মাধবপুরের দূরবারী মুন্ডার খবর রাখেনি কেউ

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৭

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

মাধবপুরে হাজারো পরিবারের মাঝে একটি উপজাতি পরিবার বৃদ্ধা দূরবারী মুন্ডার। কিন্তু তার দুরবস্থার খবর নেয়নি কেউ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নৃতাত্তিক জনগোষ্টির জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকলেও সেই সুবিধাও পায়নি। নৃতান্তিক জনগোষ্ঠি জানেই না মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের হরিনখোলা গ্রামে নৃগোষ্ঠির একটি পরিবার আছে। করোনা পরিস্থিতিতে দূরবারী মুন্ডার পাঁচ সদস্যের পরিবারে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে।

পরিবারের  একমাত্র নাতির উপার্জিত অর্থে তার সংসার চলতো। বর্তমানে করোনার প্রভাবে কাঠমিস্ত্রি নাতিও বেকার। তাই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দূরবারী মুন্ডার আক্ষেপ হাজারো মানুষের মাঝে নৃগোষ্ঠীর একমাত্র পরিবারটির বসবাস কয়েক যুগের। কিন্তু কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পরা দূরবারীর ভাগ্যে সরকারি কোনো  ভাতা বা কার্ড জুটেনি। কোনো দান-অনুদানও পায়নি।

দূরবারী মুন্ডার স্বামী লাল বাহাদুর মুন্ডা মারা যান অনেক বছর আগে। কয়েকবছর আগে ছেলে রুবিয়া মুন্ডা ও পরপারে চলে গেছে। ভিটেবাড়িই একমাত্র সম্বল তার। নাতী জুসেফ মুন্ডা। গত বছর চৌমুহনী খুর্শিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। কিন্তু লেখাপড়ার প্রবল আগ্রহ থাকলেও আর্থিক দৈন্যতার কারণে ইচ্ছা পুরণ হয়নি। পরিবারের খাবার যোগাতে শক্ত হাতে হাতুড়ে-বাডাল ধরে। হয়ে যান পেশাদার কাঠমিস্ত্রি।

করোনা পরিস্থিতিতে দূরবারী মুন্ডার সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এক গ্রামে একটি নৃপরিবারের বসবাস হওয়ায় গ্রামে অন্যদের থেকে তারা ভিন্ন। কেউ তাদের সঙ্গে মিশে না। খোঁজও নেয় না। তারা অনেকটা একঘরে জীবন যাপন করেন। গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয় একজন সাংবাদিক দূরবারী মুন্ডার দুর্দশার বর্ণনা শুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন।  বিষয়টি উপজেলা প্রশাসের নজরে এলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে দূরবারী মুন্ডার বাড়িতে হাজির হন। ত্রাণের ব্যাগ পেয়ে বৃদ্ধা দূরবারী মুন্ডা আনন্দে কাঁদতে শুরু করেন ।

মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি আয়েশা আক্তার বলেন, বিষয়টি সত্যিই মর্মান্তিক। হাজারো মানুষের বসবাস এখানে। এ পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। দূরবারীর পরিবারকে সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় কিভাবে নিয়ে আসা যায় এ ব্যাপারে উদ্যেগ নেবেন বলেও জানান সহকারী কমিশনার।

এদিকে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মদও দূরবারীর পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন। মহিউদ্দিন জানান, খবরটি জানার পর মানবিক কারণে খাদ্যসামগ্রী উপহার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। আদিবাসী সমিতির এক নেতা বলেন। মাধবপুর উপজেলার হরিনখোলা গ্রামে যে একটি নৃগোষ্টী মুন্ডা পরিবার রয়েছে তা আমরা জানতাম না। ভবিষ্যতে আমরা বিষয়টি মাথায় রাখবো।

চৌমুহনী ইউপি চেয়ারম্যান আপন মিয়া বলেন, দূরবারী মুন্ডার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/কেএম)