করোনায় ভালো নেই পরিবারহীন বাবা-মায়েরা

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২০, ১১:০২ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৩

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

হাড়-মাংস পানি করে সন্তানের জন্ম দেন মা। সন্তানের জন্য সহ্য করেন অমানুষিক কষ্ট। বাবার ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়। সন্তানকে মানুষ করতে বিসর্জন দেন নিজের জীবনের সব আরাম-আয়েশ। কিন্তু বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর সেই সন্তানের কাছেই মা-বাবা হয়ে পড়েন অচ্ছুৎ, বোঝা। অনেকে জন্মদাতা পিতা-মাতাকে বোঝা মনে করে রাস্তায় ফেলে যায়। ফলে, শেষ বয়সে এসব মানুষ পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়ে।

শুধু গরিব-অসহায় পরিবার না সমাজের সচেতন ও উচ্চবিত্তের সন্তানরাও করছেন এই ধরনের কাজ। সম্পত্তির লোভে কিংবা রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক সন্তান বা আত্মীয়রা বয়োজ্যেষ্ঠ এসব মানুষকে রাস্তায় রেখে যায়। এমন ঘটনা গণমাধ্যমে প্রায়ই উঠে আসে।

গত বছর প্যারালাইজড আক্রান্ত এক বৃদ্ধকে ধানমন্ডিতে ফেলে যায় পরিবার। ডেমরায় তিনি নিজে দুটি বাড়ির মালিক ছিলেন। এছাড়া দূর আত্মীয় পরিচয়ে এক বৃদ্ধাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যায় তার মেয়ে। তার আগে এক নারীর ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত কুক্ষিগত করতে তাকে রাস্তায় ফেলে যায় পরিবার।

এমন অনেক ঘটনা প্রতিনিয়ত চারপাশে ঘটছে। এসব অসহায় মানুষের চিকিৎসা ও ভরণপোষণ করে রাজধানীর কল্যাণপুরে অবস্থিত চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার (বৃদ্ধ বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশু আশ্রয়কেন্দ্র) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সেখানে ৬৬ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও ছয়জন প্রতিবন্ধী শিশু আছে। আগে সাধারণ মানুষের সহায়তা পেলেও করানোভাইরাসে সেটা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে বৃদ্ধাশ্রমের অসহায় মানুষগুলো।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে যারা থাকছে তাদের বেশিরভাগ পরিবারের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার। কাউকে রাস্তায় ফেলে রাখার পরে সেখানে ঠাঁই হয়েছে। আবার কাউকে পরিচয় গোপন করে পরিবারের সদস্যরা রেখে গেছেন। কাউকে আবার মানবিক কারণে বস্তির কুঁড়ে ঘর এখানে এনে রাখা হয়েছে।

বয়সের ভারে সবাই বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব মানুষকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক অসহায় মানুষ এখানে থেকেছে। অনেকে মারা গেছে আবার অনেক সুস্থ করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আবার প্রশাসনের মাধ্যমেও অনেকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফেলে যাওয়া বাবা-মাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠতা মিলটন সমাদ্দার ঢাকা টাইমসকে বলেন, সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য নিজের উদ্যোগে ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলাম। এখানে যারা আছে সবাই অসহায়, অসুস্থ ও বৃদ্ধ। নিজের পরিবারের মতোই তাদের যত্ন করি। আমার স্ত্রীও সব সময় তাদের তত্ত্বাবধান করে। বর্তমানে ৬৬ জন অসহায় অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও ছয়জন প্রতিবন্ধী শিশু এখানে রয়েছে। এসব মানুষের নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র, বিনোদনসহ সকল সুযোগ সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি। অনেকে আমাদের সেবামূলক এই কাজে এগিয়ে আসেন।

মিলটন বলেন, অসহায় মানুষগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকার কারণে এখানে এনে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করা হয়েছেন। সবাই প্রায় বার্ধক্যজনিত কঠিন রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিনিয়ত সেবা দিতে হয়। প্রতিমাসে প্রায় ১১ লাখ টাকা তাদের পেছনে খরচ হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এসব মানুষের চিকিৎসা, খাবারসহ বিভিন্ন কাজ একা পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আবার ঠিক মতো সেবা না পেলেও এসব মানুষকে বাঁচানো কঠিন।

চলতি মাসে ৭২ জনের স্যানিটেশন ব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখতে খরচ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় বিত্তবানদের সহযোগিতায় চেয়েছেন মিলটন সমাদ্দার। কেউ সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৬২০৫৫৫২২২ নম্বরে।

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/এসএস/জেবি)