লালমনিরহাটের তাঁত শিল্পীরা ভালো নেই

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২০, ২৩:৪৬ | আপডেট: ১৬ মে ২০২০, ২৩:৫৮

মাজহারুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

এবারের ঈদে লালমনিরহাটের কাকিনা তাঁত পল্লীতে নেই সরগরম, পাইকারদের নেই আনাগোনা। করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁতের কাজ। হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী কাজ করলেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। করোনার প্রভাবে এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। তাঁত শিল্পকে বাচাঁতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তারা।

লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা এবং মহিষামুড়ী গ্রামের প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্প। ঈদকে সামনে রেখে নেই ক্রেতা ও পাইকারদের আনাগোনা। অথচ ঈদের তিন মাস আগ থেকেই এই তাঁত পল্লী হয়ে উঠে মেশিনের শব্দে মুখরিত। ঈদের পোশাক নিতে নিজ জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার ও ক্রেতা বিক্রেতাদের বেড়ে যায় সমাগম। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতের খটখট শব্দে নিপুন শিল্পীর হাতে চলতো বুননের কাজ।

বিভিন্ন স্থানে এখান থেকে সরবরাহ হতো নানা জাতের কাপড়। এখানকার তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর, গামছার যথেষ্ট কদর থাকায় সেসব সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। করোনার আতঙ্ক ও লকডাউনের কারণে কোনো অর্ডার নেই। সরবরাহ করতে পারেনি রং, সুতা, কাচামালসহ বিভিন্ন উপকরণ।  

তাঁত শিল্পী আবু বক্কর বলেন, আমাদের এই কাকিনায় তাঁতি পাড়ায় মোট ৩০০ সাড়ে ৩০০ তাঁতি আছেন। এরা করোনার জন্য তাত বোনাতে পারছে না। দুই-চারজনের ঘরে তাঁত বোনাচ্ছে। হাতে হাতে বিক্রি করছে। তাও খুবই কম।

তাঁত শিল্পী আমেনা বেগম বলেন, আমাদের করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো কাজ করতে পারছিনা। এখন আমরা সেই কাজ বন্ধ রাখছি। এখন বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খুবই অসুবিধা। সেই অসুবিধা দূর করতে সহযোগিতার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই।

তাঁত শিল্পী সবুজ মন্ডল জানান, আমরা এখানে ২২৮ জন তাঁতি নিয়ে একটা সমিতি গঠন হয়েছে। ১৯০৬ সালে এটা রেজিস্ট্রেশন করা। এই রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পরেও আমরা একত্রিতভাবে কিছু তাঁত ব্যবসা করতাম। আমাদের পাইকাররা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শহরে রপ্তানি করতো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সব অচল হয়ে গেছে। কেউ ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছে না। কারো তাঁত চলছে না। এখন আমাদের দিনপাত চলা খুবই কঠিন ব্যাপার।

তাঁত শিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, গত বছর লাখের ঊর্ধ্বে হইছে। এবার বোধ হয় হাজার পাঁচেক টাকাও বিক্রি হবে না। লোকজন আসে না। কী দিয়ে কী করবো, দোকানপাট বন্ধ। ভাইরাসের কারণে আমরা এখন ভাইরাস হয়ে গেছি। কারো কাছে হাত পাতলেও কেউ বর্তমানে দিচ্ছে না। আগেতো পাবলিক থেকে ঋণ করেও কিছু করতাম। এখন পাবলিক কিছু দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কৃষি প্রণোদনা এবং অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে কাকিনার তাঁত শিল্পী রয়েছেন  এবং করোনার কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রণোদনার আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/কেএম)