চীন থেকে আসছে পদ্মা সেতুর শেষ চালান

আরাফাত রায়হান সাকিব, মুন্সীগঞ্জ
| আপডেট : ১৪ মে ২০২০, ২৩:১৪ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২০, ২৩:১০

সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। এর ধারাবাহিকতায় অনেকটা শেষের দিকে এগুচ্ছে সেতুর নির্মাণ কাজ। করোনা পরিস্থিতির কারণে চীনে প্রায় ২ মাসের মত পদ্মা সেতুরে স্প্যানের মালামাল তৈরির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ও উৎপাদন শেষে এবার চীন থেকে আসছে পদ্মা সেতুর স্প্যানের অর্থাৎ মূল সেতু তৈরির প্রয়োজনীয় মালামালের সর্বশেষ চালান। চীনের শিনহোয়াংদাও বন্দর হতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সেতুর অবশিষ্ট মালামাল বহনকারী জাহাজ ‘এমভি কং সিউ সং’। আন্তর্জাতিক কসকো শিপিং লাইন সেতুর সর্বশেষ মালামাল পরিবহণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। এ মালামাল বাংলাদেশে পৌঁছালে সেতুর সকল মালামাল বাংলাদেশে আনা শেষ হবে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।

তিনি জানান, সেতুর সর্বশেষ এ মালামালসমূহ ২০২০ এর মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে আনার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছিল। কিন্তু চীনের উহানে ভয়ানক করোনাভাইরাসের পার্দুভাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে স্প্যানের মালামাল তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। এপ্রিলের শেষের দিক থেকে আবার ফ্যাক্টরি খুললে মে মাসের শেষ দিকে স্প্যানগুলোর কম্পোনেন্ট তৈরি কাজ শেষ হয়। এমভিকংসিউসং জাহাজে সেতুর ১৮০টি ট্রাস কম্পোনেন্টসহ ২০৪১টি স্টীলের তৈরি বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। জাহাজটি সাংহাই ও সিঙ্গাপুর পোর্টে মোট ০৭ দিন বিরতি (মালামাল লোড/আনলোড) দিয়ে আগামী জুন মাসের ০৭ তারিখ চট্রগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ ও ক্লিয়ারেন্সের পর মংলা হয়ে ১৫ জুন এটি মাওয়া এসে পৌঁছাবে। এই মালগুলোই পদ্মা মূল সেতুর প্রয়োজনীয় মালামালের শেষ চালান। তবে এরপরও অপটিক্যাল ফাইবার, লাইটসহ বেশকিছু ছোট সরঞ্জাম আসবে।

তিনি আরো জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান রয়েছে। প্রতিটি স্প্যানে ১১০-১১৮টি স্টীলের ট্রাস কম্পোনেন্ট (কর্ড, মেম্বার বা নোড)-এর সমন্বয়ে তৈরি একটি ওয়ারেন টাইপ ট্রাস। মূল সেতুর ৪১টি স্প্যানে সর্বমোট ৪৫৮৭ স্টিলের ট্রাস কম্পোনেন্ট প্রয়োজন হবে। এই ৪৫৮৭টি স্টীলের ট্রাস কম্পোনেন্ট মূল সেতুর স্প্যান (স্কেলিটন) তৈরি করবে। তাছাড়াও রেলওয়ের জন্য ১৩১২টি স্টিলের স্ট্রিনজার বিম, ২৬২৪টি স্টিলের রেলওয়ে সাপোর্ট ব্রাকেট, ১৩১২টি স্টিলের রেলওয়ে স্ল্যাব ব্রাকেট, ৮২১৪টি গ্যান্ট্রি মেইনটেনান্স ব্রাকেট, ১৩৪৬টি গ্যাস পাইপ লাইন ব্রাকেট, ৯৩০টি হ্যাচ কভার, ৯১০টি এ্যাকসেস ল্যাডার, ৪৮টি ট্রান্সভার্স শেয়ার কি, ২১টি গ্যাস পাইপ লাইন লুপ, ১৩১২টি ওভারহেড ক্রেন স্টিলের গার্ডার ও ১টি প্রয়োজন হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয়েছে সেতুর ২৯টি স্প্যান। সর্বশেষ গত ৪ মে সেতুতে ২৯তম স্প্যান বসানো হয়। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে সবকটি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :