মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী: মননশীল শিশু-কিশোরতোষ রচনা

অমিত কুমার কুণ্ডু
| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ২০:০৫ | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৩২

বিশ্ব বই দিবস ২০২০। লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিনের মতো এই দিনটিও বিফলে চলে গেল। সারাদিন তেমন কিছুই করে উঠতে পারলাম না।

সন্ধ্যার পর হাতে তুলে নিলাম কামরুল হাসান শায়কের 'মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী' বইটি। শিশুতোষ গল্পের বই। অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল। পড়া তো শেষ হলো, কিন্তু পড়ার ভালো লাগার মুগ্ধ অনুভূতি? সেটা শেষ হলো না। লিখতে বসলাম বইটি নিয়ে।

বইটির প্রথম মুগ্ধতা আনে প্রচ্ছদ দেখে। এত চমৎকার প্রচ্ছদ কে আঁকতে পারে? কাভার মেলে ধরলাম। ছোট্ট করে লেখা রয়েছে, প্রচ্ছদঃ জি জি। চিনতে পারলাম না। না চেনাটা অস্বাভাবিক নয়। কতজনকেই বা চিনি?

বইটির পরের দুইপৃষ্ঠা জুড়ে মনোরম এক রাজপ্রাসাদের ছবি। নিশ্চয় এইটিই সেই 'আশ্চর্য নগরী'। সমুদ্রের তলদেশের।

বইটির অলংকরণ, বাঁধাই, কাগজ, ছাপা এককথায় অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের মুদ্রণশৈলীর অনন্য নিদর্শন।

বইটির গল্প আবর্তিত হয়েছে বিজয় আর জয়াকে নিয়ে। গল্পের মধ্যে এই দুই ভাইবোনের সাথে পরিচয় হয় তাদের হারিয়ে যাওয়া মা মৎসকুমারীর সাথে। মৎসকুমারী মায়ের পিঠে চড়ে দুই ভাইবোন চলে আসে আশ্চর্য নগরীতে।

সেখানে পরিচয় হয় এক অতিকায় দানবের মতো দেখতে মানুষের সাথে। তার নাম বানশী। তার সব আছে, শুধু মনে শান্তি নেই। নগরবাসীর সমস্ত ধনদৌলত লুন্ঠন করে, সমস্ত নিয়ম ভেঙে সে হয়ে পড়েছে সম্পদশালী। কিন্তু বড্ড একা। নগরীর মানুষেরা তার সাথে কথা বলে না, ঘৃণায় ঘর থেকে বের হয় না। দৈত্যের মতো এই মানুষটি মানুষের ভালোবাসা হারিয়ে বড় ব্যথিত হয়ে আছে।

নগরীকে স্বাভাবিক রূপে ফিরে পেতে বানশী মৎসকুমারীর সাহায্য চাইল। মৎসকুমারী ও তার দুই সন্তান আবার নগরীর শান্তি ফিরিয়ে আনল। অতিকায় বানশী তার কৃতকর্মের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা প্রর্থনা করল। নগরী আবার আগের মতো সুন্দর ছন্দময় হয়ে উঠল।

বানশী এই কাজের জন্য মৎসকন্যা সালফিকে বহুমূল্য পুরস্কার দিতে চাইল। নির্লোভী সালফি সেটা গ্রহণ করল না। সব ভালো ভালো নিয়ম মানা নগরী ওয়াফি থেকে তারা স্বসম্মানে বিদায় নিল। বিজয় আর জয়া ঠিক করল, ফিরে এসে তারা পৃথিবীকেও ওয়াফির মতো আনন্দনগরী করে গড়ে তুলবে।

শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা এ গল্পে উচ্চ আদর্শ, ত্যাগ, পারস্পরিক সমতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। শিশুদের মন কেঁড়ে নেবার সমস্ত উপকরণই আছে বইটিতে। গল্প বলার নান্দনিক দক্ষতা আছে। ভাষা আছে পরিশীলিত ও সাবলীল। নেই অহেতুক উপদেশের ছড়াছড়ি। জটিল শব্দ ও যুক্ত বানান যতটা সম্ভব সরিয়ে রাখা হয়েছে।

'উত্তর আধুনিক একটি সাম্যবাদী সমাজ কাঠামোয় গড়ে উঠেছে ওয়াফি নগরীর সকল নিয়মনীতি।' যে নিয়মনীতি অনুসরণ করলে পৃথিবীর সকল সমাজ হবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, মানুষের বাসযোগ্য এক নান্দনিক আবাসভূমি।

বইটি অর দশটা বই থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উন্নত মেধা ও মননের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বইটিতে। যে কোন পাঠকসহ অন্যান্য শিশু-কিশোর পাঠকেরাও মুগ্ধ হবে নিশ্চয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :