নির্জন বাগান থেকে নিয়ে প্রতিবন্ধী নারীকে পুনর্বাসন

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২০, ০০:০৪

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাগেরহাটে নির্জন সুপারি বাগানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা এক বাক প্রতিবন্ধীকে নাম-পরিচয় দিয়ে পুনর্বাসন করেছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন নাম-পরিচয়হীন বাক প্রতিবন্ধী নারীকে অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে তার সব খরচের। এই অসহায় নারীকে শাড়ি কাপড়, খাবারসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে তার নতুন ঠিকানায় তুলে দিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ।

সম্প্রতি এই নারীকে বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। তার জন্মনিবন্ধনে নাম রাখা হয়েছে মরিয়ম বেগম। তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলের নাম রাখা হয়েছে আব্দুল্লাহ মিয়া।

তিন বছর ধরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের বারাকপুর গ্রামের শহীদুল শেখের মালিকানাধীন নির্জন সুপারি বাগানে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে খুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছিলেন এই নারী। আশেপাশের মানুষজনও তাকে সাহায্যের হাত বাড়ান। এভাবেই চলছিল চাল চুলাহীন বাক প্রতিবন্ধী নারীর যাযাবর জীবন।

বাগান মালিক শহীদুল শেখ এই প্রতিবেদককে বলেন, তিন বছর আগে বাক প্রতিবন্ধী ত্রিশোর্ধ্ব অচেনা এক নারী বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বারাকপুরের অজপাড়াগাঁয় দুধের একটি শিশুকে কোলে নিয়ে এসে ঘোরাঘুরি শুরু করে। দিনের বেলা এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে। আর রাত হলেই সুপারি বাগানে ভয়ডরকে উপেক্ষা করে রাত্রিযাপন করতে থাকে। হঠাৎ একদিন সকালে দেখি আমার বাগানে কোন রকমে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে কোলে শিশু নিয়ে শুয়ে আছে। কথা বলতে না পারায় তার বাড়িঘর কোথায় তা জানা হয়নি। দিনের বেলায় শিশুটিকে কোলে নিয়ে আশেপাশের গ্রামে ঘোরাঘুরি করে। কেউ খাবার দিলে তা খেয়েই চলে তার সংসার। আবার মাঝে মধ্যে নিজে রান্না করেই খান। তিন বছর ধরেই তিনি এখানে বসবাস করছেন।

বাগেরহাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী অধিকার কর্মী রিজিয়া পারভীন এই প্রতিবেদককে বলেন,  আমাদের সমাজে এই আব্দুল্লাহদের মতো অনেক সন্তান আছে যারা পিতৃ পরিচয়হীন রাস্তায় পড়ে থাকে। এদের পাশে কেউ এসে দাঁড়ায় না। এই পিতৃ পরিচয়হীন  আব্দুল্লাহরও ওদের মতো জীবন হতে যাচ্ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় এই অসহায় প্রতিবন্ধী  নারীকে একটি ঘর দেয়া হয়েছে। এখন তার একটি স্থায়ী ঠিকানা হলো। এখন শিশুটি লেখাপড়া শিখবে, অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে, মানুষ হবে- এমনটা আশা এই অধিকারকর্মীর।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শংকর কুমার চক্রবর্তী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার এই ইউনিয়নে অসহায় এই নারীকে পূনর্বাসন ও নাগরিকত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত। একজন অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলাম।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিল্লুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবন্ধী এক নারী সুপারি বাগানে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করছেন তা আমি জানতি পারি পাশ্ববর্তী রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে। রামপাল থেকে ওই পথ দিয়ে বাগেরহাট আসা যাওয়া করার কারণে তিনি ওই নারীকে দেখতে পান। এই অসহায় নারীর জন্য কিছু করার পরামর্শ দিলে আমি সেখানে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে একটি ছোট্ট শিশুকেও দেখি।

ইউএনও বলেন, এই নারী কোথা থেকে এসেছে তার স্বামীকে বা শিশুটির বাবা কে তা স্থানীয়রা কেউ বলতে পারেনি।  শিশুটি পিতৃ পরিচয়হীন। এই অসহায় নারীকে চাপাতলা গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার ও তার ছেলের নামকরন করে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এখন থেকে তাদের একটা পরিচয় হলো।

তিনি বলেন, তাদের দেখাশুনা করার জন্য একজন লোকাল অভিভাবক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। তার সংসারের খরচ, চিকিৎসা, ছেলে স্কুলসহ সব প্রশাসন দেখবে। এছাড়া এলাকার বিত্তবানরাও এই অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পিতৃহীন এই ছেলেটি যেন লেখাপড়া শিখে সুনাগরিক হতে পারে সেই চেষ্টাও আমাদের থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/কেএম)