এলজিআরডি মন্ত্রীর মাথাব্যথার কারণ হবেন এবিপি প্রধান?

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২০, ১৫:৪৪ | আপডেট: ০৫ মে ২০২০, ১৬:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলামের মাথাব্যথার কারণ হবেন  আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবিপির প্রধান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। কারণ তাজুল ইসলামের নির্বাচনী আসন কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন সোলায়মান চৌধুরী। এবিপি প্রধান, তার শুভাকাক্সিক্ষ ও ঘনিষ্ঠরা মনে করেন বিএনপি বা বিএনপি জোটের সমর্থনও পাবেন তিনি।   
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সচিব থাকাকালে বা তার আগে থেকেই সরকারি চাকরিতে থাকতে সোলায়মান চৌধুরী যথেষ্ট আলোচিত ছিলেন। এলাকার অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ-সম্পর্ক ছিল। এখন নতুন দল গঠন করে, সেই দলের প্রধান হয়ে আবার আরেকভাবে তিনি আলোচনায় আছেন। আগে থেকেই তার পরিচিতি এবং এক ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলী আছে বলে মনে করা হয়। জয়নাল হাজারীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার সব মহলেরই প্রিয় পাত্র।  সেই কারণেও তাকে আমলে নেওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করেন তাজুল ইসলামের ঘনিষ্টরা। কীভাবে সোলায়মান চৌধুরী তার ঘুটি সাজাচ্ছেন বা আগামী নির্বাচনে তিনি কীভাবে লড়বেন এ ব্যাপারেও তার বড় পরিকল্পনা-কৌশল কাজ করবে বলে মনে করেন তারা।
তাজুল ইসলাম এমনিতেই সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় তার কাজের চাপ আছে। তিনি কিছুটা শারীরিকভাবে অসুস্থ। আগের মতো নির্বাচনী এলাকায় সময়ও দিতে পারেন না। তার ওপর নতুন রাজনৈতিক দলের তৎপরতা বাড়তি চিন্তা কারণ হয়েছে।
যদিও এই মুহূর্তে দেশে স্বাভাবিক রাজনীতি নেই। কিন্তু সোলায়মান চৌধুরী যেকোনো সময়, যেকোনো বিচারে আমলে নেওয়ার মতো একটি নাম। মাথা থেকে সেই ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছেন না তাজুল ইসলাম এবং তার ঘনিষ্ঠরা। অসময়ে সোলায়মান চৌধুরীর রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশটি এলজিআরডিমন্ত্রীর জন্য একটি মাথাব্যথার কারণ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এবিপি প্রধান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের আছে। এখন নির্বাচন কমিশনের আরপিও মেনে দলের নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছি। পরে প্রতীক চাইবো।’
সাবেক এই সচিব বলেন, ‘আমার দল যদি আমায় মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি অবশ্যই আগামীতে কুমিল্লা-৯ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবো। এ ব্যাপারে সবধরনের প্রস্তুতি আমার আছে। মনোহরগঞ্জ আমার জন্মস্থান। লাকসাম আমার প্রতিবেশী উপজেলা। এই দুই উপজেলার মানুষের সঙ্গে আমার অন্তরের নিবিড়বন্ধন আছে বলে মনে করি। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে আমি যাইনি। প্রতিটি গ্রামের নামও আমার অন্তরে গাঁথা আছে।’

তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে পাঁচবার নির্বাচন করেছেন। ৯৬ সালে নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যান। পরে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা জয় পান। প্রত্যেকবারই তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজীম। ওই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি আবুল কালাম ( চৈতী কালাম)।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সোলায়মান চৌধুরীর সঙ্গে চৈতী কালামের সম্পর্ক ভালো। এছাড়া বিএনপির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সোলায়মান চৌধুরীর রাজনৈতিক তৎপরতাকে এখনই গুরুত্ব দিতে চানান না। জানতে চাইলে লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান  ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনূস ভূঁইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সোয়ালমান চৌধুরী সুবিধাবাদী মানুষ। এই অঞ্চলের রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। আমরা তাকে নিয়ে চিন্তিত নই।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেও বিভেদ আছে। সোলায়মান চৌধুরীকে তারা মেনে নিবেন বলে আমার মনে হয় না।’
মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী মনে করেন, সোয়ালমান চৌধুরী এই বয়সে সংসদীয় নির্বাচনের রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারবেন না। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একসময় হয়তো তার (সোয়ালমান চৌধুরী) জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু রাজনীতির যে স্পিড এটা এখন তার মধ্যে নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য আমাদের এলজিআরডিমন্ত্রীর বিপরীতে কেউ শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারবেন বলে মনে হয় না।’  
(ঢাকাটাইমস/৫মে/এইচএফ)