প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ করলেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মে ২০২০, ২০:৫০ | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২০, ২০:০৪

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণ করেছেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় না করে বিতর্কিত জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত শনিবার নগরীর ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে জামায়াত-শিবির কর্মী কর্তৃক এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ, গরিব, অসহায় ও দিনমজুরদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই ত্রাণসামগ্রী সঠিক বণ্টনের জন্য নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করে বিতর্কিত জামায়াত-শিবিরের কর্মীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন অনিয়ম ও লুকোচুরির অভিযোগও তোলা হয়েছে। উপেক্ষিত করা হয়েছে স্থানীয় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাদেক আলি। তার অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ড সচিব ও কাউন্সিলরের পরিবারের লোকজন ত্রাণ বিতরণ কাজ করছেন। ওয়ার্ডে ১৫০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী, ৫০০ রেশন কার্ড ও ৭০০ পরিবারের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত ত্রাণ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে এসব ত্রাণ বিতরণের কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

গত শনিবার কাউন্সিলর কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই ত্রাণ তুলে দেন স্থানীয় জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জামায়াতের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত রবিউল্লাহ খান ও শিবিরকর্মী শাহ আলম পাটোয়ারী রিগান। রবিউল্লাহ খানকে জামায়াতের 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকারি দলের নেতাকর্মীরা৷ অন্যদিকে শিবিরকর্মী শাহ আলম পাটোয়ারী রিগানের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদির মুক্তি দাবি, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন তীর্যক মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, রবিউল্লাহ খান এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখনও তিনি ওয়ার্ডে জামায়াতের 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে চিহ্নিত। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ায় খোলস পাল্টে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তবে আওয়ামী লীগে তার কোনো পদ নেই।

অন্যদিকে রবিউল্লাহ খানের বড় ভাই নুর-ই মোস্তফা খান ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বর্তমান সভাপতি। মেঝো ভাই সাইফুল ইসলাম খান জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক নেতা এবং আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পলাতক আসামি নুরুল ইসলাম দিপুর 'ক্যাডার বাহিনীর' সদস্য। ১৯৯৯ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি ইতালি পালিয়ে যান।

এসব বিষয়ে ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন সাগর বলেন, যারা কখনও জয় বাংলার স্লোগান দেয়নি, আওয়ামী লীগের জন্য একটা মিছিল করেনি তাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে গরীবের জন্য আমাকে মাত্র একটি রেশন কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন কাউন্সিলর। অথচ বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন ২৫-৩০টি রেশন কার্ড পাচ্ছে। জামায়াতের লোকজন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ করছে। এর চেয়ে বড় লজ্জা আমাদের জন্য আর কী হতে পারে?

৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ বলেন, ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ এবং নগদ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ আমরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেউই জানি না। কে ত্রাণ দিচ্ছে, কারা ত্রাণ পাচ্ছে, কী পরিমানে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে কোনো ধরনের তথ্য আমাদেরকে জানানো হয়না। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড সচিব তারিফুল ইসলাম রুবেল বলেন, ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনের সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ করছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, রিগান শিবিরকর্মী কিনা আমার জানা নাই। রবিউল্লাহ খানের বড় দুই ভাই বিএনপি-জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে রবিউল্লাহ খান বিগত চার-পাঁচ বছর যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন।

জামায়ত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে রবিউল্লাহ খান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কোন পদ চাইনি। তাহলে অনুপ্রবেশকারী হলাম কিভাবে? আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ আমার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :