করোনায় পুলিশকে উজ্জীবিত করতে এসপি লালনের গান
চীনের উহান থেকে ছড়ানো ভাইরাস করোনায় সারাবিশ্বের মতো থমকে আছে বাংলাদেশেও। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে দেশে একের পর এক বাড়তে আছে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা। ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখে থেকে যারা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে আছেন পুলিশ সদস্যরাও। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকলেও প্রায় দুই লাখ পুলিশ মানবসেবায় নিয়োজিত। করোনায় মৃত ব্যক্তির মরদেহ দাফন, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়, নিজেদের রেশনের খাবার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষকে ঘরে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
এই মহান ত্যাগে পুলিশের সদস্যদের মনোবল বাড়াতে গান লিখেছেন বাহিনীটির এক কর্মকর্তা। তার নাম দেওয়ান লালন আহমেদ বাপ্পি। পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বর্তমানে খুলনা টুরিস্ট পুলিশে কর্মরত। চাকরির পাশাপাশি গীতিকার ও লেখক হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়।
‘দুঃসময়ের হাল ধরা নাবিক মানবিক আর নির্ভীক-বাংলাদেশ পুলিশ’ শিরোনামের এ গানটিতে সুর এবং কন্ঠ দিয়েছেন শিল্পী অটামনাল মুন।
গত ২৪ এপ্রিল গানটির একটি ভিডিও ‘বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে’ শেয়ার দেওয়া হয়। এরই মধ্যে অর্ধ লক্ষাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি দেখেছেন এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় এক হাজার।
পুলিশ নিয়ে এর আগেও গান লিখেছেন লালন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ নিয়ে একটি গান ‘পঁচিশে মার্চ’ লিখেছিলেন। সেটিও বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চারটি গান ছাড়াও ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ নিয়ে তিনটি কবিতা লিখেছেন। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লাঞ্চনা বেদনার গল্পের গান ‘বীরাঙ্গনা’বেশ আলোচিত।
পুলিশের এই কর্মকর্তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছ থেকেই দেশপ্রেমের আদর্শ ছোটবেলা থেকে বুকে ধারণ করেছেন। স্কুলজীবনে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল লালন আহমেদের। তারপর লেখালেখির প্রতি আগ্রহ শুরু।
২০১৬ সালে ‘বাবার চোখে মুক্তিযুদ্ধ’গ্রন্থ দিয়ে প্রথম বই প্রকাশ। বইটি পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছ থেকে শোনা অভিজ্য বইটিতে যেমন ফুটে উঠেছিল, তেমনি ফুটে উঠেছিল; বাবার প্রতি সন্তানের ব্যাকুল ভালোবাসা আর বাবার শূন্যতার হাহাকার।
‘পুলিশের খেরোখাতা’নামে একটি গ্রন্থে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের আত্মিক মেলবন্ধন তুলে ধরেছিলেন পুলিশ সুপার লালন আহমেদ। বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসকদের পরাধীনতার কবলে বেনিয়ারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবহার করেছে, সেটি বইটিতে তুলে ধরেছেন।
২০১৮ সালে শিশুতোষ ছড়া নিয়ে ‘বিতং বনে বনবনিয়ে’ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে দুটি বই প্রকাশিত হয় পুলিশের এই কর্মকর্তার। এরমধ্যে একটি পুলিশের ‘খেরোখাতা দ্বিতীয় পর্ব’ এবং ‘সাধু সঙ্গে ডুবাও অঙ্গ।
এছাড়া মায়ের নেই বিকল্প, জারুল ফুল, প্রেম আছে বলে, যোজন যোজন দূরে, ভালো থেক, বুকের ভিতর আরেকটি বুক- এমন অনেক গান তাছাড়াও ‘আমার মা’ এবং ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ সিনেমায় তিনি গান লিখেছেন।
শুধু তাই নয়, দেওয়ান লালনের লেখা ছয়টি গান গেয়েছেন জনপ্রিয় ফিডব্যাকের গায়ক লুমিন। মা দিবস নিয়ে লেখা গান ‘মায়ের নেই কোনো বিকল্প’। সংগীতশিল্পী—এলিটা, কনা, ইমরান, কোনাল, কর্নিয়া, মুন ও জুয়েল মোর্শেদ এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
করোনার এই মহামারিতে ‘দুঃসময়ের হাল ধরা নাবিক মানবিক আর নির্ভীক-বাংলাদেশ পুলিশ’গানটি পুলিশকে উজ্জীবিত করবে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ঢাকাটাইমসকে দেওয়ান লালন আহমেদ বাপ্পি বলেন, ‘করোনার এই সময় সম্মুখযুদ্ধে যুদ্ধ করছে চিকিৎসক আর পুলিশ। আমি অনেক আগে থেকে গান এবং লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। এবারের গানটি পুলিশের প্রণোদনামূলক এবং তাদেরকে উজ্জীবিত করবে। এছাড়া সমাজের কাছে পুলিশের ইমেজটাকে আরও বাড়াবে।’
ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এসএস/এমআর