বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:০২

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে সিটি করপোরেশনের ভোগড়া, টঙ্গী ও শ্রীপুর এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোগড়া এলাকায় বিক্ষোভের সময়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা তিনটি মোটরসাইকেল ও আটটি সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

শিল্প পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ভোগড়া এলাকার স্টাইলিস পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয়। লে-অফ করার আগে ৩০ জন শ্রমিকের বেতন এবং ৮০ জন স্টাফের ৬০ শতাংশ বেতন বকেয়া ছিল। দুইদিন ধরে ওই কারখানার শ্রমিকেরা বন্ধ করে দেওয়া কারখানাটি দ্রুত খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারখানার সামনে জড়ো হয় শ্রমিকেরা। পরে তারা আশপাশে থাকা ভলমন্ট ফ্যাশন, ক্রাউন ফ্যাশন, টেকনো ফাইবার নামে চলমান কারখানার শ্রমিকদের কাজ না করার আহ্বান জানায়। একপর্যায়ে ওইসব কারখানায় তারা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় শ্রমিকেরা ক্রাউন ফ্যাশন কারখানার সামনে মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা তিনটি মোটরসাইকেল ও ৮টি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের মহাসড়ক ছেড়ে যেতে অনুরোধ জানালোও শ্রমিকরা সাড়া দেয়নি। পরে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সড়ক অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশেই মালবাহী যান ও ব্যক্তিগত গাড়ির জট লেগে যায়।

এদিকে, শ্রীপুর উপজেলার পটকা এলাকায় জেজে ফ্যাশন নামের একটি কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। ওই কারখানার প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

এছাড়া টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় ইউনিটেক্স কারখানায় একই দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে শ্রমিকরা।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই গাজীপুরে খোলা হয়েছে চার শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে দলে দলে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। তবে কারখানার বাইরে শ্রমিকদের আসা-যাওয়া এবং আবাসস্থলে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ও কর্মরত শ্রমিকরা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকার পরও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানা চালু ছিল। নতুন করে আবার কিছু কারখানা খুলতে শুরু করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার জেলায় পোশাক কারখানাসহ ৪শতাধিক বিভিন্ন কারখানা চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে এসব কারখানায় কাজে যোগ দিতে শ্রমিকরা বিভিন্ন উপায়ে গাজীপুরে আসেন। তবে মাঠ পর্যায়ে সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করছে।

কাজে যোগ দিতে আসা কয়েকজন শ্রমিক জানান, পেটের দায়ে করোনার ঝুঁকির মধ্যেই তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানার ভেতরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া তাদের পা’সহ সারা শরীর জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়েছে। নিজ উদ্যোগে মাস্কও পড়ছেন তারা। তারপরও লকডাউনে কারখানায় আসার পথে রিকশা, ভ্যানে গাদাগাদি করে আসতে হয় তাদের। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়ার সময়ও এসবের বালাই নেই। করোনাভাইরাসের হটস্পট ঘোষণার পরও থেকে নেই লোক সমাগম। লকডাউন অমান্য করে হাট বাজারে লোকজনের ভিড় দেখা গেছে। করোনার হটস্পট হিসেবে গাজীপুর তৃতীয় অবস্থান থাকলেও সাধারণ মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।

সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব মতে, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন একজন। আইইডিসিআরে নুমনা পাঠানো হয় ১৭৫ জনের। মোট আক্রান্ত ৩২৫ জন, নমুনা পরীক্ষা হয়েছে দুই হাজার ২৯৮ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :