কবিতা

মানুষ রে তুই মানুষ হবি কবে

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২০, ১৯:২৯

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

মানুষ রে তুই মানুষ হবি কবে!
কখন যে তোর চিত্তস্রোতে জাগবে চেতন  
চূর্ণ হবে অহমবোধের আত্মমেহন
মর্মপীড়ন জাগবে কখন অসাড় অনুভবে-
শোন রে মানুষ, বল দেখি তুই মানুষ হবি কবে!

মানুষ রে তুই কবে মানুষ হবি!
লোভের লাভায় কীটের মতো আর কতো সাঁতরাবি,
কত্তো ঢেউয়ের পাহাড় ভেঙ্গে কত্তো দূরে যাবি?
বিত্ত-ধনের মিথ্যে মোহে
আত্মগ্লানির গহন ব্যূহে
ভারবাহি এক পশুর মতো
ধনের ভারে গতর নত
বইবি গাঁটে তোড়ায় তোড়ায় মালগুদামের চাবি?
মানুষ রে তুই কবে মানুষ হবি!

মানুষ রে তুই কখন হবি মানুষ!
আর কতো ধন করলে জড়ো
খাজাঞ্চি তোর ভরবে নিরঙ্কুশ?
শিরদাঁড়া তোর ভাংছে দেখি ধনের ভারে,
তোর স্বজনের বদন মলিন অনাহারে-
তবু ধনের কাতরা খানিক ছাড়লি না তার খাতে,
একটা মুঠো অন্নদানা দিলি না তার পাতে!
ভোগের মাঝে সুখ পেলি আর ত্যাগে অন্তোষ
মানুষ রে তোর জন্ম থেকেই দোষ-
শকুন যেমন ভাগাড় পেলেই খোশ।

আর কতোটা বিত্তবলে
সব ক্ষমতার শীর্ষে যাবি শুনি,
আর কতোটা চড়লে চূড়ায়
ক্রোরপতির ধন মহড়ায়
পদক জয়ের মিলবে জয়ধ্বনি?

বিশ্বজুড়ে আসবে কখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
সে যাচ্ঞাতে কাতর আকুল মন,
বিদ্বেষে বিষ না ছড়িয়ে  
হিংসারোষে না জড়িয়ে
ছাড়বি কখন অর্থ-বিত্ত খ্যাতির আস্ফালন,
পরস্পরে করবি কখন উষ্ণ আলিঙ্গন?
মানুষ রে তুই শোন,
ফুটবে কখন তোর মাঝে এই কীর্তি বিলক্ষণ!

বোমা বারুদ বন্দুকে তুই হারিয়ে মড়ার রুচি,
ভেদাভেদের পাপ ঝেড়ে তুই কখন হবি শুচি?
শুভবোধের দীক্ষা নিয়ে মিলবি স্ববান্ধবে-
শোন রে মানুষ, বল দেখি তুই মানুষ হবি কবে!

বল দেখি তুই কোন সকালে নরোম রোদের সোনায়,
মনের সুখে বাইবি লাঙ্গল পরের স্বপ্ন বোনায়।
কোন দুপুরে তপ্ত রোদে চামড়া সেঁকে সেঁকে,
সবহারাদের সহায় হবি দৃপ্ত দৈবালোকে।
বস্তি মাঝে বাস্তু গড়ে যাদের মাথা গোঁজা,
কোন প্রহরে বইবি কাঁধে তাদের মাথার বোঁঝা?
মজুদ করা অন্নদানা যা আছে তোর গোলায়,
কখন সে ধন বিলিয়ে দিবি নি:স্ব জনের ঝোলায়?
সৃষ্টিকুলের সেরা হবার বোধটা কখন হবে -
শোন রে মানুষ, বল দেখি তুই মানুষ হবি কবে!

মানুষ রে তুই মানুষ হবি কবে!
সৃষ্টির আদি থেকে ভ্রূণের মনুর স্বরূপ এঁকে
সময় ঘড়ির কাঁটার টানে প্রাণীর জঠর থেকে
বিয়োয় বলে জীব জানোয়ার সব কী মানুষ হবে?
শোন রে মানুষ, বল দেখি তুই মানুষ হবি কবে!

মানুষ রে তুই কবে মানুষ হবি!
মর্মে মরা দু:খ শোকের
অশ্রুভরা উদাস চোখের
নি:স্ব মাঝে বিশ্বলোকের দেখবি প্রতিচ্ছবি!
মানুষ রে তুই কবে মানুষ হবি!

অন্ন ছেঁকে ফেন বিলিয়ে
সুগার কোটেড পিল গিলিয়ে
তিলের সাথে তাল মিলিয়ে
বঞ্চিতদের মন ভুলিয়ে
আর কতো তুই ঝুলিয়ে মূলো দাতার ভানে দায় সাড়াবি?
তাদের পাশে সখার মতো কখন যে তুই আর দাঁড়াবি?
কালের চাকা তাদের দিকে কখন যে তুই আর ঘুরাবি?
বোমা বারুদ বানিয়ে কেবল আর কতো তোর দায় বাড়াবি?
তাদের হাতে গুঁজবি কখন ধন ভাঁড়ারের চাবি?
বলতো দেখি মানুষ রে তুই কবে মানুষ হবি!

মানুষ রে তুই মানুষ হবি কবে!
কর্মগুনে তোর তো নিজের মানুষ হতেই হবে।
কাল কাটালে কুলিন কোঠায় কুটিল কলরবে
থাকলে মেতে মানুষ বধে পশুর মোহৎসবে-
মানুষ রে তুই মানুষ হবি কবে!

কর্মসূত্রে মানুষ হবার ধর্মে দীক্ষা লয়ে,
তবেই তো তুই মানুষ হবি মানুষ পরিচয়ে।
জন্মসূত্রে  মানুষ হবার ঘোর কাটাতে হবে-
নিজের বুকে তবেই পরের স্বপ্ন জেগে রবে।
পরের চাওয়া জাগলে নিজের নিত্য অনুভবে,
মানুষ রে তুই মানুষ হবি তবেই।