ভারতে নিষিদ্ধ যে ছবিগুলো বিদেশে প্রশংসিত

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২০, ০৯:৩০

বিনোদন ডেস্ক

বলিউড মানেই ম্যাগনাম ওপাস। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে নতুন নতুন ছবির মুক্তি। বলিউড ছাড়াও গোটা ভারতের নানা অঞ্চলে যে প্রতি সপ্তাহে কত ছবি মুক্তি পায় তার ইয়াত্তা নেই। তার কোনোটা হয় সুপারডুপার হিট। কোনোটা আবার মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই বক্স অফিস মুখ থুবড়ে পড়ে।

তবে ভারতে প্রতি বছর এমন অনেক ছবিও মুক্তি পায়, যেগুলোকে সেন্সর বোর্ডের চোখরাঙানি সহ্য করতে হয়। আবার এমন অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলোকে পুরোপুরি ব্যানড করে দেয়া হয়। সেই ছবিগুলোই আবার বিদেশে গিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এমনই কিছু ছবির নাম জেনে নেয়া যাক, যেগুলো ভারতে নিষিদ্ধ অথচ বিদেশের মাটিতে অত্যন্ত সফল।

আনফ্রিডম (Unfreedom): একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, আর তা মূলত একটা সন্ত্রাসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে, এই বিশেষ কারণেই ভারতে ব্যান করে দেয়া হয়েছিল ‘আনফ্রিডম' (Unfreedom 2019) ছবিটি। LGBTQ সম্প্রদায়ের জীবন ফুটে উঠেছিল সেখানে। রাজ অমিত কুমার পরিচালিত এবং প্রযোজিত এই ছবিটি ভারতে কখনো মুক্তি পায়নি।

তবে ২০১৪ সালে ‘কেরল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে’ দেখানো হয়েছিল ‘আনফ্রিডম’। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, আদিল হুসেনের মতো জাঁদরেল অভিনেতারা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ২০১৫ সালে ভারত বাদে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। বেশ মোটা অংকের ব্যবসাও করেছিল। এখন ইউটিউবে চাইলেই আপনি দেখে নিতে পারেন ‘আনফ্রিডম’।

গুলাবী আয়না বা দ্য পিংক মিরর (The Pink Mirror): জেন্ডার ইস্যু ভারতে সবসময়ই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। তা নিয়ে যখন ছবি তৈরি হয়েছে বিতর্ক তো হবেই। ২০০৩ সালে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘দ্য পিংক মিরর’। অশ্লীল দৃশ্য রয়েছে বলে ভারতে ব্যান করে দেয়া হয়েছিল এই ছবি। পরে বিশ্ব দরবারে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। শ্রীধর রঙ্গায়নের এই ছবিতে বলিউডের এক ফ্যাশন ডিজাইনার এবং এক ডান্সারের প্রেম কাহিনি ফুটে উঠেছিল।

গান্ডু (Gandu Film): কলকাতার গল্প। এক ক্রুদ্ধ কমবয়সী র‌্যাপার গান্ডুর স্বপ্ন সফল করার কাহিনি। সঙ্গে তাঁর দোসর রিক্সার রোজনামচা। ছবিতে ন্যুডিটি, গালিগালাজ, ড্রাগের নেশা ইত্যাদির কারণে কখনো মুক্তি পায়নি ভারতে। তবে কৌশিক মুখোপাধ্যায়ের এই ছবি ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কে ‘সাউথ এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রিমিয়ার হয়েছিল। পরের বছরই ‘বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব’ এবং ‘স্লামডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এও মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটি একসময়ে ইন্টারনেটে লিক হয়ে যায়। বিপুল পরিমাণে মানুষ দেখে। বিদেশে ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছিল অনুব্রত বসু, জয়রাজ ভট্টাচার্য, রি সেন, কমলিকা, শিলাজিৎ অভিনীত ‘গান্ডু’।

ডেজড ইন দুন (Dazed In Doon): দুন স্কুল ভারতের নামজাদা স্কুলগুলোর একটি। সেই স্কুল আর স্কুল পড়ুয়াদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘ডেজড ইন দুন’ (Dazed In Doon 2010)। ছাত্রদের অত্যধিক পরিমাণে ড্রাগের নেশা এবং ন্যুডিটি দেখানো হয়েছিল এই ছবিতে। সেই কারণেই ব্যান করে দেয়া হয়েছিল ছবিটি। কারণে হিসেবে বলা হয়েছিল, অত্যন্ত নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খুবই খারাপ নজরে দেখানো হয়েছে। অশ্বিন কুমার পরিচালিত এই ছবি পরে বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।

পাঁচ (Paanch): অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি ‘পাঁচ’ (Paanch 2003)। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে এক্কেবারে ঘরোয়া আড্ডাতে হালকা গালমন্দ করে যেভাবে কথা বলা হয়, সেই অত্যন্ত সাবলীল ছন্দই ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে। ‘পাঁচ’ ছবিটির মূল বিষয়বস্তু ছিল ড্রাগের নেশায় একটা উঠতি ব্যান্ডদল কীভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যায়। তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে গালিগালাজ, যৌনতার মতো বিষয়ও দেখানো হয়েছিল।

এসব কারণে অনুরাগের ‘পাঁচ’ ভারতে মুক্তি পায়নি। কে কে মেনন, বিজয় মৌর্য্য, তেজস্বিনী কোলাপুরের মতো অভিনেতারা এই ছবিতে ছিলেন। ‘ফিল্মফেস্ট হ্যামবার্গ’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ লস অ্যাঞ্জেলস’-এর মতো নানাবিধ চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল এই ছবি। সমালোচকদের বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছিল ‘পাঁচ’।

ইনশাল্লাহ ফুটবল (Inshallah Football):  অশ্বিন কুমার পরিচালিত তথ্যচিত্র ইনশাল্লাহ ফুটবল (Inshallah Football 2010) ছবিটি গুটিকয়েক চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়া ভারতে কখনো মুক্তি পায়নি। উঠতি এক ফুটবলার বিদেশে গিয়ে ফুটবল নিয়ে আরও অনেক কিছু করতে চায়, স্বপ্ন দেখে দিনেদুপুরে। কিন্তু ছেলেটির বাবা ১৯৯০ সালের একজন জঙ্গি। বাবার এহেন কার্যকলাপের কারণেই ছেলেকে বিদেশ যাত্রায় বাধা দেয়া হয়। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল কাশ্মীরে। সামাজিক বিষয়ে নির্মিত এই ছবি জাতীয় পুরস্কারও জিতে নিয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/১৩মে/এএইচ