করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সফল হবে বাংলাদেশ

হাবিব উল্লাহ ডন
| আপডেট : ১৬ মে ২০২০, ২১:৫২ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২০, ২১:২৩

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মানুষ ঘরবন্দি। প্রাণ সংহারক এই ভাইরাস গ্রাস করতে চলেছে অর্থনীতিও। দেশে দেশে অর্থনীতিতে এরইমধ্যে তার ছাপ পড়া শুরু হচ্ছে। করোনার প্রভাবে উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশেরই জিডিপিতে ধস নামার শঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশ কার্যত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আমাদের দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রণোদোনা প্যাকেজ ঘোষণা থেকে শুরু করে নানাবিধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সফল হবে বাংলাদেশ।

কোভিড নাইনটিনে স্থবির বিশ্ব অর্থনীতি। এশিয়া থেকে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া কিংবা আফ্রিকা-সবখানেই বন্ধ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উৎপাদনও নেমেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। করোনাভাইরাসের মহামারীতে বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল কার্যত বন্ধ। পর্যটন খাত স্তব্ধ। হোটেল, খাবারের দোকানসহ সবখানেই তালা ঝুলছে। ঝড়ের বেগে ধাবমান মানবসভ্যতা অতর্কিতে থেমে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে বিশ্বের প্রতিটি দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ। এই হিসাবে করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর যদি অর্ধেক ক্ষতিও হয় অর্থাৎ জিডিপির ৫ শতাংশও ক্ষতি হয় তাহলে বাংলাদেশের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। তবে আশার কথা হলো, প্রায় সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের ওপর যে অতিনির্ভরতা গড়ে উঠেছে, তা থেকে এবার বোধহয় সকলেই বেরিয়ে আসতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ আসতে পারে ভারত, বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের কাছে। ম্যাকেঞ্জির বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা অংশীদার কেভিন স্নেডার বলেন, করোনার ধাক্কায় পৃথিবীর চিত্রই বদলে যাচ্ছে। ফলে নতুন এক অর্থনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হবে পৃথিবীর মানুষ।

গোটা বিশ্বেই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে ব্যাপকভাবে কমছে। করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাতে পারে তার চিত্র তুলে ধরেছে আইএমএফ। সেই তালিকায় দেশভিত্তিক প্রস্তাবিত জিডিপি বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। সংস্থাটি ২০১৯ সালে কোন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেমন ছিল আর ২০২০ সালে কেমন হতে পারে এবং করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি বৃদ্ধির হার কেমন হতে পারে তার আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির একটা দিকনির্দেশও রয়েছে তাদের পূর্বাভাসে।

এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ; সেখান থেকে এবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সেই হার নেমে যেতে পারে ঋণাত্মক বৃদ্ধিতে (-৩ শতাংশ)। তবে ২০২১ সালে বৃদ্ধির হার হতে পারে ২০১৯ সালের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আইএমএফের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের জিডিপিতে ধস নামার আশঙ্কা তৈরি হলেও কার্যত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছিল। করোনার প্রভাবের মধ্যেও বাংলাদেশ সেই হার ২ শতাংশ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবে বলে মত আইএমএফের। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে পারে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

উন্নত ও উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশেরই ২০২০ সালে ঋণাত্মক বৃদ্ধির সম্ভাবনা। উন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে সেই হার হতে পারে -৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ইউরোপের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ফলে এসব দেশের অর্থনীতিতেও তার ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে আইএমএফ।

ইউরোপের এই অঞ্চলে ২০১৯ সালে বৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ এবং ২০২১ সালের পূর্বাভাসে সেই হার হতে পারে যথাক্রমে -৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। জাপানে করোনাভাইরাসের তেমন প্রভাব না থাকলেও দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। ২০১৯ সালে জাপানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে -৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর ৩ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হতে পারে ২০২১ সালে।

ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখান থেকে ছড়িয়েছিল বলে ধরা হচ্ছে, সেই চীনের অবস্থা কিন্তু তেমন একটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আইএমএফ মনে করছে। সংস্থাটি বলছে, এই অবস্থার মধ্যেও এবছর চীনের জিডিপি বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হবে না। ২০১৯ সালে চীনে বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এবছর সেটা নেমে আসতে পারে ১ দশমিক ২ শতাংশে। আর ২০২১ সালে আবার পৌঁছে যেতে পারে ৯.২ শতাংশে।

