তিনি ছিলেন আমার গুরুজন

মির্জা ইয়াহিয়া
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৬

আশির দশকের মাঝামাঝি। আমি তখন শফিকুল ইসলাম ইউনুস সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক ঢাকা’ পত্রিকায় কাজ করি। পত্রিকাটি ছাপানো হতো ধানসিঁড়ি প্রিন্টার্সে l এখান থেকেই প্রকাশ হতো ওই সময়ের সবচেয়ে প্রচারিত ও জনপ্রিয় বিনোদন ম্যাগাজিন তারকালোক।

সেই সূত্রে আরেফিন বাদল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। আরেফিন বাদল ভাই আমাকে নিয়ে এলেন ‘পাক্ষিক তারকালোক’ পত্রিকায়। বাদল ভাই ছিলেন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক। প্রকাশক ছিলেন রীতা আরেফিন ভাবী । আর সম্পাদক ছিলেন কবি সাযযাদ কাদির।

সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায় তা আসলে আমি শিখেছি সাযযাদ ভাইয়ের কাছ থেকে। প্রথমেই তিনি আমার নামটা নিয়ে কাজ করেন। আমি মির্জা গোলাম ইয়াহিয়া নামে লিখতাম। তিনি ছেটে দিয়ে করলেন ইয়াহিয়া মির্জা। তখন থেকেই আমি আসলে হয়ে যাই ইয়াহিয়া মির্জা। এই নামে লিখে অনেক জনপ্রিয়তা পাই।

১৯৮৫-১৯৯০ প্রায় অর্ধযুগ সাযযাদ কাদির ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করি। তিনি আমাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে ক্রাইম, পলিটিক্যাল ও স্পোর্টস রিপোর্টিং করতে হয়। শিখিয়েছেন বিনোদন সাংবাদিকতার সবকিছু। আমি যতোটা দেখেছি, তাতে মনে হতো, বাংলাভাষার খুঁটিনাটি সবই জানতেন সাযযাদ ভাই। তার শব্দভাণ্ডার ছিলো বিশাল। সেই অ্যানালগ যুগে তার বানানজ্ঞান ছিলো আমাদের ভরসার জায়গা।

মাঝেমাঝে তারকালোকের বিশেষ সংখ্যার দায়িত্ব দিতেন ওই সময়ের তারকালোকের তরুণ সাংবাদিকদের উপর। এরমধ্যে বিশেষ করে মনে পড়ে ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফুটবলের বিশেষ সংখ্যার কথা। এই সংখ্যার দায়িত্ব তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। বাদল ভাই আর সাযযাদ ভাই থাকায় তখন কোনো কাজই আর কঠিন মনে হতো না।

কাজ করতে গিয়ে সাযযাদ কাদির ভাইয়ের পারিবারিক কাছের একজন মানুষের মতোই হয়ে গিয়েছিলাম। তার বাসায় নিয়মিতই যাওয়া-আসা ছিলো। তবে ১৯৯০ সালে আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্যাংকে যোগদান করি। তখন থেকে যোগাযোগ কমতে থাকে।

তবে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিয়মিতিই যোগাযোগ হতো। সেই বছর আমি ইংল্যান্ড যাবো। তার আগের দিন তিনি ফোন করলেন। অনেক সময় ধরে কথা হলো। বলেন ইংল্যান্ড ঘুরে আসে দেখা করো l আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম ১ মাস। এসে পারিবারিক আর চাকরিতে আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যোগাযোগ আর হয়ে উঠেনি।

২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল হঠাৎ খবর পাই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাভাষার বিশুদ্ধ এক কবি জন্ম নিয়েছিলেন এপ্রিল মাসেই। ১৯৪৭ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলে। সত্তর বছরের জীবনে নিভৃতাচারি হিসেবেই বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করে গেছেন।

সাযযাদ কাদির ভাই আমার জীবনের চলার পথে অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন আমার একজন গুরু। একজন বড় ভাই। একজন অভিভাবক। তাই তার ঋণ কখনোই শোধবার নয়। সাযযাদ কাদির ভাইয়ের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তার জন্য আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গণসংযোগ এবং মিডিয়া বিভাগের প্রধান, সিটি ব্যাংক লিমিটেড

ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :