খাদ্যের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, ইউএনওর গাড়িতে হামলা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২০, ১৮:০২

কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ি চৌরাস্তায় খাদ্যের দাবিতে গাছের গুঁড়ি ফেলে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভে তিন থেকে চার শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে। এসময় রাস্তার দু’পাশে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য জানতে দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সদরের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ময়নুল ইসলাম ও কাঁঠালবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল ঘটনাস্থলে যান। এসময় কথোপকথনের এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর চড়াও হয়। পুলিশ তাদের গাড়িতে সরিয়ে নিলে গাড়ির উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে ইউএনও’র গাড়ির পেছন অংশ ভাঙচুর হয়। সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য মর্জিনা বেগম ও বিক্ষোভকারী মমিন, বেলাল ও আনোয়ার অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪/৫ দফা তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তারা কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি। এ কারণেই তারা ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তারা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলেন। কোন বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান তাদের সাথে অসদাচরণ করেন।

কাঁঠালবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি দুষ্ট চক্র সরকারকে বিব্রত করতে এ বিক্ষোভ নাটক সাজিয়েছে। এর নেপথ্যে সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য মর্জিনা বেগম ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু জড়িত রয়েছে। ইউএনও এবং আমার উপর হামলার নেতৃত্বদানকারী বাঁধন, আতাউর, দুলালসহ অন্যরা উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডার। ইউএনও’র উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী মোটর শ্রমিক বিপ্লব ও চাঁদ এবং শ্রমজীবী সাবলু ও এনামুল স্বীকার করেন ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। তারপরও কেন বিক্ষোভে অংশ নিল তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পরিকল্পিতভাবে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ইউএনও’র সামনে প্রমাণিত হওয়ায় আন্দোলনকারী অপর একটি গ্রুপ আকস্মিকভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়। অথচ কিছু সময় পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আন্দোলকারীদের সাথে তার সখ্য দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরো জানান, প্রকৃত পক্ষে ১৩৬১ জন দুস্থ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া যারা ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ান না তেমন ৪০০ প্যাকেট খাদ্য বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রেশন কার্ড (প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি চাল) দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৪১ জনকে। এর বাইরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিশেষ অর্থ সহায়তার আওতায় কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ জনকে। এর বাইরেও কেউ বাদ পড়লে তাদের বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সহযোগিতা করা হবে।

কুড়িগ্রাম সদরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম জানান, অবরোধের বিষয়টি জানার পর জনগণের সাথে কথা বলতে গেলে আমার উপর চড়াও হয়ে গাড়িতে হামলা করে। এতে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙে যায়।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি অবহিত হবার পর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বারবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ করলেও বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। পরে দুপুর পৌন ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছি। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৭/৮ জনকে শনাক্ত করেন, যারা ইতোমধ্যে ত্রাণ পেয়েছেন। এই কথোপকথনের এক পর্যায়ে পেছন থেকে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ আমাদের উপর চড়াও হয়। পুলিশ কর্ডনে আমরা গাড়িতে উঠলে তারা গাড়ির সামনে গাছের গুঁড়ি ফেলে দেয়। এ সময় পেছন থেকে গাড়ির উপর ইট-পাটকেল ছুঁড়লে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙে যায়। যেহেতু সরকারি কাজে বাঁধা ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করেছে, এজন্য একটি মামলার প্রস্ততি চলছে।

সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টেও ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত মামলা হয়নি। ইউএনও যেভাবে সহযোগিতা চাইবেন। পুলিশ সেভাবে সহযোগিতা করবে। বর্তমানে ওই এলাকা শান্ত রয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ঘটনাস্থল আমার বাড়ির এলাকা। প্রশাসনের অনুরোধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমি দুপুর একটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও আমি ইতোপূর্বে ছিলাম। তাই আমার প্রতি এলাকার মানুয়ের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই আমাকে দেখে তারা শান্ত ছিল। পরে আমার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমার বিরুদ্ধে এ সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ। প্রকৃতপক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলালের প্রতি এলাকার মানুষের আস্থা-বিশ্বাস কোনটিই নেই। সে তার পরিষদের সাথে এমনকি উপজেলা পরিষদের সাথে কোন সমন্বয় করে না। ফলে ত্রাণবঞ্চিত মানুষ খাদ্যের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। বিক্ষোভকারীরা তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্চাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছে। শুধু সমন্বয় করলেই কোন মানুষ বঞ্চিত হত না। কারণ এই ইউনিয়নে বাড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারমান জাফর আলী (সাবেক সাংসদ)। তিনি রেদওয়ানুল হক দুলালের বাবা। আর এছাড়া আমি তো ছিলামই। মূলত সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক ফায়দা লোটাতে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৯মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :