এই ২৫শে নতুন জন্মের ২৫শে...

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২০, ১১:৫৭ | আপডেট: ০৮ মে ২০২০, ১৪:৩২

অমর মিত্র, কথাসাহিত্যিক

১৯৭০-৭১ থেকে, কিংবা তারও আগে থেকে, কলেজে ভর্তি হলাম যবে, ১৯৬৮-তে, ২৫শের ভোরে আমরা বন্ধুরা ২ নম্বর বাসে চেপে ভোর ৪-৩০-- ৪-৪৫-এ রওনা হতাম রবীন্দ্র সদনের পথে। সামনের দিকে বসার জায়গা নিতে হবে। তারপর গান আর গান। শান্তিদেব ঘোষ, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত, কণিকা, সুচিত্রা, সুমিত্রা সেন, দ্বিজেন, সাগর সেন থেকে অতি নবীন গায়ক গায়িকারা।

মান্না দে এসে শুনিয়ে গেলেন, না চাহিলে যারে পাওয়া যায়। মেঘ ও রৌদ্র ছবিটির কথা মনে পড়ে গেল এই পঁচিশের ভোরে। হাঁসু বন্দ্যোপাধ্যায় আর কোন ছবি করেছিলেন মনে নেই। তো সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখতাম কবিতা পত্রিকা নিয়ে বসে আছেন কবিরা। কবিতা পাঠ চলছে এখানে ওখানে। কাউকেই তো চিনতাম না, কিন্তু কিনে আনতাম পত্রিকা। কেউ হয়ত চিনিয়ে দিল ওই যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাপদ রায়...।

এরপর বন্ধু বদল হলো। আমিও লিখি। আমাদেরও পত্রিকা আছে। আমরা যাই পত্রিকা নিয়ে। কবিতার কত রকম পত্রিকা। ২৫শে বৈশাখ নামেই একটি লম্বা চওড়া পত্রিকা বেরত শুধু কবিতা আর কবিতা নিয়ে। কতজনের সঙ্গে ওখানেই আলাপ। মনে পড়ে গেল কৃত্তিবাস রায়ের কথা। তরুণ বুদ্ধিদীপ্ত এক যুবক এসে আমার সঙ্গে আলাপ করল, আমি আপনার এই এই পড়েছি। প্রথম গল্পের বইটি পর্যন্ত।

এসব ৮০-র দশকের শুরুর কথা, কিংবা সত্তরের শেষের কথা। আর দেখিনি তাকে। খুব মনে পড়ে। কবি যোগব্রত, শিল্পী অসিত পাল, প্রশান্ত রায়, অজয় নাগ, পার্থপ্রতিম, নিশীথ ভড়, কতজনের নাম মনে আসছে, সকলে রবীন্দ্রসদনে। এঁরা সব বিখ্যাত কবি। এরপর যোগব্রত মারা যান। শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে এক আশ্চর্য এলিজি লিখেছিলেন।

বাঙালির জীবন থেকে সেই রবীন্দ্র সদনের ভোর হারিয়ে গেছে। জোড়াসাঁকো গিয়েছি অনেক ভোরে। সপরিবারে গিয়েছি। গান শুনেছি। ঠাকুর বাড়ি দেখেছি ঘুরে ঘুরে। কিন্তু ওই বেনিয়াপাড়া আমার পছন্দ হয়নি কোনোদিন। ঠাকুরবাড়ির ভিতরে গেলে অবশ্য সব বদল হয়ে যায়। আমার মনে পড়ে ওই বাড়ির ভিতরে এক রাজার বাড়ি আছে। একটি বালিকা এসে বলে যেত বালক রবিকে। আমি সেই রাজার বাড়ি খুঁজতে গিয়ে পাইনি কিন্তু রাস্তাটা দেখেছিলাম মনে হয়।

আচমকা সেই রাস্তাটা হারিয়ে যায়। বাঙালির সব চেয়ে বড় জোর তার কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস এবং রবীন্দ্রনাথের গান৷ এক এক জাতি এক এক বৈশিষ্ট্য নিয়েই তো জন্মায়। এই ২৫শে নতুন জন্মের ২৫শে। করোনার দিন পার হয়ে নতুন পৃথিবীর পথে পা রাখার ২৫শে। জয়হোক বিশ্বজুড়ে নিরূপায় মানুষের সৌহার্দ্যের। রবি ঠাকুর, রবীন্দ্র ঠাকুর, সমস্ত পৃথিবী আজ জানালার পাশে বসে আছে পথের দিকে তাকিয়ে।

সুধার জন্য। সুধা কখন আসবে? অমল তার জন্য বসে আছে যে। পিসেমশায় জানালা দরজা খুলে দাও। বাইরের বাতাস আসুক। হে নূতন, জাগিয়ে দাও অমলকে। রাজার চিঠি নিয়ে হরকরা আসছে ওই যে পাহাড়তলীর পথ দিয়ে। তার পায়ের শব্দ কি শুনতে পাচ্ছ না কবিরাজ?

লেখক: কথাসাহিত্যিক

ঢাকাটাইমস/৮মে/এসকেএস