চীনের থেকেও ভারতের অবস্থান ভাল জায়গায় থাকবে বলেই আইএমএফের পূর্বাভাসে দেখানো হয়েছে। দেশটিতে ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। করোনায় সেটি নেমে পৌঁছে যেতে পারে ১ দশমিক ৯ শতাশে।

তবে আইএমএফ বলছে, অধিকাংশ দেশেই এবছর ঋণাত্মক বৃদ্ধির পূর্বাভাস হলেও ভারতে তা হবে না। আর ২০২১ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

ভারতের প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের এ বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে -১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালে হবে ২ দশমিক ০ শতাংশ ২০১৯ সালে রাশিয়ার জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এবছর সেটা দাঁড়াতে পারে -৫ দশমিক ৫ এবং ২০২১ সালে হতে পারে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সৌদি আরবের জিডিপি এবছর নেমে যেতে পারে -২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০ দশমিক ২ শতাংশ। সেখান থেকে চলতি বছরে নামতে পারে -৫ দশমিক ৮ শতাংশে। আগামী বছরের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ০ শতাংশ। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার প্রধান অর্থনীতি ব্রাজিলে গত বছরের ১ দশমিক ১ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নামতে পারে -৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে সেটি হতে পারে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

করোনা পরবর্তী সময়ে সেসব দেশের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করে সরকার। কেননা এসব দেশ চীন থেকে সস্তা শ্রমের বিনিময়ে যেসব পণ্য উৎপাদন ও বিপুল পরিমাণ লাভ করত, এমন সস্তা শ্রম এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ, এমনকি ভারতের তুলনায়ও বাংলাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। ফলে ওইসব দেশকে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে পারলে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে পারবে বলে মনে করে সরকার। এজন্য এমন সংকটকালে এটিকে বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক সম্ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এফবিসিসিআইকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, যেসব দেশ চীন থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আমাদের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা যোগাযোগ শুরু করেছেন। আশা করা যায় আমরা এখানে একটা ভালো ফল পাব।’ তিনি বলেন, ‘জাপান ইতিমধ্যে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক কাজও শুরু করেছে। জাপানসহ অন্যান্য দেশের যেসব কোম্পানির চীনে বিনিয়োগ রয়েছে, আমরা সেসব কোম্পাানির একটা তালিকাও করেছি, যেটি আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। তারা সেটি এফবিসিসিআইর কাছে দিয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এসব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের বেসরকারি খাতের একটা সেতুবন্ধ তৈরি করে দিচ্ছি, যেটা সরকার সরাসরি করতে পারত কিন্তু করবে না। কারণ চীনও আমাদের একটা ব্যবসায়িক বন্ধু। তারা আমাদের অনেক উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গেই জড়িত। একইভাবে যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকার প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ঋণ দিচ্ছে সহজ শর্তে। এ ছাড়া দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের প্রশিক্ষিত বা দক্ষ করতে লাইফ চেঞ্জার নামক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। করোনা-পরবর্তী আমাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এসব কর্মসূচি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ইতিমধ্যেই আমাদের এফবিসিসিআইয়ের সুযোগ্য সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম করোনা পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙা করতে সরকার, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সকল এসোশিয়েন চেম্বারের সাথে সমন্বয় করে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরো মজবুত করা যায় সেলক্ষ্যে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, করোনার কারণে তৈরি হওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এফবিসিসিআইয়ের নেতৃৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।

এই সময়ে বাংলাদেশের সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য চীন থেকে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয় সেসব পণ্য বিকল্প দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, মিসর, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের নানাভাবে প্রণোদনাও দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো একক দেশের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার সুপারিশ করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের কাঁচামালের বেশির ভাগই চীন থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ৬৫ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। এ আমদানি সঠিক সময়ে করতে না পারলে ব্যাপকভাবে লোকসানের মুখে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। এটির ক্ষেত্রে বিকল্প আমদানির বাজার খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে, এই ঝুঁকি মোকাবেলা করে দেশের শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখতে চাইলে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হলে সরকার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদিও এর মধ্যেও খানিকটা স্বস্তির খবর দিচ্ছে সরকারীভাবে রফতানি খাতের জন্য আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা। ইতোমধ্যে সরকার রফতানি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা কিভাবে খরচ হবে তার দিকনির্দেশনাও জারি করেছে। আরও একটি সুখবর হচ্ছে, পোশাক খাতের বড় বড় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন। বিপরীতে এবার তারা ক্রয়াদেশগুলো বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। শিপমেন্টের অপেক্ষায় থাকা পণ্য নেয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ক্রেতাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে করোনার প্রভাবে যে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিলের কথা বলা হচ্ছিল, এখন সেই পরিমাণ কমে আসবে। ডব্লিউটিওর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় সংস্থাটির মহাপরিচালক রবার্তো এ্যাজেভেদো বলেছেন, এই মহামারীতে চলমান অর্থনৈতিক অধোগতি ও মানুষের চাকরি হারানোর ফলে পরিস্থিতি এক যুগ আগের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে। আর এতে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক বলেছেন, অর্থনীতির প্রকৃত পূর্বাভাস এখনও না মিললেও বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের পতন হবে। তবে দেশগুলোর প্রচেষ্টা সমন্বিত হলে মন্দা মোকাবেলায় সামষ্টিক ক্ষমতা বাড়বে। বিভিন্ন দেশের সরকারের নেয়া প্রণোদনামূলক পদক্ষেপগুলো এক্ষেত্রে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে কাজ করবে।

