বাসায় বসে অফিসের কাজ করে অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন

আসাদুজ্জামান
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২০, ১৯:০০ | প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২০, ১৮:৪৯

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির জনসংযোগ ব্যবস্থাপক এস এম আলাউদ্দিন আল আজাদ আলিফ। পাশাপাশি তিনি তথ্যপ্রযুক্তি এবং অটোমোবাইল নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন। বান্দবারবান থেকে প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক পত্রিকার ঢাকা ব্যুরো প্রধান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চলমান লকডাউনে তথ্যপ্রযুক্তিখাতের প্রভাব এবং এই বিসিএস-এর বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

মহামারি করোনাভাইরাসের এই সময়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সর্বশেষ অবস্থা কী?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) করোনা পরিস্থিতিতে সদস্যদের ব্যবসায়িক অবস্থার অবনতি নিরসনে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় ভাটা পরেছে। উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশ পর্যন্ত এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের চলাচল সীমিত করার আগে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা মানুষদের বাসায় থেকে কাজ করতে উৎসাহিত করে গেছেন। এজন্য প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি বা বাসায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার সেবা চালু হয়েছে। বিসিএস করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বাসায় বসে অনলাইনে কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। আমরা ২২ মার্চ থেকে বাসায় বসে অনলাইনে অফিস করে যাচ্ছি।

কয়দিন আগে বিসিএস-এর নির্বাচন হলো। কোন প্যানেল জয়ী হয়েছে? তাদের অভিষেক হয়েছে কি? নতুন কমিটি দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিতে প্রতি দুইবছর পর পর দ্বিবার্ষিক কার্যনির্বাহী এবং শাখা কমিটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০-২২ মেয়াদকালে ১৭ জন প্রার্থী দুইটি প্যানেলে এবং স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ‘সমমনা ৭’ প্যানেল থেকে পাঁচজন এবং চ্যালেঞ্জার্স ২০২১ প্যানেল থেকে দুইজন পরিচালক নির্বাচিত হন। করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। নতুন কমিটি দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির কতজন সদস্য আছে? ঢাকা ছাড়াও কয়টা শাখা আছে? সেগুলো কোথায়? বর্তমানে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিতে ২৩১১ জন সদস্য রয়েছেন। ঢাকা ছাড়াও বিসিএস এর খুলনা, সিলেট, যশোর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল এবং চট্টগ্রামের শাখা রয়েছে।

আপনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে কবে থেকে যুক্ত আছেন? আমি ২০১৬ থেকে বাংলাদেশ কম্পিউার সমিতির জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত রয়েছি।

বিসিএস-এ আপনার দায়িত্ব কী? এই দায়িত্ব আপনি কীভাবে পালন করছেন? জনসংযোগ সংক্রান্ত সকল দায়িত্ব ভার আমার উপর নিয়োজিত। এছাড়া গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান, সংবাদকর্মীদেরকে বিসিএস এর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত করাসহ সকল ধরণের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি লেখা আমার দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়াও বিসিএস এর প্রয়োজনে সম্মানিত সভাপতির নির্দেশে যেকোন দায়িত্ব পালন করতে আমি প্রস্তুত থাকি।

বিসিএস-এ আপনি জনসংযোগ ব্যবস্থাপক হিসেবে আছেন। আপনার পড়াশোনা কী গণযোগাযোগের উপর? মূলত আমি আইনের ছাত্র। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। পরবর্তীতে আমি বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট (পিআইবি) থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করি। মূলত সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ার সময় আমি জনসংযোগ বিষয়ের উপর পড়াশোনা করি। সাংবাদিকতার সঙ্গে গণযোগাযোগের নিবিঢ় সম্পর্ক রয়েছে। সাংবাদিকতা আমার প্রিয় পেশা। আমি লিখতে পছন্দ করি। তাই সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমি বিসিএস-এর জনসংযোগ বিভাগ দেখার দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী হয়ে এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই।

এখন আপনি কোথায় অবস্থান করছেন? বর্তমানে আমি আমার জন্মস্থান এবং পৈত্রিক বাড়ি পাহাড় কন্যা বান্দরবানে অবস্থান করছি। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ছিল। নির্বাচনের পরে আমি দুইদিন ছুটি নিয়ে বান্দরবানে আসি। তারপর থেকে লকডাউনে আটকে গিয়ে এখন বান্দরবানে বাসায় বসে অনলাইনে অফিসের কাজ করছি।

