ত্রাণ চাওয়ায় মারধর: তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হননি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৪২ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৭
চেয়ারম্যানের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ।

স্থানীয় দুঃস্থ মানুষের জন্য ত্রাণ চাওয়ায় এক যুবককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চার ঘণ্টা নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে কুমিল্লার দেবীদ্বার ইউনিয়নের দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্তের জন্য তাকে ডাকা হলেও তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হননি তিনি। বরং মঙ্গলবার বিকালে ভুক্তভোগীর পক্ষে সেখানে জমায়েত হন শত শত গ্রামবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বেকার হয়ে যাওয়া সম্প্রতি এলাকার দুঃস্থ লোকদের জন্য ত্রাণের তালিকা তৈরিসহ নিজ উদ্যোগে শতাধিক মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া গ্রামের আশেকে এলাহী নামের এক যুবক।

এরপর স্থানীয় আরও অনেকে ত্রাণের জন্য আবেদন করলে তাদের তালিকা নিয়ে চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হন তিনি। এ নিয়ে চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম খাঁনের সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যান সরাসরি, কখনও অন্যদের দিয়ে একাধিকবার আশেকে এলাহীকে হুমকি ধমকি দেন।

এরপর গত শনিবার ওই যুবককে চারজন চৌকিদার দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। এরপর পরিষদ ভবনে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে দফায় দফায় মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যুবক। নির্যাতনের ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ গত রবিবার রাতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিব হাসান।

মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে তদন্ত কমিটি আহবায়ক উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: আবু তাহেরের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি অপর ২ সদস্য ওই ইউপি ভবনে গেলে স্থানীয় সহস্রাধিক বিক্ষুব্ধ লোক পরিষদ ঘেরাও করে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিদের বিচারের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জহিরুল আনোয়ার জানান, তদন্ত কমিটি অনুরোধে পুলিশ পাঠানো হলে পুলিশ সেখানে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার যখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় আমার প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি দিয়ে লোক এনে মিছিলসহ তদন্ত কমিটির লোকজনের সাথে অশালীন আচরণ করে তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: আবু তাহের বলেন, তদন্ত কমিটিতে চেয়ারম্যানকেও হাজির হতে নোটিশ দেয়া হয়, কিন্তু তিনি (চেয়ারম্যান) নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সেখানে উপস্থিত হননি। ভিকটিম হাজির হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তার বক্তব্য নেয়া হয়েছে। আরও সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেয়ার স্বার্থে তদন্ত কাজ অসমাপ্ত রেখে বুধবার সকালে পুনরায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে হাজির হতে বলা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হওয়ার আগে চেয়ারম্যানের সহযোগীরা নানাভাবে ভয়-ভীতি এবং তদন্ত কমিটির সামনে চেয়ারম্যানের পক্ষে কথা বলতে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আশেকে এলাহী।

এলাহী জানান, চেয়ারম্যানের সহযোগী মবিন মঙ্গলবার দুপুরে ফোন করে ভয়ভীতি দেখান। বলেন, চেয়ারম্যানের পক্ষ কথা না বললে এলাকায় থাকতে দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে মবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমার কাছে তো ওর নাম্বারই নাই। আমি ফোন দেই নাই। ভুলে মনে হয় ফোন গেছে।‘ কথা শেষ না করেই কল কেটে দেন তিনি।

চেয়ারম্যানের আরও বেশ কয়েকজন সহযোগী আশেকে এলাহীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন এলাহী। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।

ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/কারই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :