দুঃসময়ে এফসিপিএস পরীক্ষার সার্কুলার, চিকিৎসকদের অসন্তোষ

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২০, ১০:৪০ | আপডেট: ১৪ মে ২০২০, ১৩:০৬

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যস্ততা আর মানসিক চাপের মধ্যে এফসিপিএস পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএসের অধীনে এই রেজিস্ট্রেশন ৩১ মে পর্যন্ত চলার কথা বলা হয়েছে। তবে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী চাকরিরত চিকিৎসকরা করোনা সংকটের মধ্যে এই পরীক্ষা কার‌্যক্রম বন্ধের দাবি করছেন।

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কমবেশি চিকিৎসকই রোগীদের সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকশ আর মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের।

এই অবস্থার মধ্যে জুলাই ২০২০ সেশনের এফসিপিএস পরীক্ষার অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে বিসিপিএস। তবে করোনার চিকিৎসা দেওয়ার কারণে মানসিক অবস্থা সুস্থির ও পড়াশোনা করার মতো সুযোগ না থাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এমবিবিএস পাশ করার পরে চিকিৎসকরা তাদের চাকরিকালীন অবস্থায়ই নিজ নিজ পছন্দমতো বিষয়ের ওপর বিভিন্ন মেয়াদের প্রশিক্ষণ শেষে এফসিপিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন।

চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর এই শিক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে বিসিপিএস। দেশি বিদেশি পরীক্ষকের সমন্বয়ে বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা শেষে মানদণ্ডের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের পর পরীক্ষায় পাস করলে চিকিৎসকরা এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, এই মুহুর্তে করোনার চিকিৎসায় তারা সবাই ব্যস্ত। অনেক হাসপাতাল চিকিৎসকদের বেতন ভাতাও ঠিকমতো দিচ্ছে না। করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলায় দায়িত্বও বেড়ে চলছে। পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত। তাই পরিস্থিতি ভালো হলেই এই পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা উচিত।

বিসিপিএসের সার্কুলারটি জারির পর চিকিৎসকদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘আমরা কি উল্টো পথে হাঁটছি? এই মুহুর্তে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ শিক্ষা নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া? সবাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার সুযোগের জন্যই পড়ছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেই চিকিৎসকরা যখন মহামারি মোকাবেলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছে সেই মূহুর্তে এসব পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ইতোমধ্যে দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে।’

করোনা রোগীদের নিয়ে মানসিক চাপে থাকা চিকিৎসকরা এফসিপিএস পরীক্ষার সিদ্ধান্তের খবরে আরো বেশি মানসিক চাপে পড়েছেন এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা শাস্ত্রের সকল উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে (রয়েল কলেজসহ) যখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা (FRCS, MRCS, MRCP) পিছিয়ে দিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক চাপ কমানো হচ্ছে, আমরা সেখানে যথাসময়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষার (FCPS) সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে তাদের দ্বিগুণ চাপে ফেলছি।

পরীক্ষা নিয়ে চিকিৎসকদের ক্ষোভের বিষয়টি বিসিপিএসের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানার পর করণীয় ঠিক করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিপিএসের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তো দেশের বাইরের কেউ না। বাস্তবতা বুঝেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সার্কুলার আরো আগে দেয়ার কথা ছিলো, আমরা মাত্র (১১ মে) দিয়েছি।’

‘এটা নিয়ে চিকিৎসকদের ক্ষোভের কথা শুনছি। এটা সমাধান করার মতো। প্রয়োজন হলে পরীক্ষা আপাতত হবে না। দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয় তাই রেখেছি।’

তবে করোনা মরামারীর মধ্যেও এই সার্কুলার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ফায়জুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে কী এফসিপিএস পরীক্ষা এতটাই জরুরী? করোনায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষ মরছে। ঘর থেকে বের হতে পারছে না কেউ।’

‘উঠতি ডাক্তাররা কেভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠছে। চিকিৎসা দিচ্ছে আর কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছে। আবার চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে; আইসোলেশনে যাচ্ছে। ঘুম নাই, নাওয়া-খাওয়া ঠিক নাই, কীসের পড়ালেখা, কীসের পরীক্ষা? দেশের এই অবস্থায় এই পরীক্ষাটি এখন নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’

এসব বিষয়ে নিয়ে বিসিপিএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

তবে বিসিপিএসের অনারারি সচিব অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তরুণ চিকিৎসকদের ক্ষোভের কথা জেনেছি। বিষয়টি আমরাও ভাবছি। প্রস্তুতি হিসেবে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কারণ ‍হুট করে এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি আগ্রহী চিকিৎসকদের যাতে সমস্যা না হয় পরীক্ষায় অংশ নিতে যেজন্য করণীয় ঠিক করতে।’

বিসিপিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাই সেশনের এফসিপিএস ১ম পর্ব, প্রিলিমিনারি এফসিপিএস ২য় পর্ব, এফসিপিএস ২য় পর্ব (ফাইনাল), এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) ও এমসিপিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন নিয়মানুযায়ী ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিলো।

কিন্তু দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তা যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এটাকে পিছিয়ে ১১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।

বিসিপিএস সূত্র মতে, নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাদের সনদ তুলতে পারেননি তারা যাতে ইন্টার্ন করার কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার সমস্যা দূর করতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হতে পারে।

আর পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে জুনের ১৫ তারিখ পর‌্যন্ত করোনা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরীক্ষা স্থগিত করে সামনের সেশনে নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/বিইউ/ডিএম)