পুলিশকে শ্রদ্ধায় অনুভব করছে দেশের মানুষ

আলম রায়হান
 | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২০, ১৪:৪০

ফেসবুকের অনেক উপকার। এর ক্ষতি যে নেই তা কিন্তু নয়। তবে আমার ধারণা, এটি আসলে ছুরির মতো। সার্জনের হাতে জীবন বাঁচানোর উপকরণ। ছিনতাইকারির হাতে গেলে হতে পারে প্রাণহরণের হাতিয়ায়। ফেসবুকও অনেকটা এ রকম। এর ক্ষতিকর দিকের যেমন সীমা-পরিসীমা নেই, তেমনই রয়েছে অন্তহীন উপকার। অন্তত আমি অনেক উপকার পেয়েছি। নিজের ভাবনা অসংখ্য মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা যায়। অনেকের মতামত জানা যায়। বহু বছরের বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ আবার পুনঃস্থাপিত হয়। এমন কি নিজের জন্মদিনটিও মনে করিয়ে দেয় ফেসবুক। যে দিনটির কথা অতি ঘনিষ্ঠজনরাও মনে রাখেন না। বেমালুম ভুলে যান!

মহাউপকারী এই ফেসবুকের কল্যাণে ১৬ মে সকালে জানতে পারলাম, ঠিক তিন বছর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিনের কাছে গিয়েছিলাম। তখন পুলিশের সাথে যোগাযোগ থেকে আমি অনেক দূরে। ফলে অস্বস্তি হচ্ছিল। বিষয়টি কাটাতে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাভিশনের বরিশাল প্রতিনিধি শাহিন হাসানকে। সঠিক বাক্য হচ্ছে, আমি গিয়েছিলাম শাহিন হাসানের সঙ্গে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম, আসলে আমার দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোসো কারণ ছিল না। কেননা তিনি গণমুখী ব্যক্তিত্ব। এবং তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশকে জনসম্পৃক্ত করেছিলেন। নগরীতে অপরাধ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এস এম রুহুল আমিনের সময়ই বরিশার নগরবাসী উপলব্ধি করেছিলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ বলে বরিশালে পুলিশের একটি সংস্থা আছে। আমারও একই উপলব্ধি হয়েছে প্রায় ২২ বছর পর পুলিশের কাছাকাছি গিয়ে।

আমার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়েছিল পলিটিক্স ও ক্রাইম বিটের মাধ্যমে। যে কারণে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আমার বিশেষ যোগাযোগ ছিল বহু বছর, ১৯৮০ সাল থেকে। দীর্ঘ পথচলায় পত্রিকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং টেলিভিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অধিকতর জোরালো হলেও পুলিশের সঙ্গে যাগাযোগ একেবারে শিথিল হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নেতা এবং মহসীন হলের ভিপি নূর মোহাম্মদ পুলিশ বাহিনী থেকে বিদায় নেবার পর কোনো পুলিশের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও হয়নি। অথচ এক সময় ঘুমাতে যাবার আগে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। যোগাযোগ করতাম, ঘুম থেকে ওঠার পরপরই। এ ধারা চলেছে বহু বছর। এর পর এধারায় পুরো ফুলস্টপ।

দীর্ঘ ২২ বছর বিরতির পর তিন বছর আগে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আবার শুরু হয়। তবে পেশাগত কারণে নয়। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এটিই ছিল পুলিশের কাছে আমার জীবনে এখন পর্যন্ত প্রথম যাওয়া। অবশ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মেয়র মির্জা আব্বাস, সংসদ সদস্য অখতারুজ্জামান বাবুসহ বেশ কয়েকজনের প্রয়োজনে পুলিশ আমার কাছে একাধিকবার এসেছে। ধরতে। আমি পুলিশের কাছে যাই বা পুলিশ আমার কাছে আসুক- আমার কোনো অস্বস্তি বোধ হয়নি। কিন্তু চরম অস্বস্তিতে পড়লাম ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যখন পুলিশের কাছে যেতে হলো। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল সেই সময়ে বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানার ওসি আনোয়ারের কারণে। তার ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। কিন্তু আখেরে ওসি আনোয়ারের কারণে আমার ক্ষতির চেয়ে উপকার হয়েছে অনেক বেশি। এ কারণে তার কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তার কাছে কৃতজ্ঞতা আমার বরিশালমুখী হওয়ার জন্যও। দৈনিক দখিনের সময় প্রকাশের উদ্যোগ নেবার ক্ষেত্রে তার কিছু হলেও অবদান আছে বলে আমার মনে হয়।

আমার অতি প্রিয় এই ওসি আনোয়ার দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বরিশালে বিভিন্ন পদে পোস্টিং-এ ছিলেন। এ সময় মাদককারবারি এবং ভূমিদস্যু চক্রের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিশেষ কুখ্যাতি কুড়িয়েছেন। এবং বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন। এমনকি বরিশাল নগরীর অভিজাত এলাকায় চোখ ধাঁধানো বাড়িরও মালিক হয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি এসব করেছেন পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তাঁর এই অর্জনে দেশের ক্ষতি হয়েছে এবং পুলিশের ভাবমূর্তি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। আমারও অস্বস্তি হয়েছে তাঁর কারণেই। তবে আগেই বলেছি, তুলনামূলক বিচারে আমার লাভের পাল্লা বেশ ভারি।

ওসি আনোয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমার পরিবার দুষ্টুচক্রের শিকার হয়েছিল বলেই এস এম রুহুল আমিনের মতো দক্ষ ও মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে। এ ধারায় মাহ্ফুজুর রহমান, মামুন মোয়াজ্জেম ও মো. জাহিদুল ইসলামসহ পরিচয় হয়েছে অনেকের সঙ্গে। আমি গভীরভাবে অনুধাবন করছি, দেশের পুলিশ পাল্টে গেছে অনেকখানি। চলমান করোনা সংকটকালে যা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে অনুভব করছে গোটা দেশের মানুষ। যে পুলিশের ইমেজের সঙ্গে এক সময় লেপ্টে ছিল ‘আতঙ্কের ভাবমূর্তি’, সেই পুলিশ করোনা নামক অদৃশ্য দানবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়ছে দেশের মানুষের জন্য। যখন এই কাজের জন্য পেশাগত শপথ গ্রহণকারী ডাক্তারদের অনেকেই এক অর্থে পলাতক। এদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। জীবনও দিচ্ছে। পুলিশ এখন জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে আসীন।

তবে এটিই কিন্তু শেষ কথা নয় সম্ভবত। করোনার বিরুদ্ধে পুলিশের জীবনবাজি রেখে চলমান যুদ্ধ শেষ হলে অথবা স্তিমিত হবার সময় এসে এই পুলিশের ইমেজ আবার কোন দিকে ধাবিত হবে তা কিন্তু বলা কঠিন। কারণ পুলিশে মাঠপর্যায়ে এখনো অনেক আনোয়ার-মোয়াজ্জেম-শরীফরা রয়ে গেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, জনগণ নিতান্তই দায় পড়ে প্রয়োজনে থানায় গেলে যাদের মুখোমুখি হয় তাদের মধ্যে এখনো অনেক ‘দুষ্ট’ু রয়ে গেছে। আমার ধারণা, এদের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। হয়তো করোনা সংকট চলাকালে পুলিশের কঠিন দায়িত্বগ্রহণকারী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ছোট ছোট দুষ্টুদের দিকেও নজর দেবেন। উল্লেখ্য, বড় ও মাঝারি পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক হয়ে গেছে বহু আগেই।

লেখক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :