‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করব’

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২০, ২০:০৩ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ২০:৪৬

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচির বিষয়ে একটি মহল ক্রমাগত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তবে জাতির পিতার আদর্শের সৈনিকরা তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাযুদ্ধে জয়লাভ করবে বলে আশাবাদী শরিয়তপুর-১ আসনের এই সাংসদ।

করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রবিবার টেলিফোনে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ইকবাল হোসেন অপু। করোনা ঠেকাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগসহ তার এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণের বিষয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য।

ইকবাল হোসেন অপু বলেন, ‘করোনা ঠেকাতে সরকারের নানা উদ্যোগের বিষয়ে যতই অপপ্রচার চালানো হোক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। জাতির জনকের নেতৃত্ব আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। তারই সুযোগ্য কন্যা নেতৃত্বে আমরা এই করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করব বলে আমি বিশ্বাস করি।’

সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়ম হলেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দিনমজুর, বাস-শ্রমিক, রিকশা চালক, ভ্যানচালক, নির্মাণ-শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।’

‘ইউএনও, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের মাধ্যমে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এতে কিছু অনিয়ম হতে পারে। কিছু কিছু জায়গায় অনিয়ম হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সাংগঠিকভাবে সেসকল চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন।’

তবে এসব বিষয়ে একটি মহল ক্রমাগত অপপ্রচার ও জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুসংখ্যক বিএনপি-জামায়াত, তাদের কাজই হচ্ছে ঘরে বসে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো। তারা এই দুর্দিনে মানুষের সেবায় নিয়োজিতদের ধন্যবাদ না দিয়ে, তারা মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।’

‘এখন পর্যন্ত দেখেছেন- বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে? বাংলাদেশে তো অনেক সংগঠন, কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীদের এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে? আর আমাদের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই কার্যক্রম, এই ত্রাণ বিতরণ যেন নসাৎ হয়ে যায় কিছু কুচক্রী মহল সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

অপপ্রচারের এই পথ অনেক পুরনো মন্তব্য বরে অপু বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় বাসন্তী নামের একটি মহিলাকে জাল পড়িয়ে পত্রিকায় ছবি অপ্রকাশ করে অপপ্রচার চালিয়ে ছিল। তারই প্রেতাত্মারা আজ এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু কঠোরভাবে বলে দিয়েছেন- যদি এর সঙ্গে আমার দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত থাকে আমি কাউকে ছাড় দেব না। তাই আমরা বলতে চাই, যখন বাসন্তীকে জাল পড়িয়েছিল, তখনকার সময়ে জালের দাম ছিল পাঁচশো টাকা, শাড়ির দাম ছিল ৫০ টাকা। তখন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বাসন্তীকে শাড়ি না পড়িয়ে চাল পড়ানো হয়েছিল। খুনি জিয়ার প্রেতাত্মারা, খুনি খালেদা জিয়ার প্রেতাত্মারা, জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের প্রেপ্তাত্মারা এই অপ্রচারগুলো চালিয়ে যাচ্ছে।’

করোনাভাইরাস সংকট দেখা দেয়ার পর শরিয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে ২৫ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু।

এই সাংসদ বলেন, ‘আমি শরিয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে, পালং-জাজিরার সংসদ সদস্য হিসেবে, প্রথমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সারা পৃথিবীতে মহামারী চলছে। যেকারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়।’

‘আমরা যে আয়োজন করেছিলাম, তা সংক্ষিপ্ত করে মানুষকে সচেতন করেছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার যে ৩১টি নির্দেশনা সেই অনুযায়ী কাজ করছি। পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করেছি।’

করোনা সচেতনতায় তার সংসদীয় এলাকায় নানা কর্মসূচি সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, জীবানুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটারজার, মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। ডাক্তারদের পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সহ সকল সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। করোনা রোগিদের চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের সহযোগিতা করা হয়েছে।

‘আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে গত মাসের ১৬ মার্চ থেকে খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত এটা চলমান আছে। যতদিন করোনাভাইরাস নির্মুল না হয় এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

 

কোনো মানুষ যেন অনাহারে না থাকে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা যথাযথ পালনে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে ঢাকা টাইমসকে অপু বলেন, ‘পালং-জাজিরার একটি মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে অনাহারে না থাকে, একটি মানুষও যেন অনাহারে মৃত্যুবরণ না করে। যেটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা, সেদিকটি লক্ষ্য রেখে আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস নির্মুল বা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলমান থাকবে।’

এখন পর্যন্ত শরিয়তপুরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৫ জনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং জেলায় করোনা পরিক্ষা বা চিকিৎসার কোনো সংকট নেই বলেও জানান সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু।

তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলায় নড়িয়া থানায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ ইতালিতে বসবাস করে। প্রায় চার হাজার মানুষ দেশে ফিরলে আমাদের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে আসে। এই পর্যন্ত তাদের থেকে কোনো আক্রান্তের খরচ পাওয়া যায়নি।’

‘তবে সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে কিছু মানুষ আমাদের জেলায় আসলে তাদের মধ্যে ৫ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর সংবাদ নেই। আমি আশা করি, যারা আক্রান্ত তারাও খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।’

তার জেলায় চিকিৎসার কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে চিকিৎসকরা সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন ও রোগিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সাংসদ অপু।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য ঢাকা টাইমসের মাধ্যমে চিকিৎসক, সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিভিল সার্জন, সাংবাদিক এবং বিত্তবান যারা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/ডিএম)