নগরকান্দায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্নসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২০, ২৩:২৪

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান পথিক তালুকদার ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হায়দার আলী সরদারের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধ্যব কর্মসূচি ও ভিজিএফের হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দ দেয়া সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। করোনায় লকডাউনে অর্ধাহার ও অনাহারে থাকা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ওএমএসের ১০ টাকা কেজি দরের চালের জন্য নির্ধারিত কার্ডের টিপসই জাল করে চাল উত্তোলন করে নেন তারা। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে, একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার ব্যবহার করে এবং ভুয়া নামের তালিকা প্রস্তুত করে তিন দফা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল উত্তোলন করে তা আত্মসাত করে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২০ মার্চ চেয়ারম্যান পথিক তালুকদারে নির্দেশে মেম্বার হায়দার আলী চাল দেয়ার নামে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ১০০টি পরিবারের কাছ থেকে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়। কিন্তু প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে কোনো প্রকার চাল অথবা সহায়তা দেয়া হয়নি। বরং চেয়ারম্যানের যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ৮৮টি সুবিধাভোগীর চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু সীমিত কিছু মানুষকে ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেই চাল শেষ বলে কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় দরিদ্র ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের আগেও তারা অনেকবার ইউনিয়ন পরিষদে চাল দেয়ার কথা শুনেছেন। কিন্তু কখনো চাল পাননি। কারো কারো নামে যে আগে থেকেই ওএমএসের কার্ড আছে, সেটাও তারা জানতেন না। তাদের অভিযোগ, করোনার কারণে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি চাল দেয়ার কথা তারা মেম্বারকে জানালে মেম্বার বলেছেন আমাদের ওয়ার্ডের জন্য কোনো ত্রাণের চাল আসেনি। তাহলে আমি দিবো কিভাবে।

এদিকে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে ইউনিয়নের আশফরদী, পৈলানপুটি, ধর্মদী ও বানেশ্বরদী গ্রামে করোনা ভাইরাসকালীন খাদ্য কর্মসূচির চাল পাওয়া পরিবারের সংখ্যা শতকরা ২০ শতাংশ পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে এসব গ্রামের দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় অনেক পরিবারের লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছে। তাদেরই একজন ইয়াদ আলী খাঁ জানান, গত ছয় মাস আগে ভিজিএফের চাল বিতরণের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ করা হলেও এখনো চাল দেয়া হয়নি।

ভুক্তভোগি সেলিনা বেগম, রিনা বেগম ও জবেদা বেগম জানান, গত তিন মাসে তাদের ৩০ কেজি করে তিনবারে মোট ২৭০ কেজি চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান আর মেম্বার তাদের প্রতি কার্ডে তিন মাসের চাল উত্তোলন দেখালেও তাদের চাল দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের পাশের এক চা দোকানি জানান, মাঝেমধ্যে এশার আযানের পরে পরিষদ থেকে নসিমনে চাল নিয়ে যেতে দেখি। তবে এই চাল কোথায় নেয়া হয় সেটা জানিনা। একবার ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম তিনি শুধু বললেন চেয়ারম্যান চাল তার বাড়িতে গোডাউনে রাখবেন। পরিষদে নাকি ইদুরে বস্তা ফুঁটো করে খেয়ে ফেলে তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হায়দার আলীর ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও কথা বলা যায়নি। একবার কল রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কথা বলার অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন রেখে দেন। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ত্রাণের অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে চরযশোরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান পথিক তালুকদার বলেন, মেম্বার যেসব অসহায়দের নামের তালিকা করেছেন তারা সবাই চাল পাবেন। এই চাল থেকে কেউ বঞ্চিত হবেন না। তবে ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম আসবে। তখন সবাই পাবে। করোনায় তিন দফা চাল দেয়ার পরেও অসহায়রা বঞ্চিত হলো কেন এ বিষয়ে জানতে চাওয় হলে তিনি বলে, তিন দফা চাল দেয়া হয়েছে এটা অসত্য। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।

ইউপি সদস্যেদের ত্রাণের চাল আত্নসাতের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেয়েছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ রাসেল বলেন, এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :