রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারতীয় শ্রমিকদের রাস্তায় অবস্থান

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২০, ২০:৩৮

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ভারতীয় দুই শতাধিক শ্রমিক দেশে স্বজনদের কাছে ফিরতে চাইছে। সোমবার সকালে রামপাল উপজেলার সাপমারী-কৈগর্দশকাঠি এলাকায় প্রকল্পের শ্রমিকরা প্রধান ফটকের বাইরে বের হয়ে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে অবস্থান নেয়।

দুপুরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ এসব শ্রমিককে বুঝিয়ে প্রকল্প এলাকার ভেতরে নিয়ে যায়। বিকালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের উপ প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম ভারতীয় শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।

শ্রমিকরা সাংবাদিকদের বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছি। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা কেমন আছেন তা আমরা জানতে পারছি না। দিন যতো যাচ্ছে ততো আমরা ভয়ে আছি। এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ভালো নেই। পরিবারের কাছে দেশে ফিরতে এখানকার কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও তারা আমাদের ফেরার ব্যবস্থা করছে না। তাই আমরা সবাই দেশে ফিরতে প্রকল্প এলাকা দিয়ে বাইরে বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেই। পরে পুলিশ এসে আমাদের ভেতরে নিয়ে যায়। আমাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের প্রকল্প উপপরিচালক রেজাউল করিম সোমবার বিকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে ভারতের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। গত দুই বছর ধরে তারা এখানে কাজ করেন। মার্চে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতজুড়ে এখন লকডাউন চলছে। এই প্রকল্পের কর্মরত দেড় হাজার শ্রমিকের মধ্যে দেড় থেকে দুইশ শ্রমিক সম্প্রতি দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। পরিবারের সদস্যদের জন্য তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তাই তারা দেশে ফিরতে চান। তাদের ফেরার বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে আমরা কথা বলেছি। তারা উদ্যোগ না নিলে আমরা কিভাবে এই শ্রমিকদের দেশে ফিরাব তাই বোঝাতে পারছি না।

তিনি বলেন, ভারতীয় দূতাবাস চাইলে আমরা এদের দেশে ফেরত পাঠাবো। তারা আমাদের কথা না শুনে সোমবার সকালে ১৫০ থেকে ২০০ শ্রমিক প্রধান ফটক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের প্রকল্প এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। তাদের বোঝাতে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করছি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড যৌথভাবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ভারত সরকার যৌথভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী ও কৈগরদাশকাঠী এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে। ১৮৩৪ একর জমির উপর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৪মে/কেএম)