পর্ব-০১

হায়েরোগ্লিফে যা লেখা হবে

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৫০ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৫৮

অমর মিত্র
অলংকরণ: বিধান সাহা

কাযান শহরের মেয়র এই প্রথম মার্কোর দেখা পেলেন। ভূপর্যটক  মার্কো পোলো বহু বছর আগে, অন্তত ৫০০ বছর আগে এই শহরে এসেছিলেন তাতার সম্রাটের কাছে। ইনিও মার্কো পোলো। পিছনের ৫০০ বছর হেঁটে এসেছেন, নাকি তাঁর পিতৃপুরুষের উত্তরাধিকার নিয়ে এসেছেন? মেয়র দেখলেন মার্কোর গায়ের রঙ রোদে পুড়ে পুড়ে তামাটে, সোনালি চুলে ধূসরতা। মেয়র মার্কোর যে ছবি দেখেছেন, তার সঙ্গে এই প্রবীণের মিল কম। শুধু চিবুকের গড়নে কিছু মিল দেখা যায়, ঈষৎ ছুঁচোল তা। মুখে অনেকটা দাড়ি জমেছে নিয়মিত খেউরি না হওয়ার কারণে। মেয়র নিজে সাড়ে ছ’ফুট লম্বা। মস্ত চেহারা। তিনি মধ্যবয়সী। এক সময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। কম্যান্ডার পদ মর্যাদার। চুক্তি পর্ব শেষ হলে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। মেয়রের কত কিছু জানতে হয়। এই শহরে একজন বিদেশি এসেছে, সে নাকি  সেই কত বছর আগে, কত শত বছর আগে লোকটা দূর পাশ্চাত্য ভেনিস নগর থেকে এসেছিল তাঁর এই নগরে। মেয়রের মনে হচ্ছিল,  লোকটার গায়ে বহু দেশ, বহু জনপদের ধুলো, বহু দেশ বহু জনপদের বাতাস, বহুবর্ষের স্মৃতি আর স্বপ্ন। লোকটা বলছে, ঘুরতে ঘুরতে সে ভুলেই গিয়েছিল তাতার দেশের কথা, এই জনপদের কথা। সে ঘুরতে ভালোবাসে।  ঘুরতে ঘুরতে একদিন আচমকা দেখতে পেল আঙিনায় মানুষ নাই, সড়কে মানুষ নাই। অশ্বগুলির মুখে লাগাম, পিঠে জিন নাই, কিন্তু তারা বনের ঘোড়া নয়, তারা বন থেকে মানুষের কাছে এসে পোষ মেনেছিল। তারা প্রভু পেয়েছিল। কিন্তু এখন একেলা ঘুরছে হেথা হোথা। খাদ্যের সন্ধান করে বেড়াচ্ছে। প্রভুরা তাদের ত্যাগ করেছে।  খাদ্য দেবে কীভাবে।  প্রভুরা গৃহে অন্তরীণ হয়েছে।

মেয়র  শুনতে শুনতে অবাক হলেন, বললেন, আমার নিজস্ব ঘোড়াশালে তো ঘোড়া রয়েছে, অশ্বের হ্রেষা শুনতে পাই,  অশ্বক্ষুরধ্বনি কানে আসে, গত গ্রীষ্মের সময় এক ব্যক্তির দুটি ঘোড়া উধাও হয়ে যায়, কৃষক, তাকে আমি দুটি ঘোড়া কিনে নিতে বলি পশু বাজার থেকে, তার মূল্য আমিই পরিশোধ করি, আমি নিজে অশ্বারোহনে পটু, অশ্বারোহী বাহিনীতেই ছিলাম যৌবনে।

মহামান্য মেয়র, নগরাধিপতি,  সেই কারণেই তো আপনার এই শহরে  প্রত্যাবর্তন। কত পথ ঘুরে, কত ঘুরুয়া বাতাসে ভুল পথে গিয়ে, আবার পথ পরিবর্তন করে, কাযান শহরে এসে পৌঁছলাম।

মেয়র, নগরাধিপতি  মার্কো পোলোকে দেখছিলেন।  মানুষটার চোখমুখে ভয়ের চিহ্ন। মার্কো বলল, মহারাজ আমি নানা দেশ ঘুরে আসছি,আমি আশ্রয় পাইনি কোথাও,মানুষ এখন মানুষের মুখের দিকে তাকাতে ভয় পাচ্ছে, জনপদগুলি বদলে গেছে।

স্বাগত  মার্কো পোলো, ভেনিসীয় পর্যটক, কী দেখেছেন বলে যান। মেয়র তাকে বললেন।
 
খবরিয়া বলছেন:
আজ ২৮-শে মার্চ, ২০২০ সাল। আমি গত ১৪ তারিখ শনিবার কলেজ স্ট্রিট গিয়েছিলাম দেজ পাবলিশিংয়ে। সেখানে বিশেষ কেউ ছিল না। সুধাংশুবাবুর সঙ্গে কিছু কথা হলো। তারপর আমি বাড়ি চলে এলাম সন্ধ্যের কফি হাউস ছেড়ে। অলোক গোস্বামী এসেছিল। শনিবারের আড্ডা না দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলতে, ও আমাকে বলল, অতিরিক্ত আতঙ্কিত হচ্ছেন। তখন করোনার কথা আমি জেনে গেছি। মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি কোনো সামাজিক মেলামেশায় যাব না। বাসে ফিরলাম খুব ভয়ে ভয়ে।  সকালে বিদ্যাসাগর কলেজে একটি অনুষ্ঠান ছিল, গিয়েছিলাম। দুপুরে ফিরে বিকেলে গেলাম প্রুফ নিয়ে। বাড়ি ফিরে স্যোসাল মিডিয়ায় বললাম, আর কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে নেই। এর জন্য কিছু বিদ্রুপ শুনতে হলো। সুখ্যাত কবি বন্ধু মৃদুল দাশগুপ্ত বললেন, তুমি অমর, তুমি কেন ভয় পাচ্ছ, আমি তো কবিতা দিয়েই...।

অতঃপর দুটি দিন, ১৫ এবং ষোলই মার্চ ঘরে বসে কাটল। সেই ভাবে কাটবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কলকাতা আছে কলকাতাতেই। বাসে ট্রামে মানুষজনের ভীড়। টেলিভিশন দেখা হয় কম, তবু যেটুকু দেখেছি, সেখানে খবর কম। ভয়ের কিছু দেখলাম না তেমন। তবে এক অদৃশ্য ঘাতক এসে গেছে এই শহরে তার ইঙ্গিত আসছিল। ১৭-ই মার্চ দিনটি ছিল রৌদ্রালোকিত। কোথাও তো বেরব না, সুতরাং তাড়া নেই। কিন্তু হয়ে গেল অন্য ঘটনা।

১৭-ই মার্চ লেখক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু,অরিন্দম বসু সকাল নটায় খবর দিল। সুব্রতর মৃত্যু আমাকে আবার বাড়ির বাইরে নিয়ে গেল। প্রখর হয়েছে রোদ্দুর। অফিস টাইম। টালা ব্রিজ বন্ধ বলে সব গাড়ি আমাদের বেলগাছিয়া ব্রিজ পার হয়ে খাস কলকাতায় ঢুকছে। ব্রিজে গাড়ির গতি কচ্ছপের মতো। বাসে যাওয়া যাবে না। ছাতা নিয়ে কেন বেরলাম না জানি না, রোদে হাঁটতে হাঁটতে মেট্রো স্টেশন। ভেবেছিলাম এই সময়ে খুব ভীড় থাকবে, কিন্তু মেট্রো ছিল অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। লোকে বেরচ্ছে কম মনে হচ্ছে। তবুও গা ঘেষাঘেষি করে যেতে হলো। মুখে মাস্ক পরে আছি। অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু যেতে হবে। এইভাবে রবীন্দ্র সদন অবধি। তারপর গায়ের ওপর কারো শ্বাস-প্রশ্বাস নেই। আমি মাস্ক পরেই ছিলাম। কবি নজরুল,গড়িয়া স্টেশন থেকে অটোয় করে দুই তরুণ বন্ধু জয়ন্ত,অরিন্দম বসুর সঙ্গে চললাম। গড়িয়ার ব্রিজ পার হইনি তখনো,পথের ধারে কী এক মন্দিরে দেখছি বেজায় ভীড়, লম্বা লাইন গায়ে গা, কাঁধের ওপর দিয়ে মুখ ঘেঁষে, রমণীরা দেবীর জন্য সিধে এনেছেন। নারিকেল, মিষ্টান্ন, ইত্যাদি। দেবী শীতলা কিংবা কালী হবেন। কাঁসর ঘণ্টা বাজছে। বেজায় ভীড়। এমন কেন? ভয় নেই। অটো থেকে দেখছি কোথাও কোনো ব্যত্যয় নেই। দোকানপাট খোলা, বেচাকেনা চলছে। ব্যাগ হাতে লোকে হাঁটছে। গাড়ির অবিশ্রান্ত হর্ন শুনতে পাচ্ছি। সবুজ জামা নীল প্যান্ট তরুণ সিভিক পুলিশ লাঠি হাতে যান নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মুখে কাপড়ের মাস্ক। লোক রাস্তা পার হচ্ছে, ভবঘুরে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঠিক করতে পারছে না, সোজা যাবে না পিছনে যাবে। ডান দিকে যাবে,না বাম দিকে। আমি তো মৃত বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। ব্যারাকপুরের সুব্রত সোনারপুরে লিভার ফাউন্ডেশন হাসপাতালে গত রাত ১১টা ৫৫মিনিটে মারা গেছে। আমাকে কতবার বলেছে আয় অমর, ব্যারাকপুরে আয়, যাওয়া হয়নি, কলকাতা থেকে অনেকটা তাই। তা ছাড়া মোবাইল ফোন, হোয়াটস আপ ইত্যাদি অনেকটা সাক্ষাতের বিকল্প হয়ে উঠেছে। রাজপুর থেকে সোনারপুর যেতে যেতে দেখছি সমস্ত শ্যামলিমা উধাও। কংক্রিট আর কংক্রিট। এত বহুতল, ফ্ল্যাটের পর ফ্ল্যাট...কত মানুষ এইটুকু জায়গায়।   

লিভার ফাউন্ডেশন হাসপাতালে যেতে সোনারপুরে অটো বদল করতে হয়। সোনারপুরে তো বেজায় হল্লা। অটো হাঁকছে, বাস হাঁকছে, রিকশা প্যাঁক প্যাঁক করছে। জনারণ্য। থিক থিক করছে মানুষ। সবাই কাজের ভিতর আছে। সব রকম বয়সের সব রকম মানুষের সব রকম কাজ থাকে। সব রকম কাজ মেটাতেই পথে নামা। খর রোদে হাঁটছি। রেললাইন পার হয়ে অটোস্যান্ড কম দূর নয়। রাস্তা দিয়ে চলা যাচ্ছে না। আইসক্রিমের দোকান থেকে লাল ফিতের দোকানও খোলা আছে। গিজগিজে  লোক  আছে সব জায়গায়। কেউ যেন জানেই না কিছু। যে যার মতো চলেছে। গুলতানি মারছে। হাহা হিহি হাসছে চায়ের দোকানে। কেউ জানে না অদৃশ্য ঘাতক কার ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে। আমি কারোর কাছে যেতেই ভয় পাচ্ছিলাম।  সোনারপুর বদলে গেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার দ্বীপের মানুষ দ্বীপ ছেড়ে এই নগরে এসে আস্তানা নিয়েছে। আমার বন্ধুই আছে তেমন কয়েকজন। অসম উন্নয়নে এই হয়েছে। সমস্ত রক্ত মাথায় এসে উঠেছে। মনে পড়ে গেল, অনেক বছর আগে এক বর্ষার দুপুরে গাড়ি নিয়ে সোনারপুর হয়ে  কলকাতার দিকে যাচ্ছিলাম। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, গাড়ি আচমকা দাঁড়িয়ে গেল। নিঝুম  রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে নিশ্চিন্তে কই মাছ হাঁটছে। নিশ্চিন্ত মৎস্য রাস্তা পার হচ্ছিল। সেই অবারিত মাঠ, হোগলাবনের সোনারপুর এখন নেই, সব মুছে গেছে। বহুতল যেমন আছে, তেমনি বড় বড় শপিংমল। বাতাস এর ভিতরে গরম। রাস্তার ধারে নির্মীয়মাণ বাড়ির ইট-বালি ডাঁই করা রয়েছে। রেললাইন পার হয়ে অনেকটা হেঁটে আবার অটো। অটোরিকশা করে ১১-৩০ হয়ে গেল পৌঁছতে। খুব কষ্ট হয়েছিল সুব্রতকে দেখে। রূপবান বন্ধুর মুখ কালো হয়ে গেছে। রাজ্যের ধুলো এসে পড়েছে যেন মুখখানির উপর। যেমন হয়েছে এই সোনারপুর। গরম হাওয়ায় বালি উড়ছে বাতাসে। শববাহী গাড়ি করে ও ব্যারাকপুর যাত্রা করলে আমরা  সেই হাসপাতাল থেকে রওনা দিলাম। আবার মেট্রো করে ফিরলাম ৩-৩০ নাগাদ। যাক,১৭-ই হয়েছিল বলে দেখতে পেয়েছি ওকে। আর এক দুদিন পরে এই ঘটনা হলে, আমি বন্ধুকে দেখতে যেতে সাহস পেতাম না। বন্ধুর টান দুর্নিবার হলেও বাড়ি থেকে আটকে দিত। ঐ বিকেলেই তো করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় কলকাতায়। আমি মাস্ক পরেই সোনারপুর গিয়েছিলাম। আমি, ঝড়েশ্বর, সমীরণ দাস, অপু( শুভঙ্কর দে )  সর্বানন্দ চৌধুরী, অরিন্দম বসু, জয়ন্ত দে।

শুনতে শুনতে মেয়র  বললেন, অস্বাভাবিক কিছু তো দেখলাম না এই বিবরণে, বন্ধুর মৃত্যুতে বন্ধু যাবে, জনপদ স্বাভাবিক থাকবে, সেই জনপদে একবার বর্ষার দিনে কতক মৎস্য পার হয়ে যাচ্ছিল এক পথ থেকে আর এক পথে, সেই মৎস্য কত বড়?

মার্কো শুনেছেন কথাটি। অটো রিকশার ভিতরে বসেই বাকি তিনজনের কথোপকথনে শুনেছেন সেই মাছটির কথা। মাছটির নাম কৈ।

মেয়র  বললেন,  আপনি  জিজ্ঞেস করেননি, যে মাছ একদিন বৃষ্টি হয়ে গেলে ডাঙায় হেঁটে বেড়ায়, সেই মাছের কি দুটি পা আছে, নাকি সে তার পুচ্ছ ভর করে লম্বভাবে হেঁটে বেড়ায়, নাকি পাখনা দিয়েই হাঁটে, আমি এমন মৎস্যের কথা শুনিনি কখনো।

আমি শুনেছি, একদিন এমন ছিল, এখন এমন নেই, পুষ্করিণী ভরাট হয়ে হর্ম্য শ্রেণী মাথা তুলেছে।