লকডাউনের এই দিনগুলোতে আপনি কীভাবে অফিসের কাজ করছেন? তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যে সংগঠনটি ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করে আসছে সেই সংগঠনটি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। কম্পিউটার শিল্প তথা হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করলেও সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, ই-কমার্স থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি শাখা প্রশাখায় আমাদের কার্যাবলী বিস্তৃত। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)সহ তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি সংগঠন বিসিএস সদস্যদের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং মেইলে আমাদের অনলাইনের কাজগুলো সম্পন্ন করি। এছাড়া জুম অ্যাপে আমরা প্রতিনিয়ত অফিসের মিটিং এ যোগদান করি। সারাদেশেই বিসিএস এর অনলাইন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির এই উত্থানের এই যুগে আপনি কি মনে করেন অফিসে বসেই অফিসের কাজ সারতে হবে। নাকি বাসায় বসেও অফিসের কাজ সারা যায়? তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে বাসায় বসে অফিসের কাজ করার দারুণ একটি অভ্যাস অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে। তবে বিসিএস এর সবকাজ বাসায় বসে করা সম্ভব নয়। আমরা সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে অনেকগুলো কাজ করে থাকি। দাপ্তরিক ব্যাপারগুলো অফিসে যাওয়া ছাড়া পরিপূর্ণ করা যায় না। তবে যেভাবে অনলাইনে সবকাজ সম্পন্ন করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে আমরা বাসায় বসেই অফিসের সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবো বলেই আমার বিশ্বাস।

বিসিএস-এর সদস্যরা এখন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে না। এতে করে অনেকেই সমস্যাগ্রস্থ। তাদেরকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে কিনা? বিভাগীয় শহরগুলোসহ দেশের অনেক অঞ্চলে এখন লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রযুক্তি পণ্যের বিপণন এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে স্বল্প পরিসরে বেচাকেনার কাজ হলেও প্রযুক্তি পণ্য বিপণন এবং ইন্সটলেশনে দক্ষ টেকনিশিয়ান অনেক ক্ষেত্রে আবশ্যক। তাই আমরা সরকারের কাছে এই খাতে সম্ভাব্য ক্ষতি এবং এর সমাধানের উপায় নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা করে যাচ্ছি। এই খাতকে জরুরি সেবাখাত হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য বিসিএস কার্যনির্বাহী কমিটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। আমাদের দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ বাসায় থেকেও এই সেক্টরকে গতিশীল করতে তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে।

অনলাইন মিটিং, সিদ্ধান্ত, প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা বিসিএস এর নৈমিত্তিক। তাই বিসিএস প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে জোড়দার ভূমিকা রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা নিয়মিতভাবে সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সম্মানিত পরিচালকবৃন্দ তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এই সেক্টরের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে উদয়অস্ত মেধা এবং শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মাননীয় সভাপতিসহ পুরো কার্যনির্বাহী কমিটি একাধিকবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। আমি আশা করছি, শিগগিরিই আমরা এই মহাসংকটসময় অবস্থার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবো।

আপনার মতো এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উপায় কী? দেখুন, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিলাসিতার পণ্য নয় বরং প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ। প্রতিটি সেক্টরকে বেগবান রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে রক্ষা করতে প্রযুক্তি খাতে কর্মরতদের আগামী ৬ মাসের আংশিক বেতন ও অফিস ভাড়া পরিশোধপূর্বক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য কেবলমাত্র বেতন বাবদ ১৫৬০ কোটি ও অফিস/শো-রুম/ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ ৩৭০ কোটিসহ মোট ১৯৩০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করার জোর দাবি জানিয়েছে বিসিএস। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনুদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে ৫ বছর মেয়াদী ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেয়া প্রয়োজন। যে ঋণ গ্রহণের এক বছর পর থেকে শোধের সময় শুরু হবে। আশা করছি, এতে উদ্যোক্তারা বর্তমান ক্ষতি কাটিয়ে নতুন করে সম্ভাবনার দ্বারে প্রযুক্তি ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ঢাকাটাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :