বাপের হাতটা শক্ত করে ধরেন...

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২৯

রিয়াদ রায়হান, অভিনয়শিল্পী

মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ্ব এখন নাজেহাল অবস্থায়। সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ব মারাত্বক মন্দার মুখোমুখি হবে। সবার অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায় পৌঁছাবে। এমনই শঙ্কা চলে আসছে অনেকের মাঝে।

যারা এখন অতিরিক্ত খরচ করছেন কিংবা প্রয়োজনের অধিক ব্যয় করছেন। খুব আয়েশি জীবনযাপন করছেন। তাদেরও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।

ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী রিয়াদ রায়হান। পোস্টটি এরকম- ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পরে ইউরোপে সবাই কম বেশি শ্রমিক হয়েছিল। সবাই রাস্তায় মাটি কেটেছে৷ ইট ভেংগেছে কারখানায় ‘ লেবারি ‘ করেছে৷ করতে হয়েছে।
 

করোনা শেষ হলে আমাদেরও করা লাগবে। অনেক আজাইরা আভিজাত্য কমবে। মধ্যবিত্তের "লজ্জা" কমবে। পাশের বাসার ভাবি কি বললো এটা আর কেউ ভাববে না।
 

দুই হাতে কাজ করবে। আমিও মাটি কাটার জন্য রেডি হচ্ছি। কাজে ভয় পাবো কেনো? যে রকম অবস্থা সে রকম ব্যবস্থা।

ভয় পাবেন না। কারণ আপনার যে খারাপ অবস্থাটা হবে, সেটা অন্য সবারও হবে। বাড়ি ভাড়া দেবো কিভাবে?

বাড়ি ভাড়া কমে যাবে। কারণ আপনি যেমন ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে পারছেন না, আরেকজনও পারবে না। ইনকাম সবারই কমবে। ডিমান্ড কমে যাবে অনেক কিছুর।


এখন একটা মধ্য বিত্তের বাসায় মিনিমাম ৩ টা টিভি চলে। আম্মা জলসা দেখে, আব্বা খবর দেখে, আমি নেটফ্লিক্স দেখি। এই তো? ৩ টা কেনো, ৫ টা টিভিও মধ্যবিত্ত এফোর্ড করতে পারে। ডিশের লাইনের ৫০০ টাকা দেয়ার পরেও নেটফ্লিক্সের ১২০০ টাকা দিতে গায়ে লাগে না।

৯০ এর দশকে মনে আছে, এই সব কিছুই ছিল না। তখন আমাদের ইকোনমির সাইজ ছিল ছোট। চাহিদাও ছিল ছোট। অনেক যারা বড় লোক, তারা বিদেশ যেতো৷ আর এখন সিংগাপুর যাই মিরপুর যাবার মত। নেইল কাটারও আনি আলিবাবায় ওর্ডার করে চায়না থেকে। সবার পকেটে মিনিমাম দুইটা ক্রেডিট কার্ড।

এগুলা ছাড়া চলা যায়। বিশ্বাস করেন চলা যায়। টাইম পাসের জন্য বন্ধুরা আছে, ভাই বোন আছে। প্রেম করার জন্য বান্ধবীও আছে। সমস্যা হবে, যাদের বউও লাগে, পাশের বাসার ভাবিরেও লাগে। বউর পেছনে খরচ অনেক কম। ভাবির পিছনে অনেক খরচ।

আমার এই ফেসবুক মহলে এমন কে আছে যার বাসায় ৩ টা টিভি নাই? আরো বেশি আছে। ৩ টা টিভিতেই ডিস আছে, আবার সবার মোবাইলে ইউটিউব আছে। কারেন্ট বিলের সাথে ডিসের বিলও দেই কিন্তু। সাথে নেটের বিল। ওয়াইফাই আছে, আবার ডেটা প্যাকও আছে। কারন আমরা এগুলা দিতে পারি। তাই দিচ্ছি। একটা টাইমে এলাকায় একটা টিভি ছিল। তখনো সবাই ভালো ভাবেই বেচে ছিল।

বছরে একটা ফরেন টুরের ছবি না দিলে ইজ্জত থাকে না যাদের তাদের কথা আলাদা।
 

অনেকের ব্যাংকক গিয়ে ম্যাসাজ না নিলে গা ম্যাজম্যাজ করে। এই সব আর হবে না আরকি৷ না হোক, ব্যাংককের ২০ হাজার টাকার বিমান টিকেট, সাথে দুই রাত ৫ হাজার, খাওয়া ঘোরা ৫ হাজার, আর ডলাডলিতে ১০ হাজার। এই ৪০ হাজার টাকা খরচ কমে যাবে। এর চেয়ে এলাকার সেলুনে ২০ টাকা দিয়ে গা ডলাইয়েন। যদিও ওই মজাটা হবে না, সেলুনের ব্যাটার হাত শক্ত। তবে ম্যাসাস কিন্তু মামায় ভালই করে।
অন্য কথায় আসি, ভয় পাবেন না দয়া করে।

বিশ্বাস করেন, যদি কারো শক্ত দুইটা হাত থাকে, তাইলে এই বাংলায় কারো ভাতের কস্ট হবে না আল্লার রহমতে।
 

এই দেশে এখনো মাটি কোপালে গাছ হয়, মুরগি পাললে ডিম দেয়। ব্রান্ডের প্যান্ট বাদ দিয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে ২ টা লুংগি কিনবেন। একটা ধুতে দিলে আরেকটা পরবেন। ভাত খেয়ে হাত মুছবেন লুংগিতে। টিসুর খরচ বাচবে। আমরা টিস্যু চিনছি কবে বলেন তো?

এক মনিষী বলেছিলেন, "পোলাপান দুইদিন আগেও ভাত খাইয়া হাত মোছছে হোগায়, এহন চায় টিস্যু"

টিস্যু চাওয়া দোষের কিছু না। কিন্তু এগুলা ছাড়াও চলা যায়। যদি চলতে হয়, চলবো। আমি কোন ভাবেই হায়হায় পার্টিতে যোগ দিতে চাই না। মনে রাখবেন, সমস্যা খালি আপনার একার হবে না। সবারই হবে। তাই আপনি হাত মোছার টিস্যু না পেলে আমার লুংগিতে মুইছেন। কিচ্ছু মনে করবো না।।

আরেকটা কথা, আপনার আব্বা আম্মা যদি টেনশন করে, পরে কি হবে, তাদের ভরসা দেন। পোলা পান বেচে থাকতে বাপ মা কস্ট করবে কেনো? বলেন আব্বা আমি আছি। লুংগি কাছা দিয়ে কাজ করবেন, তাও বাপ মাকে টেনশন করতে দেবেন না। ওনারা এই রকম দৃশ্য আগে দেখে নাই।

হ্যা, সিডর আইলা, ৭১ অনেক ঝড় দেখেছে, কিন্তু তখন পুরা বিশ্ব, আজকের মত এক সাথে বসে পরে নাই। আর মিডিয়াতে এভাবে প্রচারও হয় নাই। ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। এই বুড়া বয়সে আবার স্টাগল করতে কার ভালো লাগে বলেন? সংসারের লুংগির গিট এখন আপনার হাতে। টাইট করে বাধবেন, যেনো খুলে না যায়।

বাপের হাতটা শক্ত করে ধরেন।

মনে রাখবেন, বাপ মার হাত ধরলে, জীবনে কারো পাও ধরতে হয় না।

লেখকঃ রিয়াদ রায়হান, অভিনয়শিল্পী

ঢাকাটাইমস/১৫ এপ্রিল/এসকেএস