দাফনের আগে নড়েচড়ে উঠল নবজাতক

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০২০, ২১:০৯

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সিজার অপারেশনের পর হাসপাতালের বারান্দায় মৃত ঘোষণা দিয়ে মৃত নবজাতককে কার্টুনে মুড়িয়ে ফেলে রাখা হয় চার ঘণ্টা। এরপর দিয়ে দেয়া হয় স্বজনদের কাছে। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিতে কার্টুন খুললে শিশুটি নড়েচড়ে উঠে, দেখা যায় শিশুটি জীবিত। তাৎক্ষণিক ভর্তি করা হয় নগরীর বেসরকারি একটি প্রাইভেট হাসপাতালের এনআইসিইউতে। চিকিৎসক, নার্স ও আয়াসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক)।

হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এমন ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিশুটির স্বজনরা।

শনিবার বিষয়টি জানাজানির পর তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন কুমেক হাসপাতালের পরিচালক। 

জানা গেছে, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চড়ানল গ্রামের জামাল হোসেনের স্ত্রী শিউলী আক্তার। প্রসব ব্যথা উঠলে  গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকাল ৬টায় সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। কিন্তু জন্মের পর ওই হাসপাতালে কর্মরত এক আয়া প্রথমে স্বজনদের কাছ থেকে একটি কাঁথা নিয়ে মুড়িয়ে মেঝেতে ফেলে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর একটি কার্টুনে বেঁধে হাসপাতালের বারান্দায় আরও চার ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। পরে শিশুটিকে দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর দাফনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় কাটুন খুলে দেখা যায় ওই শিশুটি জীবিত। 

শিশুটির পিতা জামাল হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা অপারেশন হয়। শিশুটির দিকে কোন ডাক্তার বা নার্স নজর দেয়নি। চার ঘণ্টা কার্টুনে মুড়িয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। পরে বাড়িতে নিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় জীবিত দেখে দ্রুত সিএনজিযোগে কুমিল্লা মুন হাসপাতালে এনে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিশুটির অন্য স্বজনরাও। তারা জানান, বাচ্চা সুস্থ থাকলে মায়ের কাছেই থাকত। আমরা তো বাড়িতে নিয়ে আসতাম না। কার্টুন খুলে দেখি পা নড়ছে। এ বাচ্চা তো আর কবর দেয়া যায় না।

শিশুর স্বজন সাইফুল ইসলাম জানান, সরকারি হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তাররা আছেন। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে আমরা এ ধরণের ভুল প্রত্যাশা করি না। কিন্তু সেখানে যদি প্রত্যাশিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব? যেহেতু তাদের ভুলের কারণে শিশুটির জীবন বিপন্ন। তাই এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আমরা শাস্তি দাবি করছি। 

এদিকে নবজাতক এ শিশুটি মুন হাসপাতালের এনআইসিইউতে এবং শিশুটির মা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় তলায় অপারেশন থিয়েটারের সাথে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে ৫নং বেডে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মুন হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাপস চৌধুরী জানান, চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা ছাড়া একজন আয়া কিভাবে এ কাজ করে সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। ২৮ সপ্তাহের আগে প্রি-ম্যাচিউর এ শিশুটি অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি বাচ্চাটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য।

একই হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (এনআইসিইউ) মেডিকেল অফিসার রাব্বি হোসেন মজুমদার জানান, ‘শিশুটি এখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। সাধারণ শিশুদের থেকেও সে অনেক কম শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। তাই আমরা অক্সিজেন দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি।

একাধিক সূত্র জানায়, কুমেক হাসপাতালে এর আগেও গাইনি বিভাগে চিকিৎসা অবহেলার কারণে একাধিক নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিছু ঘটনা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হাসপাতাল কর্তপক্ষের উদাসিনতা যথাযথ তদারকির অভাবে প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটেছে। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু আমার নজরে এসেছে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানের সাথে আমি কথা বলব। এক্ষেত্রে কারো গাফিলতি বা ভুল প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এলএ)