১২০০ কোটি টাকা প্রণোদনা চায় টেকবিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২০, ২০:২৫

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ৩৯০ কোটি টাকার কারিগরি ইনস্টিটিউট প্রণোদনা প্যাকেজ চেয়ে অনুরোধ করেছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা। বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের সংগঠন 'টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশের (টেকবিডি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাউপমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে গত ১৪ মে পুনরায় সংগঠনটি তাদের আর্থিক ব্যয়ের খাতগুলো উল্লেখপূর্বক প্রণোদনা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন।

টেকবিডি'র আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ৩৩টি শিক্ষাক্রম দেশে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৭৪৩টি এবং শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ১০ হাজার ৪৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ৯ হাজার ৭৫৯টি, যেখানে সরকারি সংখ্যা মাত্র ৬৯৩। এসব শিক্ষাক্রমে ২০১৮-১৯ সেশন রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ জন। এর মধ্যে মহিলা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১৪ হাজার ২৯৪ জন অর্থাৎ মহিলা শিক্ষার্থী ৩০%।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাধ্যমিক স্তরে এনরোলমেন্ট বর্তমানে ১৬.০৫%। সরকারি নীতি ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির আলোকে পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বছরের মধ্যেই এনরোলমেন্ট ২০% এবং পরবর্তী দুই দশকে যথাক্রমে ৩০% ও ৫০% এ উন্নীত করার লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে এবং থাকবে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।

তিনশত নব্বই কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠনের ঐ পূর্ববর্তী অনুরোধ উল্লেখপূর্বক টেকবিডি জানায়, প্রকৃতপক্ষে সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কে এই প্রণোদনা সুবিধা দিতে হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের ধরন অনুযায়ী যেমন- পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, এইচএসসি, বিএম, সর্ট কোর্স পরিচালিত ইনস্টিটিউটকে ৫টি ভাগে বিভক্ত করতে হবে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের টেকনোলজির সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক বরাদ্দের প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে ৬ মাসের বেতন-ভাতা ও চলমান খরচ হিসেব করে দেশের মোট মোট ৫৭৫ টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর জন্য এ প্রণোদনা তহবিলের আবেদন করেন।

এক্ষেত্রে, সম্ভাব্য ৬ মাসের জন্য ১ থেকে ২টি অনুমোদিত টেকনোলজির জন্য ১৬ লাখ টাকা হিসেবে ১৯১ প্রতিষ্ঠানের মোট খরচ ৩০ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা, ৩ থেকে ৪ টি টেকনোলজির জন্য ৩২ লাখ টাকা হিসেবে ২১৬ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬৯ দশমিক ১২ কোটি, ৫ থেকে ৮ টি অনুমোদিত টেকনোলজির জন্য ৭৮ লাখ টাকা হিসেবে ১২১ প্রতিষ্ঠানের মোট খরচ ‌৯৪ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা এবং ৯ টি ২০ টি অনুমোদিত টেকনোলজির ৯৯ লাখ টাকা হিসেবে ৪৫ টি প্রতিষ্ঠানের ৪৪ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চান। এসকল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন মোট ২৩৮ দশমিক ৬১ কোটি টাকা।

একই রকমভাবে বেসরকারি এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট ১২৩ টি, যেখানে প্রনোদনা প্রয়োজন ৩৮.৯০ কোটি। এইচএসসি বিএম ৮১৫ টি প্রতিষ্ঠান। ভোকেশনাল ১ হাজার ২৬৫ টি প্রতিষ্ঠান এবং শর্ট কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার ৫০০ টি। তবে সব মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আনুমানিক প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্রয়োজন।

আবেদনের এই অর্থ যোগান দিতে প্রয়োজনে কারিগরি বোর্ডের কাছে জমাকৃত অর্থ থেকে ব্যয় করার সুপারিশ করে টেকবিডি বলে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবছর প্রতি টেকনোলজি অনুযায়ী ১১ হাজার টাকা করে এবং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফর্ম ফিলাপ ফি বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা জমা প্রদান করে। প্রয়োজনে কারিগরি বোর্ডের এই ফান্ড থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহযোগিতা করে হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহকে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ করা হয়।

টেকনিক্যাল এডুকেশন কন্সোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি) এর সভাপতি,ইঞ্জিঃ আব্দুল আজিজ এবং মোঃ ইমরান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এর পক্ষ থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, কারিগরি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য ৫ বছর মেয়াদি (প্রথম বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করে) ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রনোদনা দিয়ে দেশের দক্ষ জনশক্তি গঠনের অন্যতম হাতিয়ার এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন বাঁচিয়ে রাখা হয়।

নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি পলিটেকনিকসমূহ কারিগরি শিক্ষায় এক যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করছে। বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল ও বেকার সমস্যা দূরীকরণের পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর মাধ্যমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে আসছে। এই বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহ বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি কোন অনুদান বা আর্থিক সহযোগিতা পায় না এবং কখনো পাওয়ার জন্য আবেদনও করেনি। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ১৭ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই অর্থনৈতিকভাবে বড় সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা নাজুক অবস্থার শিকার বলেও এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন সেক্টর ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা এবং সহযোগিতার প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় এই পত্রে। সেই সাথে দেশের বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যান্য পেশাজীবিদের মতো সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য প্রণোদনা তহবিল গঠন করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন দিয়েই প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, সব ইউটিলিটি বিল এবং শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সত্বেও দুর্যোগকালীন সময়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফিসহ অন্যান্য পাওনা আদায় করে না। এতে করে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক মহাসংকটে পড়েছে এবং যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর। এই কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা খুব সামান্য বেতনে শিক্ষকতা করে দেশের ভবিষৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।

টেকবিডি'র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সুনিশ্চিত উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানসমূহকে, বিশেষ করে এর সাথে জড়িত সকল পেশাজীবিদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন যাত্রার জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি।‘

শিক্ষার এ সেক্টরে প্রধানমন্ত্রীর সুনজর আছে উল্লেখ করে এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার আশাবাদ ব্যক্ত করেন টেকবিডি সভাপতি।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/কারই/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে জনতা ব্যাংকের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

ঈদ উৎসব মাতাতে ‘ঢেউ’য়ের ওয়েস্টার্ন সংগ্রহ

৮ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

সিটি ব্যাংকের ২০২৩ সালের মুনাফা ৬৩৮ কোটি টাকা, বেড়েছে ৩৩%

ঈদ অফারে বিনামূল্যে মিনিস্টারের রেফ্রিজারেটর পেলেন আসাদুজ্জামান সুমন

সোনালী ব্যাংকে ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনাসভা

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭টি নতুন উপশাখার উদ্বোধন

স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শ্রদ্ধা

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্মসংস্থান ব্যাংকের শ্রদ্ধা

স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে ইসলামী ব্যাংকের শ্রদ্ধা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :