পথে পড়ে থাকার অসুস্থ মানুষের পাশে গোপালগঞ্জের সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৪৪

মানবিকতার টানে পথে-ঘাটে পড়ে থাকা অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন গোপালগঞ্জ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে যখন কেউ কারো নয়, তখন তিনিই যেন ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিপদে থাকা অসুস্থ, অজ্ঞাত, অসহায় মানুষের। তবে এই কাজে তার কোন অনীহা নেই, আতঙ্ক বা ভয়ও নেই। বরং এরকম কাজ করে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তাইতো তিনি সব সময় উদ্ধার কাজের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন।

গত মঙ্গলবার রাতে যখন ঘুমানোর জন্য সবাই ব্যস্ত, তখন তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর করপাড়ায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অপরিচিত অসুস্থ বৃদ্ধকে নিয়ে ছুটে যান গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। ওই বৃদ্ধকে তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান খানের সহায়তায় ভর্তি করে রাত ১টার দিকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। তার ফেসবুক আইডিতে এক আবেগ ঘন পোস্ট দেন। তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“মানুষ আজ সত্যিই অসহায়”

২৮ এপ্রিল। রাত তখন ৯ টা বাজে। আমার কাছে ফোন আসে, একজন সত্তোরোর্ধ অপরিচিত ব্যক্তি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর করপাড়ায় রাস্তার পাশে বমি করে পড়ে আছে। বাসা থেকে সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে বের হলাম, ওই লোকটিকে হয়তো আমারই উদ্ধার করতে হবে।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি স্থানীয় বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের দুজন এএসআই ও স্থানীয় কিছু যুবক লোকটাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। তাদের সিদ্ধান্ত যা করার আমাকেই করতে হবে। ফোন দিলাম সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আছাদুজ্জামানকে। তিনি কোন ব্যবস্থা নিলেন না। এরপর ফোন দিলাম গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিস্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ অসিত কুমার মল্লিককে। তিনি ফোন রিসিভ করলেন না। অবশেষে ফোন দিলাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদিকুর রহমান খানকে। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ফোন রিসিভ করে হাসপাতালে যোগাযোগ করলেন। হাসপাতালে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্তেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ফোনে সাড়া দিলেন না। আমি একটা ইজিবাইক যোগাড় করলাম। ওই অসুস্থ্য লোকটাকে তুললাম, রওনা হলাম। এরই মধ্যে সদর ইউএনও জানালেন, তিনি একটি ভাড়ার এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন। স্থানীয় করপাড়া উন্নয়ন সমিতির সভাপতি দীন ইসলাম মোল্লা জইন ও অন্যান্যদের সহায়তায় অসহায় লোকটাকে নিয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিস্ট জেনারেল হাসপাতালের দিকে রওনা হলাম।

হাসপাতালে পৌঁছে দেখি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাদের রিসিভ করতে দাড়িয়ে আছেন। জরুরী বিভাগে নিয়ে ভর্তি করলাম। এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ও প্রাথমিক ঔষধ কেনার জন্য ইউএনও সদর টাকা দিলেন। ততক্ষনে অসহায় লোকটির পরিচয় পেলাম, নাম আমিরুল বিশ্বাস, পিতা মৃত জরিপ বিশ্বাস, দুধসর, শৈলকুপা, ঝিনেদাহ। তিনি সত্যিই অসহায়, ভিক্ষে করেন। এলাকা ছাড়ছেন কয়েক মাস আগে। এলাকার লোকজন তার কোন হদিস পাচ্ছিলনা।

হাসপাতালে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স দেখলাম। কিন্তু তারা এই রোগীটিকে আনতে যায়নি। অভিযোগ সদর ইউএনও এবং আমারও, করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যথাযথ সাড়া মেলেনা। গেল কয়েকদিন আগে রাতের বেলা এক অজ্ঞাত অসহায় বৃদ্ধাকে রেসকিউ করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। সেই রাতেও সরকারি এ্যাম্বুলেন্স পাইনি।।

যাক অবশেষে রিক্সা, ইজিবাইকে করে রাত ১ টায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে ঘরে না গিয়ে পরিধেয় পোশাক পাল্টে গোসল সেরে পোশাক ধুয়ে, মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি স্যাভলন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার করে এরপরে বাসায় প্রবেশ।

ততক্ষনে অসহায় ওই লোকটির ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর পেলাম জইনের কাছ থেকে, কথা বললাম। তিনি লোকটাকে চেনেন, লোকটি সত্যিই অসহায়। আশাকরি চেয়ারম্যান গোপালগঞ্জ এসে তার ইউনিয়নের ওই বৃদ্ধকে নিয়ে যাবেন। হ্যা, এই কাজটি করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে। মনে হয়েছে করোনা যুদ্ধে আমিই বীর যোদ্ধা। করোনাকে ভয় নয়, সাহস দিয়ে জয় করুন। অসহায় মানুষের পাশে দাড়ান। ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন। ইনশাল্লাহ আমরা করোনা জয় করবো।

ফেসবুকে নজরুল ইসলামের এই পোস্ট দেখে ওই বৃদ্ধের ভাতিজা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জাহাঙ্গির বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসে তার চাচাকে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

এর আগেও নজরুল গত ৭ এপ্রিল রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী বাজারে রাস্তার পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা অজ্ঞাত এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। তাকেও গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করান। পরে ফেসবুকে পোস্ট দেখে তার মেয়ে জামাতা এসে হাসপাতাল থেকে যশোরের কেশবপুরে নিয়ে যায়। তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :