানা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহের নেগার সোনিয়া, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতালেব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল ইসলাম বিজয় প্রমুখ।

শনিবার রাতে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি ভোলায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোলার জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে লাশ ভোলা না নিয়ে সোনারগাঁও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভোরে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে মাজেদের শ্বশুরবাড়ি সোনারগাঁওয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এ সময় খুনি মাজেদের চাচা শ্বশুর আলী আক্কাস ও শ্যালক শহিদুজ্জামানসহ পরিবারের নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি জানোয়ার মাজেদের লাশ সোনারগাঁওয়ের মাটিতে দাফন হতে পারে না। বরিশালের পাপ বরিশালে পাঠানো হোক। অন্যথায়, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সোনারগাঁয়ের বিপ্লবী জনতা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোনারগাঁওয়ে দাফন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, খুনি মাজেদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সারাবাংলার জাতিকে হত্যা করে কলঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতির সাথে বেঈমানি করেছে। সেই বেঈমানের কবর এদেশে হতে পারে না।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে সোনারগাঁওয়ে তার দাফন মেনে দিতে পারি না। আমি সোনারগাঁওয়ের সন্তান, স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে এ দেশ ও দেশের মাটিকে রক্ষা করতে যুদ্ধ করেছি। কোন খুনিকে এ মাটিতে কবর দেয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাব সোনারগাঁওয়ের পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দেশ প্রেমিককে খুন করা খুনির দাফন সোনারগাঁওয়ে হতে পারে না। প্রশাসন রাতের আধারে আমাদের না জানিয়ে তার লাশ দাফন করেছে। আমরা যদি জানতাম, তাহলে কখনই খুনি মাজেদকে সোনারগাঁওয়ের মাটিতে দাফন করতে দিতাম না। এখন আমি ও আমার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাব- খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁও থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফন করার হোক।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোনারগাঁওয়ে দাফনের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের মাটিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। খুনি মাজেদ যেহেতু সোনারগাঁওয়ের সন্তান নয়, সোনারগাঁও এ কুলাঙ্গারকে জন্ম দেয়নি, সুতরাং তার কবর সোনারগাঁওয়ে হতে পারে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবিনয় প্রার্থনা এ খুনির লাশ যাতে সোনারগাঁও থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হোক।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এলএ)