করোনা পরবর্তী অর্থনীতি মোকাবেলায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যা করছে, আমাদেরও তাই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রফতানিমুখী খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এটি ভাল দিক। অন্যান্য খাতেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিশেষ করে এসএমই খাতটি অনেক বড় খাত। এই খাতে নিয়োজিত জনবল অনেক বেশি। আরও রয়েছে পর্যটন শিল্প, হোটেল-রেস্টুরেন্ট। এগুলোও সবই বন্ধ। এদের জন্যও সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।

তার মতে, আমাদের দুটি জিনিস ঠিক রাখতে হবে- একটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা, অন্যটি বৈদেশিক চাহিদা। বৈদেশিক চাহিদা তো এককভাবে আমরা ঠিক করতে পারব না। এটা নির্ভর করবে বাইরের কিরগিজিস্তান ওপর। সেটা ওকে হলে আস্তে আস্তে অর্ডার চলে আসবে। তবে আমাদের দিক থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদার কিন্তু বড় পতন হয়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।

‘কঠিন’ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে আমাদের মঞ্জুরি সহায়তা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এ সংস্থাগুলো ঋণ দিতেই বেশি আগ্রহী থাকে। ফলে মঞ্জুরি সহায়তা খুব বেশি পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে সফট লোন বা সহজ ঋণের জন্য দর-কষাকষি করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিলে বাড়তি সুবিধা আদায় করা কঠিন হবে না। বিনিময়ে সুশাসন, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসা সহজীকরণের শর্ত পূরণ করতে হবে।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের যে সম্ভাবনা তৈরি হবে সেখানে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে রাশিয়াতে রপ্তানিখাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সাথে ইতিমধ্যেই আন্তদেশীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আশা করি ইইউ ইউশের সাথে চুক্তি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হলে, রাশিয়াসহ ইউরোশিয়ান ইউকোনোকিম ইউনিয়ন (ইইউ ইউ)ভুক্ত দেশগুলোতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের সুযোগ আসবে।

ইউরোশিয়ান কিরগিজিস্তান ইউনিয়ন (রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাকিস্তান, কিরগিজিস্তান) এর সদৃর ব্যবসায়ের জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। এই ইউনিয়নের সদস্য হতে পারলে বাংলাদেশ শুল্ক মুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারবে। ফলে রপ্তানির নুতন দুয়ার উন্মোচিত হবে বাংলাদেশের জন্য।

বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, জর্জিয়া, কাজাকিস্তান, কিরগিজিস্তান, তুর্কেমিন্টোন, পররাষ্ট্র ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে চিংড়ি, এ্যাপারেল, লেদার, ফার্মাসিটিকেলসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উল্লেখিত দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য এতদিন ধরে অন্যতম বাধা ছিল ব্যাংকিং চ্যানেলের অভাব। এ নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ শুরু করেছে।

এই বিশাল রপ্তানির বাজার উন্মোচন করার জন্য সিআইএস -বিসিসিআই দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকাস্থ রাশিয়ার দূতাবাস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)'র সাথে কাজ করা হচ্ছে। রাশিয়া কেন্দ্রিক এই বিশাল রপ্তানির বাজারে বাংলাদেশের দুয়ার উন্মোচিত হলেই সরকার ঘোষিত ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে দঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: সভাপতি, কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টিজ (সিআইএস-বিসিসিআই) এবং পরিচালক এফবিসিসিআই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :