আম্পান দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে

প্রকাশ | ২০ মে ২০২০, ১০:১১

মো. শাহিন রেজা

আম্পান দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে

মো. শাহিন রেজা, শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক

প্রকৃতি মাঝে মাঝেই তার ভয়াবহরূপ প্রদর্শন করে। এমনই ভয়ঙ্কর রূপে হাজির হল এবার আম্পান! থাইল্যান্ডের আবহাওয়াবিদদের দেওয়া এই নামটি করোনাকালে বাংলাদেশের মানুষের  কাছে বর্তমানে বেশ আতঙ্কের। 

শতাব্দীর সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত আনবে আজ (২০ মে) সন্ধ্যা নাগাদ, এমনটাই  ধারণা করছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ। ফলে এই শতাব্দীর সবথেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

২০০৭ সালের সিডরের মত তান্ডব চালাতে পারে এটি। বাংলাদেশের ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে,  আম্পান এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও সিডোরের মতো শক্তি সঞ্চয় করেছে। ফলে আবহাওয়া অধিদপ্তর উপকূলীয় ১১ টি জেলায় ৭ নং বিপদ সংকেত জারি করেছে।

চট্টগ্রাম ও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত  হানবে আম্পান, তখন বাতাসে গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ১৪০-৬০ কি.মি. এবং ঢেউয়ের উচ্চতা স্বভাবিকের থেকে ৫-১০ ফুট বৃদ্ধি পাবে (আবহাওয়া অধিদপ্তর)।

গত কাল থেকেই আম্পানের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। উপকূলীয় অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এক প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৫১ টি জেলায় আম্ফানের প্রভাব পড়বে।

সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫১ লক্ষ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়েছে। যার জন্য প্রস্তুত রেখেছে ১২ হাজারেরও বেশি আশ্রয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি সারা বিশ্ব করোনার সাথে যুদ্ধরত। কোন টিকা/ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ রোধে  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোঁয়াসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।  সা্বস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, করোনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে করোনা বিস্তারের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। যদিও সরকার বলছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পালন না করলে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাবে যার ফলে আম্পান পরবর্তি আরো একটি ভয়াবহ  দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। তাই

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও করোনার বিস্তার রোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি -

১। উপকূলীয় অঞ্চলের সব মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে হবে।

২। করোনা রোধে যাদের মধে করোনার উপসর্গ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) আছে তাদেরকে আলাদা ভাবে রাখতে হবে।

৩। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়াও আশ্রায় কেন্দ্র গুলোতে সাবন পানি, হ্যান্ড সেনিটায়জার ও মাস্কের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমানে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ডাক্তার ও ওষুধের সরবরাহ নিশ্চত করতে হবে।

৫। বারবার আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রচার করতে হবে। রেডিও,  টেলিভিশনের সাথে মোবাইল ফোনের এসএমএস এর মাধ্যমে আবহাওয়ার বুলেটিন প্রেরণ করতে হবে। যাতে সবার নিকট খবর পোঁছানো যায় এবং গভীর সমুদ্রের মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

৬। শুকনা খাবার, চাল, ডাল, শিশু খাদ্য ও নগদ অর্থের বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

৭। দূর্যোগের প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী করণীয়  সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।

৮। আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী শিশু ও বৃদ্ধদের আশ্রয়কেন্দ্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৯। দুর্যোগ পরবর্তী সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। ঘরবাড়ি নির্মাণ, কৃষকদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের কে স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

১০। দুর্যোগ পরবর্তী করোনা টেস্টের মাধ্যমে সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১। উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।

লেখক:  শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/২০মে/এসকেএস