জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর, বাংলাদেশকে জেতানোর যুদ্ধে তাঁরা

কামরুল হাসান শায়ক
 | প্রকাশিত : ২১ মে ২০২০, ১৬:১৮

বাংলাদেশের বেশ ক'টি অনেক বেশি আলোকিত গ্রামের মধ্যে গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়া আমার কাছে বিভিন্ন কারণে অন্যতম। ২০১৩ সালে প্রথম গ্রামটির দারুণ শ্যামলীমায় দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুগ্ধতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে থাকবে আমৃত্যু। গিয়েছিলাম পুলিশ অফিসার বন্ধু হাবিবুর রহমানের সঙ্গে; তাঁর জন্মস্থান এটি।

চন্দ্রদীঘলিয়া পৌঁছে রাবেয়া-আলী স্কুল মাঠে ( হাবিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মা-বাবার নামে স্কুল) গাড়ি রেখে আমরা বাড়ির পথে হাঁটছি। পেছনে এরই মধ্যে বেশ কিছু মানুষ। কিছু মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সমস্যার কথা জানাচ্ছে। তিনি শুনছেন গভীর মনোযোগের সাথে, সহকারী নোট নিচ্ছেন। মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর পেছনে ফিরে দেখি হাজার মানুষ। বন্ধু হাবিবুর রহমানকে তখন আর আমি চিনতে পারি না। আমার পাশে একজন রূপকথার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। অবশেষে বাড়ির উঠোনে যেয়ে তো চোখ আমার বিস্ময়ে এবার মাথায় উঠলো। মানুষ আর মানুষ...। বললাম- রাজনীতি করলে খুব ভালো করতেন আপনি। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে আপনার মতো সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। মৃদু হাসলেন, বললেন- পুলিশে থেকেই মানুষের জন্য করার মত প্রচুর কাজ আছে। বাংলাদেশ পুলিশকে মানবিক পুলিশে রূপান্তর করা গেলে এই মানুষগুলোর অনেক সমস্যাই আর থাকবে না।

করোনার দুঃসময়ে অবাক বাংলাদেশ দুচোখে বিস্ময় নিয়ে মানুষের দেবদূত যে বাংলাদেশ পুলিশকে দেখছে এই রূপান্তরের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা আজকের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে মফস্বল-গ্রামমুখো হয়েছে মানুষ। তীব্রস্রোত মানুষের। যতই মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, সতর্ক করা হচ্ছে ; অবুঝ শিশুর মতো মানুষগুলোর ঘরমুখো স্রোত কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলো না।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান তড়িৎ গতিতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি তাঁর প্রশিক্ষিত চৌকস টিম নিয়ে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া -আসার পথে তৈরি ফেললেন পরিকল্পিত শক্ত ব্যারিকেড। তিনি নিজেই রাস্তায় মানুষকে চমৎকারভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে সফলভাবে ফেরাতে শুরু করলেন যার যার অবস্থানে। যেন অবুঝ শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীল অকৃত্রিম বন্ধুর দায়িত্ব পালন... । মানুষকে সর্বাত্মক বিনয়ের সঙ্গে যুক্তি আর আবেগের সমন্বয়ে পুলিশ বোঝালেন- এই বাড়িমুখো হওয়ার পরিণাম, ভয়াবহতা। করোনার এই ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়তে, সেবার দুহাত প্রসারিত করে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় ক্ষুধা আর রোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আজ প্রায় আড়াই হাজার হিরোয়িক যোদ্ধা সম্মানিত পুলিশ সদস্য কোরানায় আক্রান্ত। তারপরও কী প্রবল মনোবলে উজ্জীবিত তাঁরা! টেলিফোনে জানতে চাইলাম - আপনি নিজেই এতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে এভাবে বেরিয়ে পড়লেন! ডিআইজি হাবিবুর রহমানের উত্তর-'ঢাকা ছেড়ে যাওয়াটা ঠেকানো না গেলে পরিণামটার কথা ভেবে এমন প্রবলভাবে অস্থির উঠেছি যে, নিজের কথা ভাবার কোনো অবকাশ নেই ভাই। মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষ বাঁচানোটাই আজকের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে আমাদের জিততেই হবে। জেতাতে হবে বাংলাদেশকে।'

আমি বাকরুদ্ধ। এরপর বাংলাদেশ পুলিশকে সঠিক মূল্যায়নে শুদ্ধ যথাযথ শ্রদ্ধা জানানোর মতো সুনির্বাচিত বাক্য আমার জানা নাই। পৃথিবীর কোনো কথাশিল্পীর জানা আছে কি না, জানি না।

লেখক: প্রকাশনা ও মুদ্রণ বিশেষজ্ঞ। চেয়ারম্যান, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :