ফেনীর সেই গৃহবধূর দাফন, স্বামীর স্বীকারোক্তি
ফেনী শহরতলীর বারাহীপুরে নৃশংস খুনের শিকার তাহমিনা আক্তারের দাফন বৃহস্পতিবার বিকালে সম্পন্ন হয়েছে।
পরিবার সূত্র জানায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তাহমিনার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। দুপুর ২টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ বুঝিয়ে দিলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। লাশ নেয়ার খবরে এলাকার লোকজন হাজী আমির উদ্দিন বাড়িতে ভীড় জমান। এ সময় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাহমিনার বাবা সাহাবউদ্দিন, মা ও চার ভাই-বোনের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
তাহমিনার চাচা আবু জাফর ঢাকাটাইমসকে জানান, বিকাল ৪টায় বাড়ির সামনে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলো টুটুল
নৃশংস খুনের শিকার তাহমিনার ঘাতক স্বামী ওবায়দুল হক টুটুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পালের আদালতে বৃহস্পতিবার দুপুরে টুটুলকে হাজির করা হয়। সেখানে টুটুল এই হত্যার দায় স্বীকার করে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। শেষে দুপুর আড়াইটায় আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম জানান, জবানবন্দি শেষে টুটুলকে কারাগারে পাঠানো হবে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, টুটুল ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করছি।
শিশু আরোয়া থাকবে নানীর কাছে
১৮ মাস বয়সী আরোয়া। টুটুল ও তাহমিনা দম্পতির একমাত্র সন্তান। পাষণ্ড বাবার হাতে আরোয়ার মমতাময়ী মা খুনের পর কোথায় হবে শিশু আরোয়ার ঠাঁই, কে করবে তার লালন-পালন এ নিয়ে সর্বত্র জল্পনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, আরোয়া থাকবে তার নানীর কাছে। দাদার বাড়িতে কোনোভাবেই সে নিরাপদ নয়। বিচারিক আদালতে টুটুলের সাজা ঘোষণার পর দাদা-দাদি তা মানতে পারবে না। সেজন্যই আরোয়া তার নানার বাড়ি থাকবে। নানার পরিবার তাকে লালন-পালনে অসমর্থ হলে আমি সহযোগিতা করব।
মামলায় লড়বেন সাজু
খুন হওয়া তাহমিনার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ফেনী জজকোর্টের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু। তিনি সোনাগাজীর বহুল আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় বাদী পক্ষে লড়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।
বারাহীপুরের গৃহবধূ তাহমিনা হত্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি একটি নির্মম ঘটনা। খুনি যেহেতেু ফেইসবুক লাইভে খুনের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও যদি ১৬৪ ধারার জবানবন্ধিতে একই ধরনের স্বীকারোক্তি দেন তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ঠান্ডা মাথায় খুন করার অপরাধে খুনির ফাঁসি হতে পারে।
শাহজাহান সাজু বলেন, নিহত তাহমিনার বাবা সাহাব উদ্দিন ইতোমধ্যে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নিকটবর্তী এলাকায়। তিনি ওই মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে লড়বেন বলে সাহাব উদ্দিনকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড নিশ্চিত পর্যন্ত লড়ে যাবো।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করে বারাহীপুর ভূঞা বাড়ির ওবায়দুল হক টুটুল। হত্যার পর নিজেই ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশে খবর দেন তিনি। এ ঘটনায় তাহমিনার বাবা চৌদ্দগ্রামের আকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/কেএম)