এএসআই জাহিদের জমিতে দাফন হবে করোনায় মৃতদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৪ | প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১৪:২৯

মহামারী করোনায় দিশেহারা সবাই। আক্রান্তদের থেকে সংক্রমণের ভয়ে দূরে থাকছেন স্বজনরা। মারা গেলে কাছেও আসছেন না অনেক সন্তানরা। কোথাও আবার নানা গুজবে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কবর দিতেও বাধা দেয়ার খবর আসছে গণমাধ্যমে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। বরিশালের বানারীপাড়ায় কর্মরত পুলিশের এএসআই জাহিদুল ইসলাম এবং তার স্বজনদের ১৭ শতাংশ জমি দান করেছেন কবরস্থান করার জন্য। নিজ এলাকা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের এই কবরস্থানে করোনায় আক্রান্তদের দাফন করা যাবে।

শুধু তাই নয়, অন্য যে কোনো বেওয়ারিশ বা দাফনের জমি নেই এমন অবস্থা কারো হলে সেই মরদেহও এখানে নিঃসংকোচে দাফন করা যাবে বলে জানান এএসআই জাহিদুল ইসলাম।

জানা গেছে, কবরস্থানের জন্য দান করা এই জমির বাজারমূল্য দশ লাখ টাকারও বেশি। তার এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। মারা গেছেন ‍দুইজন। যে কারণে বর্তমানে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন চলছে। যে কারণে জেলায় সর্বত্র করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার দাবিতে জেলার বাউফলে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভও করেছে। এই অবস্থায় নিজেদের পক্ষ থেকে সবার জন্য উম্মুক্ত কবরস্থান করার জন্য জমি দিয়েছেন জাহিদ ও তার স্বজনরা। মির্জাগঞ্জের মধ্যে যদি কোনো মানুষ মারা যায় তাদের দাফনের জন্য জমি না থাকলে তাদের এই কবরস্থানে দাফন দেওয়া যাবে।

জাহিদের গ্রামের বাড়ি মির্জাগঞ্জের দেউলিতে। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য নিজের প্রয়াত বাবার নামে ‘ইসমাইল সিকদার কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি। বাবার নামে গড়া ফাউন্ডেশন এবং ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক কাজ করে পেশার এবং বাইরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পেশাগত দক্ষতার জন্য বরিশাল জেলায় সাতবার সেরা এএসআই পুরস্কার পেয়েছেন জাহিদ। গ্রামের একটি স্কুলের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির যাদের রোল ১ম এবং ২য় তাদের স্কুলের বেতন ভাতা নিজেই পরিশোধ করেন তিনি। করোনাকালে নিজের কর্মস্থলের আশপাশের অনেকগুলো পরিবারকে সহায়তা করেছেন।

কবরস্থানে জমি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার বাবা একজন কেমিস্ট ছিলেন। ৩৫ বছর আগে তিনি মারা যান। তার দাফন করা হয়েছে ফেনী পলিটেকনিক্যাল কলেজের সামনে অন্যের জমিতে। আমাদের এবং এলাকার জন্য জীবিতবস্থায় অনেক কিছু করলেও বাবা কবরের জমিটিও এলাকায় পাননি। আমার চাচা ডা. ইসহাক শিকদারেরও স্বপ্ন ছিলো নিজেদের জমিতে একটা সবার জন্য উম্মুক্ত কবরস্থান করার। তিনিও মারা গেছেন। করোনার এই পরিস্থিতিতে আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এই জমি দিয়েছি।

তিনি বলেন, দুই একদিনের মধ্যে মাটি ভরাট করে কবর দেয়ার মতো অবস্থা তৈরি করতে চাই। যে কেউ সমস্যায় পড়লে আমাদের এখানে স্বজনদের দাফন করতে পারবেন।

জাহিদ আরো বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য' এ ব্রত নিয়ে কাজ করছি। মৃত্যুর পরে সঙ্গে মানুষের দোয়া আর দাফনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নিয়ে যেতে পারব না। তাই আমৃত্যু সাধ্যমত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/বিইউ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :