অধিক বজ্রপাতে জলবায়ুর পরিবর্তন ও ভৌগোলিক অবস্থানই কী প্রধান কারণ?

মো.শাহিন রেজা
 | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২০, ০৯:২৫

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। ঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প এ দেশের মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নতুন একটি দুর্যোগের আবির্ভাব ঘটেছে। বলছি বজ্রপাতের কথা! দক্ষিণ এশিয়ায় যতগুলো দেশ আছে তার মধ্যে আমাদের দেশে বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি।

দিন দিন এটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেভ দ্যা সোসাইটি এন্ড থান্ডার স্টম অ্যাওয়ারনেন্স ফোরাম’ জানিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭৯ জন মারা গেছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলকে বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এপ্রিল, মে, জুন মাসে সাধারণত বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। সারা বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে ফলে বজ্রপাতের সম্ভাবনাময় পরিস্থতি বেশি তৈরি হয় এই সময়ে।

জলবায়ু পরিবর্তনের করনেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। গত ৫০ বছরে দেশে তাপমাত্রার বৃদ্ধির হার দশমিক পাঁচ শতাংশ ( আবহাওয়া অধিদপ্তর)। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাত তৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ভৌগোলিক অবস্থান গত কারনেও বাংলাদেশ এই দুর্যোগটি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের দক্ষিনে রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর আর উত্তরে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা। ফলে উষ্ণ ও ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ ঘটছে যা বজ্রপাতের পবিবেশ তৈরিতে সহায়ক। ভূমিকম্পের মত বজ্রপাতের পূর্বাভাসও আগে থেকে জানা যায় না ফলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে দিনে দিনে। বজ্রপতে বাংলাদেশে কৃষকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কারণ তারা খোলা মাঠে কাজ করে থাকে। তাল গাছ সহ বড় বড় গাছ আমরা কেটে ফেলছি যার করণে হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে। কারণ এই গাছগুলো বজ্র নিরোধক হিসাবে কাজ করে।

২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিন দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে নব্বইয়ের দশকে প্রতি বছর গড়ে ৩০ জন, পরবর্তি দশকে বছরে গড়ে ১১৬ জন মারা যায়। আর বিগত দশকে (২০১০-২০১৮) মৃত্যুর পরিমাণ ছিল বছরে ২৪৯ জন (pars Today,2020)।

ফলে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি দুর্যোগটি কতটা হুমকির বার্তা দিচ্ছে আমাদের দেশের জন্য। তাই বজ্রপাতের পরিমান হ্রাসে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে তা না হলে সামনের বছর গুলোতে আরো ভয়াবহ পরিস্থির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে।

কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় বজ্রপাত প্রতিরোধে -

১। সারা দেশে লাইটিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসাতে হবে।

২। তাল গাছকে প্রকৃতির বজ্র নিরোধক দন্ড বলা হয়। তাই তাল গাছ রোপণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে খোলা মাঠে যাতে কৃষকেরা আক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা পায়।

৩। সরকারের সহায়তায় প্রতিটি ভবনে বজ্র প্রতিরোধক দন্ড বসাতে হবে।

৪। বনাঞ্চল তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে, তাই বৃক্ষ রোপণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

৫। আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সরঞ্জাম হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করতে হবে।

৬। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সভা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে।

৭। বেশি বেশি বজ্রপাত সংগঠিত অঞ্চল চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮। গবেষণার পরিমাণ বাড়িয়ে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা হ্রাসে পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/১৬মে/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :