চিলমারীতে পরিবার নিয়ে সায়েদের মানবেতন জীবন

মমিনুল ইসলাম বাবু, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২০:০৮

রমনা বাঁধের নিচে আট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস হকার সায়েদ আলী। সারাদিন হকারি করে যা আয় হতো তা দিয়েই চলতো তার সংসার। কয়েকবার নদী ভাঙনের পর আশ্রয় নেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মাস্টার পাড়া এলাকায় পাউবোর বাঁধে। পানি উন্নয়নের বোর্ডের নোটিস ও উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে নিতে হয় থাকার এক মাত্র ঘরটি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে সায়েদ আলীর পরিবার।

কোনো জায়গা না থাকায় বাঁধের নিচে ছোট একটি ছাপরা ঘরে আটজন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। রোজগারের একমাত্র পথ ছিল তার হকারি। কিন্তু করোনার থাবার একমাত্র আয়ের অবলম্বন এখন বন্ধ। তার কাজ ছিল জনসমাগম করে ওষুধ বিক্রি করা। সারাদিন হকারি করে আয়ুর্বেধি ওষুধ বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা চালিয়ে যেত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন বন্ধ হয়েছে তার আয়ের উৎস।

একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সায়েদ আলী। নেই আয়, নেই জমানো টাকা। দিন কাটলেও রাতে ছোট একটি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সায়েদ আলীর ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রথম মেয়ে শাহিনুরের বিয়ে হলেও ঘরবাড়ি আর টাকা পয়সা না থাকায় উপযুক্ত বাকি ছেলে মেয়েদেরও বিয়ে দিতে পারছেন না। মেয়ে শাহনাজ মাস্টার্স পাশ করে ঘরে বসে আছেন । ছেলে সুমন এখন ডিগ্রি প্রথম বর্ষে। পঞ্চম সন্তান সুজনের তেমন পড়াশুনা না করলেও ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কিন্তু করোনার কারনে সেও চলে এসেছেন বাড়িতে। ছোট ছেলে সাগর সপ্তম শ্রেণিতে। মেয়ে নদী চতুর্থ ও দিঘি প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

চতুর্থ সন্তান সুমন মিয়া বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে সব ভেঙে নিতে হয়েছে। থাকার কোনো জায়গা না থাকায় বাঁধের পাশেই থাকতে হচ্ছে দিনে। তো রাস্তার উপর থাকেন। কিন্তু রাতে ১৩ হাত একটি ঘরে পরিবারের নয়জন সদস্যকে গাদাগাদি করে খুব কষ্টে থাকতে হচ্ছে।

সায়েদ আলীর স্ত্রী বেলেদা বেগম বলেন, অভাবী সংসার, স্বামীর আয়ের উপর ছিল ভরসা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে বড় বিপদে আছি। আবার বিয়ের উপযুক্ত মেয়েদের নিয়ে নির্জন একটি ভাঙা ঘরে খুব ভয়ে রাত কাটতে হচ্ছে।

হকার সায়েদ আলী বলেন, অভাবি সংসার। তার উপর এখন আয় রোজগার বন্ধ। নেই জায়গা জমি। থাকতে হচ্ছে বাঁধের নিচে বড় কষ্ট করে। তিনি বলেন, জায়গা না থাকায় বাঁধের সরকারি জমিতেই থাকছি। তা আবার পাশের জমির মালিক বারবার দিচ্ছে হুমকি। দেখাচ্ছেন ক্ষমতার দাপট।

সায়েদ আলীর ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সাহায্য। এ বিষয়ে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজগার আলী জানান, তাদের ভোট চিলমারী ইউনিয়নে। তবে একটি মেয়ের ভোট রমনা ইউনিয়নে। তবুও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

সায়েদ আলী কষ্টে আছেন জানিয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গওছল হক মন্ডল বলেন, তাকে ১০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এবং তাকে আরো সহযোগিতা করা হবে ।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্’র সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো মানুষ যেন সমস্যায় না পড়ে সেদিকে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :