সরিষাবাড়ী মেয়রকে কাউন্সিলরদের অনাস্থা

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২০, ২০:৫৭

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনকে অনাস্থা দিয়েছেন ১২ জন কাউন্সিলর। শুক্রবার দুপুরে সরিষাবাড়ী স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়।

এতে পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল রানাকে মেয়রের ক্যাডার বাহিনী মারধর করে বলে অভিযোগ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শ্রী কালা চাঁন পাল মেয়রের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাবটি পাঠ করেন। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী, প্যানেল মেয়র-২ জহুরুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চায়না বেগম প্রমুখ।

এসময় মেয়রের বিরুদ্ধে ত্রাণ, এডিপি, বাস টার্মিনাল বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারি, কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রের মহড়া, কাউন্সিলর, স্টাফদের মাসিক বেতন-ভাতা না দেয়া, কাউন্সিলর ও সাধারণ নাগরিকদের হয়রানিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়।

অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আসছেন। চলমান করোনাভাইরাসের ত্রাণ বরাদ্দ নিজের খেয়াল-খুশিমতো নামে মাত্র বিতরণ দেখিয়ে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ডেঙ্গু নিধন বরাদ্দের আট লাখ টাকা ও পৌর কবরস্থান উন্নয়নের সাড়ে চার লাখ টাকা পুরোটা হাতিয়ে নেন। ২০১৭-১৮ ও ১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব খাতে অর্জিত টাকা নামে-বেনামে খরচ করেন। উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতার চেয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিভিন্নস্থানে অনুমোদনহীন পার্ক নির্মাণ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা নষ্ট করেন মেয়র। বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে মেয়র নিজের ইচ্ছায় খরচ করেছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অধিকাংশ দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এবং নামেমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেই বাস্তবায়ন করেন।

এছাড়া আরো অভিযোগ করা হয়, মেয়র নিজের মাসিক সম্মানি নিয়মিত ভোগ করলেও পৌরসভার স্টাফ ও সকল কাউন্সিলদের বেতন-ভাতা ১৩-১৬ মাস ধরে বকেয়া রেখেছেন। মন্ত্রণালয়ে তথ্য গোপন করে নিজের ভাবিসহ জামাতপন্থী লোকদের নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন। ৮-১০ জন মাদকাসক্ত যুবককে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেখিয়ে মেয়রের ব্যক্তিগত ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করছেন।

কাউন্সিলর শ্রী কালা চাঁন পাল জানান, পৌরসভার কোনোকাজেই কাউন্সিলরদের মতামত নেয়া হয় না। মেয়র কার্যবিবরণী খাতায় কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অগ্রিম স্বাক্ষর আদায় করে পরবর্তীতে নিজের ইচ্ছামতো রেজুলেশন লেখেন। নিজের ইচ্ছামাফিক পৌর কর ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি করায় নাগরিকদের নাজেহাল করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না।

কাউন্সিলর সোহেল রানা অভিযোগ করেন, অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় ইতিপূর্বে তাকে পিস্তল উঁচিয়ে মেয়র হত্যা হুমকি দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীকে লেলিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তাকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে মেয়রের পালিত ক্যাডাররা তার উপর হামলা করে মারধরে করে। হাসপাতালে গিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।

প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী বলেন, মেয়রের লাইসেন্সকৃত পিস্তল বারবার অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের ডজনখানেক জিডি রয়েছে সরিষাবাড়ি থানায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদক, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

কাউন্সিলররা দ্রুত মেয়রের অপসারণ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মেয়র রুকুনুজ্জমান রোকনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :