‘সাকিবের ব্যাট কিনেছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য’

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৪ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৩২

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

ক্রিকেট বিশ্বের অলরাউন্ডার বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সম্প্রতি তার প্রিয় ব্যাটটি নিলামে বিক্রি করেছেন। সেই ব্যাটটি কিনতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের অনেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু অনেকটাই কাকতালীয়ভাবে অলরাউন্ডারের ব্যাটটি গত বুধবার (২২ এপ্রিল) ২০ লাখ টাকায় কিনে নেন কৃতী প্রবাসী বাংলাদেশি সৈয়দ রাজিব ইমতিয়াজ (রাজ)। ব্যাট বিক্রির এই অর্থ সাকিবের গড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্যয় করবেন করোনার দুর্বিপাকে পড়া অসহায় মানুষের সহায়তায়।

সাকিব আগেই জানিয়েছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের পুরোটা এই ব্যাট দিয়েই খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ৬০৬ রানও করেন। এছাড়া বিশ্বকাপের আগে-পরে সবমিলিয়ে এই ব্যাট দিয়েই সাকিব দেড় হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেন।

ফলে এই ব্যাটটির মূল্য কি হতে পারে সেটি সমঝদার মাত্রই বুঝতে পারবেন। তেমনি একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাজ। তিনিই এখন ব্যাটটির মালিক। রাজ একসময় কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহৎ বিনিয়োগকারী ব্যাংক ‘লেম্যান ব্রাদার্সে’। এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যাংক অব বার্কলেসের। বর্তমানে একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানির বড় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সাকিব আল হাসানের ব্যাটটি কেনার পর মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসকে ক্রিকেটের প্রতি তার সহজাত দুর্বলতা আর সাকিবের ব্যাটটি কেনার পরের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। হিলারি ক্লিনটনের ‘ফরেন পিলিসি এন্ড ইমিগ্রেশন’ উইংয়ে কাজ করে আসা রাজ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন সাকিবের এই অমূল্য ব্যাটটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে রাখতে চান তিনি।

কেন এই নিলামে অংশ নিলেন?

রাজ: আমি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছি। অনেকে বলেন তুমি এতদিন দেশের বাইরে কি করছো, কি দাও তুমি। অনেকে আসলে টাকা দিয়ে সব কিছু মূল্যায়ণ করার চেষ্টা করে। যদিও পৃথিবীতে অনেক জিনিস আছে যা টাকার থেকে অনেক মূল্যবান। আমি এখানে হয়তো একজনকে একটা পরামর্শ দিলাম, গাইডলাইন দিলাম। পরে একটা ভালো জব পেলো। তার পরিবারকে সাপোর্ট দিলো। সেটা তো ১ হাজার ডলার তাকে দেয়ার থেকে অনেক বেশি কাজে দিবে।

নিলামে কিভাবে অংশ নিলেন?

রাজ: যারা এই নিলামের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন তাদের একজন হলো আমার বন্ধুর ছোট ভাই। ওরা ফেসবুকে একটা পোস্ট দেয় পরে দেখে বললাম আমি তো ক্রিকেটের ভক্ত। সাকিব আল হাসান একজন লিজেন্ড। আমি বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে মাঠে ছিলাম। এটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের একটি অংশ।

এছাড়াও চিন্তা করেছি আমিসহ বাংলাদেশের অনেকেই অনেক ভাগ্যবান যে এখনো ঘরে বসে কাজ করতে পারছি। হয়তো আমরা চিন্তা করছি ব্যবসায় লস হবে, অনেক ক্ষতি হবে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশ সবখানেই এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বাইরে বের হতে না পারলে তাদের থাকা- খাওয়া ঠিকভাবে করতে পারবেন না। যেটা বাংলাদেশে বরং বেশি। আর যদি তারা বাইরে যায় তখন করোনাভাইরাস হলে তো আরো অসুবিধা। যখন দেখলাম ভালো কাজের জন্য তারা নিলামটা করছে তখন ভাবলাম চেষ্টা করে দেখি। তারপর তো প্রসেস শুরু হয়ে গেলো আর থামে না।

ভারতীয় একজন জোর চেষ্টা করেছিলেন। সেখান থেকে আপনি জিতে গেলেন?

রাজ: এখানে আমার দুটো মতামত। একটা হলো- কোনো বিদেশি কেউ আমাদের সাকিব আল হাসান ভাইকে শ্রদ্ধা করে আমাদের ক্রিকেটকে ভালোবেসে ব্যাটটা কিনতে চান সেটা আমাদের জন্য গর্বের। অন্যটা হলো এই ক্রিকেট ব্যাট দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের একটা বড় অংশ। আমার দৃঢ়বিশ্বাস একদিন না একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। সেটা যেদিন হবে সেদিন মানুষ বলবে কে কে ছিলো যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি অবদান রেখেছে, কোন ম্যাচ বা ইনিংসগুলোতে বুঝতে পারলো তারা একদিন চ্যাম্পিয়ন হবে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের ম্যাচগুলোর কথা মানুষ নিশ্চয়ই বলছে এটা দেশের ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত। তাই এই রকম ইতিহাসের অংশ আমাদের দেশের মধ্যেই রাখা উচিত। সেজন্য আমি একদিকে খুশি যে অন্যরা কিনতে চেয়েছে। আর একটা হলো আমরা দেশেই এটা রাখতে চাইতাম। তাই সে (ভারতীয়) যদি আরো একটু বেশি বলতো আমি আরো একটু বেশি দাম দিতাম।

আপনি ব্যাট না কিনে অন্যভাবেও সহায়তা করতে তো পারতেন?

রাজ: আমি মনে করি বিভিন্ন মানুষ নানাভাবে হেল্প করেন। আমার বন্ধুরা অনেক সময় অনেক ধরণের হেল্প করছি যার কিছু হয়তো আপনি গণমাধ্যমে পাবেন আবার কিছু পাবেন না। আমার এক বন্ধু এখনই সে অনেক বড় ফান্ড সংগ্রহ করতেছেন মানুষের সহায়তার জন্য। কিন্তু নামও আপনি জানতে পারবেন না। এটা একটু বড় হয়ে গেলো যে কারণে সবাই জানতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অনেকে অনেকভাবে সহায়তা করছেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ‘সেবা’র সিইও অনেকভাবে কাজ করছেন। এটা আমি ঘুম থেকে উঠলাম, দেখলাম নিলামের কথা। ভাবলাম চেষ্টা করি। তারা বলছিলো আমি লাইভে আসবো কি না- আমি বলেছি প্রচার পছন্দ না। পরে আমাকে বললো ভাই আপনার নামটা দেই। বললাম- ঠিক আছে দিয়ে দেন রাজ। এরপর যখন জিতে গেলাম তখন বললো পুরো নামটা দেই না হলে তো মানুষ জানবে না। আর একবার এখন প্রকাশ হয়ে গেলে তো আর থামে না।

নিলামে জিতে যাওয়ার পরের অনুভুতি?

রাজ: আমার জীবনের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ মূহুর্ত ছিলো সেটা। আমি ক্রিকেট খুব পছন্দ করি। আমি যখন কাজ করি তখন তিনটা স্ক্রিন থাকে। বাংলাদেশের ম্যাচ থাকলে একটা স্ক্রিনে ক্রিকেট দেখি। আর এবারের বিশ্বকাপের বাংলাদেশ- ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে মাঠে ছিলাম। নিলাম জেতার পর ওই ম্যাচ জেতার পরের মূহুর্তটা ফিরে এসেছিল। কারণ এই ব্যাটেই তো সাকিব আল হাসান ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আসলে মানুষের জীবনে কিছু কিছু মূহুর্ত থাকে যেগুলো আনন্দের, এক্সাইটিং। আমরা জীবনে অনেক কাজ করি ভালোভাবে বাঁচার জন্য। কিন্তু বয়স হলে একদিন হয়তো বলবো ২০২০ সালে আমি এটা করেছিলাম। কারণ আমি বিশ্বাসও করতে পারিনি প্রথমে। বাংলাদেশের একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক নিলামে অংশ নিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তারাই ব্যাটটি কিনে নিবে।

এই ব্যাটটি এখন কি করবেন?

রাজ: ব্যাটটি আমি রেখে দেবো আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আমার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যাটটি তুলে দিয়ে বলবো এই লোকটি একসময় বিশ্বসেরা ছিলেন। তুমিও বিশ্বসেরা হতে পারো।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

রাজ: ঢাকাটাইমসকেও অনেক ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/ডিএম)