সেই মৎস্য কোন দিকে চলেছিল, পুব থেকে পশ্চিমে নাকি...।

মার্কো বললেন, হয়ত পুবে, এখন পুব বন্ধ হয়ে গেছে মস্ত প্রাচীরে, কাঁটাতারে।

মেয়র জানালার শার্সির ভিতর দিয়ে দেখছিলেন বাইরে তুষারপাত শুরু হয়েছে। তুষারপাতের শেষ নেই, শীত গিয়ে বসন্ত আসার সময় হয়েছে, কিন্তু এবার শীত অতি দীর্ঘ, তিনি ভাবছিলেন মার্কো, এই ভূপর্যটক দাবা খেলতে জানেন কি না। মেয়র চুরট ধরালেন, তারপর সাজাতে লাগলেন  তাঁর সৈন্য সামন্ত। মার্কো সেই মাছটির কথা ভাবছিলেন। আসলে এমন হতে পারে ঐ মাছের কথা সত্য নয়। কত সত্য মিথ্যা যে ভেসে বেড়াচ্ছে এখন জনপদে জনপদে। জলের মাছ ডাঙায় হেঁটে বেড়ালে, সে মৎস্যকুমার কিংবা কুমারীও হতে পারে যাদের কেউ কখনো দ্যাখেনি। তিনিও দ্যাখেননি, অতএব মিটে গেল সমস্যা। কিন্তু জল থেকে বেরিয়ে তারা কি অন্য জলাশয়ের দিকে যাচ্ছিল, নাকি চিরকালের মতো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছিল। আর জল দরকার হবে না তাদের বেঁচে থাকার জন্য। জলের বাইরেই   শক্তিমান হয়ে উঠবে।  মার্কো চমকে উঠলেন। সেই যে ভাইরাস, সে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি এই এই কথাই শুনেছেন পথে পথে।  
                                                      
খবরিয়া বলছেন:
ঐ ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় আমলা পুত্রের কাহিনি দূরদর্শনে দেখি। ১৫-ই ভোরে সে লণ্ডন থেকে কলকাতা ফিরে স্বেচ্ছা অন্তরীণে যায়নি। সে নাকি তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে। সে এক বান্ধবীর সঙ্গে পার্টি করে লণ্ডন থেকে ফিরেছে। সে মায়ের সঙ্গে সরকারি সেক্রেটারিয়েট নবান্ন গিয়েছিল। মা মিটিং করেছেন স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে, কর্মচারীদের নিয়ে। এই ঘটনা  কয়েক ঘন্টায় ভাইরাসের মতো সংক্রামিত হয়ে গেল। তার তো রোগ লক্ষণ দেখা দিয়েছে। কতজনে ছড়িয়েছে তা নিয়ে গবেষণা হতে থাকে। মাতা-পুত্রের ছবি ফেসবুকে ঘুরতে থাকে। মানুষ হিংস্র হয়ে উঠতে লাগল। আমলার শাস্তি দাবী করে কত পোস্ট। তার বাবা ডাক্তার। নিন্দার ঝড় বয়ে যেতে থাকে। আমিও কটু মন্তব্য করেছি। পরে তা মুছে দিয়েছি।  কোনো কোনোটা আর খুঁজেই পাইনি। তবে সমালোচনা করেছি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য। তার বেশি কিছু নয়।  ভালো লাগছিল না। ছেলেটির প্রতি আমাদের না পূরণ হওয়া বাসনা পূরণ করে নিয়েছিলাম যেন। আমি অক্সফোরড যাইনি, তুই গেলি! বিলেতে ফুর্তি করে এলি। তবে সেই যুবক এবং তার মা-বাবা খুব অন্যায় করেছিলেন তা সত্য। বাবা যার ডাক্তার তাঁর নিশ্চয় জানা উচিত ছিল করোনা আক্রান্ত ইউরোপ থেকে ফেরার পর আইডি হাসপাতালে যাওয়া জরুরি এবং সেখানে ভর্তি হয়ে গেলে ভালো হত। পাশ্চাত্যের কথা ভেসে আসছে তখন এদেশে। নিউইয়র্কে ফোন করে জেনেছি, কেমন আছে সেই শহর। ওদেশে মানুষের গড় আয়ু বেশি। নব্বই পার মানুষ গাড়ি চালিয়ে অফিস করেন। বন্ধু  কুলদা রায়  বলেছিল দাদা, ভয় নেই, মেরির হাসপাতালে একজন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ ভেন্টিলেশনে গেছেন। নিউইয়রক ভালো আছে। পরে নিউইয়র্ক ভালো থাকল না। ভয়ানক হয়ে উঠল।  
(চলবে…)