মোজাম্মেল হক নিয়োগীর দুটি কবিতা
ঘরবন্দির দিনলিপি
সারা দিনই ঘরের ভেতর শুয়ে বসে থাকা
কারো হলো মাজায় ব্যথা করো ঘাড় বাঁকা।
কখন হবে খাওয়া-দাওয়া কখন হবে স্নান
যখন তখন হচ্ছে এসব নেইকো কোনো প্লান।
সাহেবরা সব থাকে বসে বউরা পাকে ব্যস্ত
তাদের হাতেই ঘরকন্না সকল কিছু ন্যস্ত।
কেউ বা এখন দেখছে মুভি কেউ পড়ে বই
কেউ বা আছে ফেসবুকে—করছে হৈ চৈ।
কেউ বা দিচ্ছে ত্রাণের ছবি কেউ দিচ্ছে গাল
কেউ বা আবার কথায় কথায় তুলছে গায়ের ছাল।
কারো হচ্ছে গোঁফ বড়ো কারো হচ্ছে নখ
কেউ বা ব্যস্ত সেলফি তুলে মিটায় যত শখ।
কারো হচ্ছে দাড়ি বড়ো কারো বড়ো চুল
কারো মাথা টাক্কু করে করল মস্ত ভুল।
যাদের আছে টাকাকড়ি খাবার হাঁড়ি হাঁড়ি
তাদের সময় কাটছে ভালো দুশ্চিন্তা নারি।
যাদের ঘরে অভাব আছে তারা খোঁজে কাজ
হাতও পাতে এদিক-সেদিক হারিয়েছে লাজ।
সকাল সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ায় আড্ডাবাজের দল
লকডাউনটা চলছে কেমন দেখার করে ছল।
যত কিছুই করো নাকো যত কথাই কহ যে
করোনা কি ছাড়বে তোমায়—বলো, এত সহজে?
ঘরবন্দি-২
শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে দাঁড়াতে গিয়েও থেমে যাই
মাঝে মাঝে বাইরের দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বিষন্ন আকাশ
শোকে মুহ্যমান মরা রোদ্দুর বুকে নিয়ে কোনো রকম আছে
এমন নিরানন্দ আকাশ কখনো দেখিনি অরুণিমা
মানুষ কি এভাবে বাঁচতে পারে রুদ্ধদ্বার গৃহে সঙ্গহারা
কবোষ্ণ প্রেমহীন শিথিল বসন্তের আর্তনাদ বুকে বেঁধেছে বাসা।
এই শহরের রাতের দৃশ্যাবলি তুমি কি লক্ষ করেছো অরুণিমা?
মানুষের বুকের ভেতরের কষ্টের বহতা নদী?
শহরের পথগুলো যেন নিদ্রামগ্ন হিম অজগরের মতো ভয়ঙ্কর নীরবতা
মৃত্যুদূত থাবা মেলে আছে, লাশের হিসাবে মিটারে পারদের ঊর্ধ্বগতি
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মতো মৃতপ্রায় পড়ে আছি কনডেম সেলে।
দিন গুনি, দিনের শেষে রাত, মাস শেষ হলে পঞ্জিকার পাতা বদলাই
খবরের পর খবর... অধীর প্রতীক্ষা... কোনো সুখবর যদি মিলে
কত গেল, কত যাবে এমন মৃত্যুর হিসাব মানুষ কি কখনো করে?
আমরা তাই করছি আর ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হচ্ছি
করুণ অশ্রুতে সিক্ত হচ্ছে আত্মার কোণ।
এভাবে কতদিন বেঁচে থাকা যাবে অরুণিমা?
কখন দেখা হবে বসন্তের উষ্ণতায়?