সাংসদদের ভালোও আছে...

আরিফুর রহমান দোলন
| আপডেট : ০৯ মে ২০২০, ১৫:৩১ | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২০, ১৮:০১

আমাদের সংসদ সদস্যরা (এমপি/সাংসদ) কোথায়? তারা কি সক্রিয়, আধা সক্রিয় না কি নিষ্ক্রিয়? সাংসদরা কি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছেন? সবক্ষেত্রে দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেখা গেলেও দুর্দিনে সাংসদরা নেই কেন? এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে গণমাধ্যমে? এ নিয়ে কলাম লিখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। টেলিভিশনের টকশোতে মাঝেমধ্যেই পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। মোদ্দাকথা, সাংসদরা কী করছেন, কী করলেন এই আলোচনা বেশি মাত্রায় করছেন তারাই যারা সব সময় শুধুমাত্র আইন প্রণেতা হিসেবেই এতদিন সংশ্লিষ্টদের দেখতে চেয়েছেন।

সাংসদদের হঠাৎ করে অতি মানবিক হিসেবে দেখতে চাওয়া কতখানি যুক্তিসঙ্গত এ নিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠানোই যায়? কারণ সাংসদদের জাতির সামনে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে এমন বিষয়ে যেখানে তাদের অফিসিয়াল ভূমিকা রাখার সুযোগ গৌণ। তা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক সাংসদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা নিয়ে অব্যাহতভাবে দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রীসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের কাজ করছেন। অনেক সাংসদ সরকারি ছুটির ঘোষণার পর থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। অনেকে এখনো নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ অনেক কাজ তদারকি করছেন। ভুরি ভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে।

কিন্তু সাংসদদের সমালোচনায় মুখররা তাদের কী ভূমিকায় দেখতে চাচ্ছেন সেটিও পরিষ্কার না। সাংসদদের হঠাৎ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়ার প্রচারণা আসলে নতুন করে বিরাজনীতিকরণের কোনো প্রচেষ্টা, উদ্যোগের অংশ কি-না, সেটিও ভেবে দেখতে হবে। সাংসদরা ব্যর্থ এই তকমা তো রাজনীতি আর রাজনীতিকদের অপ্রয়োজনীয় করে দেখানোরই চেষ্টা। যেসব বিশ্লেষকরা এতদিন সাংসদদের দেখতে চেয়েছেন স্রেফ আইন প্রণেতা হিসেবে তারাই কেন এখন সবক্ষেত্রে সাংসদদের নাক গলানোকে যুক্তিসঙ্গত মনে করতে চাইছেন সেটি বোধগম্য হচ্ছে না।

আমাদের শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাংসদদের ভূমিকা কোথাও রাখা হয়নি। শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ আইনে কিছু ক্ষেত্রে সাংসদদের পরামর্শকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশে জেলা পরিষদের কিছু প্রকল্পে স্থানীয় সাংসদের মতামত নেওয়ার কথা বলা আছে। এছাড়া প্রজাতন্ত্রের কোন কাজে সাংসদদের সরাসরি ভূমিকা বা এখতিয়ার রাখার সুযোগ রাখা হয়নি। এ সত্ত্বেও সাংসদদের আরও ক্ষমতাহীন করার একটি মত দীর্ঘদিন ধরেই দিয়ে আসছেন সুশীল সমাজের একাংশ। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা আইন, বিধি বিধান দেখিয়ে সাংসদদের অনুরোধ পরামর্শ না শুনলে যেখানে কিছুই করার নেই সেই সাংসদদের দোষ ত্রুটি ধরতে উঠেপড়ে লাগার যথার্থ সময় কি এখন? সরকারের ভেতর থেকে যেমন সাংসদদের কোণঠাসা করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তেমনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের ভূমিকাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা আছে। বিষয়টি সরকারের ভেতর রাজনৈতিক শক্তির জন্য কতটা ইতিবাচক তা সময়ই বলবে।

নড়াইলের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তোজা করোনাকাণ্ডের শুরু থেকেই অতি সক্রিয়। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র করে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন। অসহায়, দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন দিনের পর দিন। কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের চোখে কি এই ভূমিকাকে অসামান্য মনে হয়েছে? ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিজ নির্বাচনী এলাকায় আছেন গত ২৬ মার্চ থেকেই। টানা এলাকায় অবস্থান করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদরের হাসপাতালগুলোতে ৫০০ চিকিৎসককে কয়েক সহস্রাধিক পিপিই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন আগে। এরপর ৩২ হাজারের বেশি পরিবারের বাড়িতে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় পাড়া মহল্লায় সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রাম্যমাণ বাজারের ব্যবস্থা করেছেন যুবলীগের মাধ্যমে। এসব মানবিক আর মহতী উদ্যোগ সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। যেসব রাজনৈতিক বিশ্লেষক গড়ে সাংসদদের ছিদ্রান্বেষে ব্যস্ত তাদের চোখে ইতিবাচক এই কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা কোথায়!

রাজধানী ঢাকা থেকে এই মুহূর্তে ভোলায় যাতায়াত কতটা দুরুহ সেটি একবার চিন্তা করেন তো! এই জটিল পরিস্থিতিতেও সেখানে ছুটে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তাঁর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে ৩০ হাজারেরও বেশি দরিদ্র পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে এবং এটি চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৯ এপ্রিল ভোলা সদর উপজেলা চত্বরে ত্রাণ বিতরণী কার্যক্রম উদ্বোধন করে তোফায়েল আহমেদ যে বক্তব্য দেন তা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। তিনি বলেন, অসহায় দরিদ্র মানুষের কোনো দল নেই। দলীয় চিন্তা করে কেউ যেন খাদ্য সহায়তা বণ্টন না করে। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। সাংসদের এই ভূমিকাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেটিও জানতে ইচ্ছে করে। ভোলার অপর তিন সাংসদ আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নুরন্নবী চৌধুরী শাওন ও আলী আজম মুকুলও কিন্তু খাদ্য সহায়তা দেওয়ায় ক্ষেত্রে একদম ফ্রন্টলাইনে। প্রতিদিনই তাদের উপস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কাজ চলছে।

একইভাবে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, কাউখালী উপজেলায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের করোনা সংকটের শুরু থেকেই নিজ নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় ১৩ মেট্টিক টন করে মোট ২৬ মেট্টিক টন চাল এবং ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ওবায়দুল কাদেও ২২শ পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে তার নির্বাচনী এলাকায় চিকিৎসকদের পিপিই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ ১০ সহস্রাধিক গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।

সাংসদদের এই জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে আমি অতি মানবীয় বলবো। কারণ এসব কর্মকাণ্ড তাঁরা করছেন সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে। রাষ্ট্রীয় ভান্ডার থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সেখানে সাংসদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকারের অধীন জনপ্রতিনিধিরা এসব বণ্টনের দায়িত্বে। আর জেলার ত্রাণ বিতরণ কর্মকাণ্ড সামগ্রিকভাবে সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। কোথাও কোনো পর্যায়ে সাংসদের সরকারি কোন ভূমিকায় রাখা হয়নি। সুকৌশলে সাংসদদের এভাবে আড়ালে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণকে যথার্থ মনে হতো। সরকারিভাবে কোনো দায়িত্ব না পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সাংসদদের যে ভূমিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান তাকে ছোট করা ঠিক হবে না। দু’চারজন যদি নিশ্চুপ থাকেন বা অতিমাত্রায় সক্রিয় হতে না পারেন সেটি হয়তো তার ব্যক্তিগত অপারগতা। কিন্তু এটি তো সামগ্রিক চিত্র নয় মোটেও।

আরো কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক।

করোনা সংকটের শুরু থেকেই নিজ নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরের শিবচরের প্রতিটি প্রান্তে নিজের শতভাগ কমিটমেন্টের নজির রেখেছেন চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন। এলাকার পাঁচশত স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে তার উদ্যোগে। উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে তালিকা করে চিফ হুইপ ৩০ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। এমনকি এলাকার বিত্তবান দলীয় নেতাদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন যারা তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আরও ১০ হাজার দরিদ্রকে খাবার পৌঁছে দেন। চিফ হুইপ শুরু থেকে যে কাজটি করেছেন তাহলো ইতালি ও অন্য দেশ ফেরতদের পুরো পরিবারকে হোম কোয়ারিন্টেইন নিশ্চিত করা এবং তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। যা স্থানীয়দের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

একইভাবে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২১ হাজার ৭৩১ জন দরিদ্রের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এলাকার চিকিৎসকদের পিপিই দিয়েছেন, ২৫৭ সেট হাইজেনিক স্প্রে কিট, তিন হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ১০ হাজার সাবান বিতরণ করেছেন। প্রতিনিয়ত এলাকায় যাচ্ছেন এই সাংসদ। মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। সরকারি ত্রাণ বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর তদারকিতে রেখেছেন।

সাংসদরা সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি। এজন্যই তারা সবসময় সব মহলের মনোযোগের শীর্ষে থাকেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই জনপ্রতিনিধিরা নেতিবাচক কিছু করলে নিশ্চয়ই আমরা সেসব কাজের সমালোচনা করবো। কিন্তু তারা যদি ভালো কাজ করেন তাহলে প্রশংসা কেনো করবো না! কিছু সমালোচক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক যদি একচোখা নীতি নিয়ে চলেন তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু যেখানে সাংসদরা প্রাসঙ্গিকই নন সেসব বিষয়েও সমালোচনার তীর তাদের দিকেই। এটিই অবাক করার মতো বিষয়। সরকারি ত্রাণ বণ্টন কর্মকাণ্ড আমাদের আর দশটা মানুষের মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া সাংসদের কিন্তু কিছু করার নেই। কিন্তু এজন্য মোটেও বসে নেই অধিকাংশ সাংসদ। তারা এলাকায় ছুটছেন প্রতিনিয়ত, অনেকে এলাকায় অবস্থান করছেন আর নিরন্তর মানুষের খোঁজ খবর করছেন। বিচ্ছিন্নভাবে দু’চারজন হয়তো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অথচ সামগ্রিকভাবে টার্গেট এই সাংসদরাই। বিস্ময়কর!

আসলে যত দোষ নন্দ ঘোষ। আমাদের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই দায়িত্বে কাক্সিক্ষত সাফল্য পাচ্ছেন না। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি অনেকের মধ্যে দায়সাড়া গোছের একটি মনোভাবও আছে। নিজের কাজটি তারা গুছিয়ে ঠিকমতো করতে পারছেন না। তাদের এই ব্যর্থতা নিয়ে আমরা কথা বলছি এবং বলতেই থাকবো। কিন্তু মন্ত্রী পদধারী কোন সাংসদ যদি ইতিবাচক কাজ করেন? আমি মনে করি সেই কাজগুলোও আমাদের প্রশংসা করা উচিত। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজস্ব অর্থায়নে রূপগঞ্জে করোনা টেস্টিং ল্যাব করেছেন। পাশাপাশি কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন। মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে আছেন নিরন্তর। শুধু দরিদ্র মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়াই নয়- সংবাদকর্মী, অন্যান্য পেশাজীবীদের প্রতিও সমান নজর রাখছেন করোনা সৃষ্ট সংকটের শুরু থেকেই। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দুঃস্থদের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন নিজেই। পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যতদিন বেঁচে আছেন সরিষাবাড়ীতে কাউকে না খেয়ে থাকতে দেবেন না।

মানুষের জন্য এই যে অঙ্গীকার, এই যে পাশে থাকার দৃপ্ত প্রত্যয় এটা কি অর্থহীন? মোটেও না। বরং এই অঙ্গীকারই প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয়। জামালপুরের মেলান্দহ মাদারগঞ্জ থেকে ছয়বার নির্বাচিত সাংসদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, হুইপ মির্জা আজম করোনাকাণ্ডে সরকারি ছুটির পর থেকে পড়ে রয়েছেন এলাকায়। খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে আছেন মানুষের পাশে। মানিকগঞ্জের ঘিওর, শিবালয়, দৌলতপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয় এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন প্রতিনিয়ত। সাধারণ মানুষসহ খেলোয়াড়, সংবাদকর্মী, পেশাজীবীদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের সহযোগিতা করছেন নিরন্তরভাবে। করোনাকাণ্ডে এইভাবে নিজ নিজ এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক অসামান্য কাজ করছেন নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসনের নিক্সন চৌধুরী, বাগেরহাট সদরের শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ফেনী সদরের নিজাম হাজারী, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, কুষ্টিয়া সদরের মাহবুবউল আলম হানিফ, রাজশাহীর বাঘা চরঘাটের শাহরিয়ার আলম, ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের সালমান এফ রহমান, মাদারীপুরের শাজাহান খান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুরে বোচাগঞ্জ-বিরলের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাংসদ মুজিবুল হক, বাগেরহাটের ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারির সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনার সদর-সোনাডাঙ্গা আসনের সাংসদ শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনার রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়ার সাংসদ সালাম মুর্শেদী, সাতক্ষীরার জগলুল হায়দার, গাজীপুরের শ্রীপুরের ইকবাল হোসেন সবুজসহ অনেক সাংসদ। যদি শতাংশের হিসাব করি তাহলে হয়তো অন্তত ৬০ শতাংশ সাংসদ চেষ্টা করছেন নানাভাবে এলাকার মানুষের পাশে থাকার।

এখন প্রশ্ন হলো, সাংসদদের শক্তি আসলে কী? একদিকে নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও জনগণের আস্থা এবং সরকারের ভেতর যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি তার পুরোপুরি সমর্থন আর সহযোগিতা। এই মুহূর্তে সাংসদদের সেই সমর্থন আর সহযোগিতা করা হচ্ছে কি? না, হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না সেটি লাখ টাকার প্রশ্ন। কিন্তু যেভাবে সাংসদ এবং রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের ব্যর্থ তকমা সেটে দেওয়া হচ্ছে সেটি মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং সাপ্তাহিক এই সময়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা